বরগুনার আমতলী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে এবার অস্ত্র আইনে মামলা করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গাজী সামসুল হক। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতলী উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে এই মামলা করা হয়।
গাজী সামসুল হক মেয়র মতিয়ারের প্রতিপক্ষ পৌরসভার প্যানেল মেয়র জি এম মুসার সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি একই আদালতে মেয়রের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার আরেকটি মামলা করেন। এ নিয়ে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যে চারটি মামলা হলো। এর মধ্যে তিনটি মামলা করেছেন প্যানেল মেয়র জি এম মুসার সমর্থকেরা। আর একটি মামলা করেছেন মেয়র মতিয়ারের এক সমর্থক।
গত বৃহস্পতিবার আমতলী উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অস্ত্র আইনে মামলাটি দায়ের করার পর আদালতের বিচারক বৈজয়ন্ত বিশ্বাস অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মামলার আরজিতে বাদী অভিযোগ করেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর আমতলী থানায় বিবদমান দুই পক্ষের সমঝোতা বৈঠক চলার একপর্যায়ে মেয়র মতিয়ার ও প্যানেল মেয়র জি এম মুসার মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় তিনি (বাদী) প্যানেল মেয়র মুসার পক্ষে অবস্থান নিলে মেয়র মতিয়ার তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
পরে ২ অক্টোবর বরগুনার আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন (দ্রুত বিচার) আদালতে আমতলী পৌরসভার প্যানেল মেয়র জি এম মুসা, তাঁর বাবা আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম দেলোয়ারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি এবং হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ার অভিযোগ এনে অপর একটি মামলা করেন আমতলী শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জয় চন্দ্র। বরগুনা দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক মো. মাসুম বিল্লাহ ওই মামলাটি আমলে নিয়ে আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্তের নির্দেশ দেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির অন্তত তিনজন নেতা বলেন, পাল্টাপাল্টি মামলার কারণে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। এর একপক্ষে রয়েছেন মতিয়ার রহমান এবং অন্যপক্ষে রয়েছেন জি এম মুসা। জি এম মুসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম দেলোয়ারের ছেলে। দুই পক্ষের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের কারণে দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, মেয়র মতিয়ার বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ওই মহলটি একের পর এক অসত্য অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করছে। এ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে তারা তিনটি মামলা দায়ের করেছে। এই তিনটি মামলার অভিযোগ, বর্ণনা এক এবং অভিন্ন। এতেই প্রমাণ হয় যে এসব অভিযোগ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
কারও নাম উল্লেখ না করে মতিয়ার বলেন, আমতলীর সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন একটি পরিবারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কাছে জিম্মি। এমনকি যাঁরা পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেন, তাঁরাও এই পরিবারের কাছে নিরাপত্তাহীন। সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা, দখলসহ সমস্ত অপকর্মের নেতৃত্বদাতা ওই পরিবারটি এখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোকে কুক্ষিগত করার জন্যই এখন একের পর এক মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে।