১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে নেই বরিশাল বিএনপি (!), শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কর্মীরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:১০ অপরাহ্ণ, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল:: আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে বরিশাল বিএনপির ভূমিকা তেমন একটা লক্ষ্যণীয় নয়। ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষের পর বিএনপির ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসলেও বরিশালের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মাঠে দেখা নেই। পুলিশী হয়রানি এড়িয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদারসহ গুটিয়ে কয়েক নেতা চোরাগোপ্তাভাবে অবরোধ বা হরতাল কর্মসূচির স্বপক্ষে নিজেদের শক্তি জানান দিয়ে আসলেও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মাঠে না থাকা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। এবং দলের দুসময়ে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতা মীর জাহিদুল কবিরের এই নিস্ক্রীয়তায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীরা বলছেন, আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দী আছেন এবং পরবর্তীতে আলী হায়দার বাবুলকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনিও মাঠে নেমে গ্রেপ্তার হন। এর পর আন্দোলন অব্যাহত রাখা প্রশ্নে নেতাকর্মীরা সদস্যসচিব জাহিদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি রাজনৈতিকভাবে অদূরদর্শী এই নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে আড়ালে থাকলেও কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন না এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের তার ভূমিকাও নেই। ফলে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রেষারেষির কারণে কোনঠাসা ছিলেন এমন একজন দ্বিতীয় সারির নেতা জিয়া উদ্দিন সিকদার নিজের শক্তি সামর্থ প্রতিদিনই জানান দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মীদের অভিযোগ, শুধু মহানগর বিএনপি নেতা জাহিদুল কবির নন, তার মতো জেলা বিএনপির (উত্তর) আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহীদুল্লাহ, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান খান, জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহীনসহ অনেকেই চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে নেই। এমনকি তাদের সাথে কোনোরুপ যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। বলা যাচ্ছে, তারা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনের অজুহাতে নিরাপদ স্থান খুঁজে নিয়েছেন, বিএনপির প্রধান কার্যালয়টি সর্বদা থাকছে তালাবদ্ধ।

এছাড়া বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিছ জাহান শিরিন এবং জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন শুরুর দিকে হরতালের স্বপক্ষে মাঠে নেমে গ্রেপ্তার হলেও পরবর্তীতে কিছুদিন পরে জামিনে মুক্ত হয়ে অন্তর্ধানে গেছেন। তবে শিরিনসহ আরেক কেন্দ্রীয় পদধারী নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখছেন এবং আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে নিতে দিকনির্দেশনাও দিয়ে যাচ্ছেন বলে শোনা গেছে।

আন্দোলন-সংগ্রামে গতিহীন বিএনপির নেতাকর্মীদের এই লেজেগোবরে অবস্থার মধ্যে আবু নাসের রহমত উল্লাহও বরিশালে ভূমিকা রাখছেন, তিনি কেন্দ্রীয় নেতা হলেও দীর্ঘদিন নিজের গ্রামে অবস্থান নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে মাঠে নামছেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কর্মসূচির পালন করে যাচ্ছেন।নেতাকর্মীদের দাবি, এই অঞ্চলের প্রতাপশালী বিএনপি নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার এবং মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কারাবন্দী থাকলেও তাদের সমর্থিত কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি, যুবদল এবং ছাত্রদলের নেতারা দুসময়ে রাজপথে আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলছেন। শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন সিকদার, মহানগর যুবদলের প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ হাসান মামুন, মহানগর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তরিকুল ইসলাম তরিক, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির এবং জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাঈমুল হাসান সোহেল ওরফে বিট সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ীর নামটি আন্দোলন-সংগ্রাম ইস্যুতে আলোচনায় অগ্রভাগে থাকছে। শোনা গেছে, এসব নেতাকর্মীদের সাথে বিএনপির হাইকমান্ড, এমনকি লন্ডনপ্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন।

জানা গেছে, আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে মহানগর ছাত্রদল সভাপতি রেজাউল করিম রনি এবং জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সবুজ আকন গ্রেপ্তার হয়ে কারান্তরীণ থাকলেও অনেকেই যখন ভয়ে মাঠে নামছেন না, তখন জিয়া সিকদার, মামুন, তরিক, কবির-সোহেলরাই বিএনপির এক মাত্র ভরসা হয়ে আছেন।

এমতাবস্থায় কর্মীদের অনেকের অভিব্যক্তি হচ্ছে, যারা সুদিনে দলের মধ্যে উপদল এবং ভাঙচুর খেলায় মেতে উঠেছিল, তারা এই দুসময়ে কোথায় পালালেন। বিশেষ করে স্থানীয় বিএনপির কমিটি ভাঙাগড়া এবং অর্থ বাণিজ্যের মূলহোতা জাহিদুল কবিরের ভূমিকা এতটাই যে প্রশ্নবিদ্ধ, যা নিয়ে রীতিমত হাইকমান্ডে অভিযোগ হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব জাহিদুল কবিরের বক্তব্য না পাওয়া গেলেও যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন সিকদার বলছেন, গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে আছেন, এরই মধ্যে কেউ কেউ আন্দোলন সংগ্রামে অতি চতুরতার সাথে নিজেদের শক্তি সমার্থ জানান দিয়ে যাচ্ছেন। শুরুর দিকে অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী থাকায় এখন অনেকেই আন্দোলনের মাঠে নেই, কেউ কেউ আছেন নিরাপদ স্থানে।

স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক কারান্তরীণ থাকলেও দলীয় হাইকমান্ড নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখছে, এমনকি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়াল সভা করে বরিশালের নেতাকর্মীদের আন্দোলন সংক্রান্ত দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। সেখানে জাহিদুল কবিরের অংশগ্রহণ দেখা গেলেও তিনি কেনো মাঠে নামছেন না তা নিয়ে প্রশ্ন বরাবরই থেকে যায়। পক্ষান্তরে তারই কমিটির নেতা যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন সিকদার রাজপথে ভূমিকা রেখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন, হচ্ছেন।

একই কমিটির সদস্য আফরোজা খানম নাসরিনও সমান্তরাল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এই নারী নেত্রীকেও প্রায়শই হরতাল অবরোধের স্বপক্ষে কর্মীবাহিনী নিয়ে মাঠে নামতে দেখা যায়। এমনকি গত সপ্তাহে তিনি শহরের বিএম কলেজ এলাকায় মশাল মিছিল করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের হামলা স্বীকার হন বলেও অভিযোগ আছে।

কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, অধিকাংশ নেতাকর্মী কারান্তরীণ এবং গ্রেপ্তার এড়াতে শীর্ষস্থানীয় নেতারা আত্মগোপনের এই দুসময়ে বরিশালে সরকারবিরোধী আন্দোলন যারা জমিয়ে রেখেছেন, তাদের বিএনপির হাইকমান্ডের আলোচনায় বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এবং দলের শীর্ষমহল থেকে তাদের প্রসংশাও করা হয়। সেই সাথে দেওয়া হচ্ছে, কী ভাবে গ্রেপ্তার এড়িয়ে আন্দোলনের মাঠে নিজেকে ধরে রাখা যায়।

তবে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবিরসহ যেসব নেতারা রাজপথে নেই এবং কর্মীদের সাথেও সমন্বয় রাখছেন না তাদের জন্য ‘রেড সিগন্যাল’ অপেক্ষমান আছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটির দাবি, এখন দলে যে পরিবেশ বিরাজমান তাতে নিস্ক্রীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না আসলেও পরবর্তীতে যে তারা স্বপদে বহাল থাকবেন কী না তা নিয়ে শংকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে হয়তো আজকে যারা রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন, তাদেরকেই দলে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে, এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।’

98 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন