বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০২:৪০ অপরাহ্ণ, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯
বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: পাকিস্তান ক্রিকেটে এখন আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলো দানিশ কানেরিয়ার প্রতি দলের অন্য ক্রিকেটারদের ধর্ম বিদ্বেষ। যা সর্বপ্রথম গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন দেশটির সাবেক পেসার শোয়েব আখতার। পরে তার সঙ্গে সুর মেলান কানেরিয়া নিজেও।
শোয়েব আখতারের দাবি, শুধুমাত্র হিন্দু বলে দলে সুযোগ পেতেন না কানেরিয়া। এমনকি তার সঙ্গে একত্রে খেতেও চাইতো না পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটার। শোয়েব গণমাধ্যমে এমন কথা বলার পর, কানেরিয়াও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সেসব ক্রিকেটারদের নাম প্রকাশ করে দেয়ার ব্যাপারে।
এটি নিয়েই এখন তোলপাড় চলছে পাকিস্তান ক্রিকেটে। দেশটির সাবেক অধিনায়ক ও তৎকালীন কোচ জাভেদ মিঁয়াদাদ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছেন শোয়েব ও কানেরিয়ার উদ্দেশ্যে। এবার এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন তখনকার পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ইনজামাম উল হকও। তার মতে, পাকিস্তান দলে কখনোই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বা বিদ্বেষ ছিলো না।
এক ভিডিওবার্তায় ইনজামাম বলেন, ‘দানিশের ব্যাপারে একটা বিতর্ক চলছে এখন। শোনা যাচ্ছে, দানিশ যখন খেলতো তখন তাকে দলের কিছু খেলোয়াড় দেখতে পারতো না। কেউ কেউ ওর সাথে খাবার খেতে চাইতো না, কেউ কেউ ওর সাথে বাইরে যেতে চাইতো না। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই।’
তিনি যোগ করেন, ‘বেশ লম্বা সময় দানিশ যার অধিনায়কত্বে খেলেছে, সেটা হলাম আমি এবং কখনোই এটা মনে হয়নি যে আমাদের দলে কোনো খেলোয়াড় হিন্দু হওয়ার কারণে ওর সঙ্গে এমন ব্যবহার করে। আমাদের দলে এমন একজনও ছিলো বলে আমার মনে পড়ে না।’
এসময় দুইটি উদাহরণের মাধ্যমে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝানোর চেষ্টা করেন ইনজামাম। তিনি বলেন, ‘আমি যদি এখন বলি, ইউসুফ ছিলো আমাদের দলে। সেও প্রথমে অমুসলিম ছিলো। পরে ধর্মান্তরিত হয়ে ইউসুফ ইউহানা থেকে মোহাম্মদ ইউসুফ হলো। যদি সে আমাদের দলে ধর্ম বিদ্বেষ দেখত, তাহলে নিশ্চয়ই ধর্ম বদলাতো না।’
পাকিস্তানিদের মন অনেক বড় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর প্রতি অনেক শুকরিয়া যে আমাদের দলে এমন কিছু ছিলো না। আমি এটা মানতে রাজি নই যে, আমাদের মন এত ছোট। যে কারণে আমরা এমন কিছু করবো এবং কাউকে নিজেদের সঙ্গে গ্রহণ করবো না। আমার মতে, আমাদের পাকিস্তানিদের মন অনেক বড়। আমরা সব ধর্মের মানুষকেই মনে জায়গা করে দিতে পারি।’
এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় উদাহরণ দিয়ে ইনজামাম বলেন, ‘২০০৪ সালে ভারত ১৫ বছর পর আমাদের দেশে আসলো খেলতে। তখন এদেশের মানুষ ভারতের জন্য নিজেদের সবকিছু উজার করে দিয়েছিল। ভারতের খেলোয়াড়রা খেতে যাচ্ছে, কেউ টাকা নিচ্ছে না। শপিং করছে, কেউ টাকা নিচ্ছে না। গাড়িতে উঠছে, কেউ টাকা নিচ্ছে না। পরের বছর আমরা গেলাম ভারতে। তখনও একই চিত্র। তারা তো নিজেদের বাড়ি পর্যন্ত খুলে দিচ্ছিলো। বলছিলো যে, তোমরা আমাদের মেহমান। খাবার বানিয়ে খাওয়াচ্ছিলো, শপিংয়ের টাকা নিচ্ছিলো না, মাঠ ছেড়ে দিচ্ছিল তারা। দুইবারই আমি অধিনায়ক ছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাই, আমরা তো জনসাধারণ পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে এমন ভালোবাসা আদান-প্রদান করে থাকি। আমার মনে হয় না কেউ দানিশের সঙ্গে এমন কিছু করতে পারে। আমার বিশ্বাস, আমাদের কেউ কারো প্রতি এতো বিরক্ত হয়ে যাবে যে এমন কিছু করবে। আমার মতে কেউ এমন কিছু বললে, সেটা আমাদের জন্য ঠিক নয়।’