৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

আরাফাতের ময়দানে খুতবার অপেক্ষায় হাজিরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৫২ অপরাহ্ণ, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আজ পবিত্র হজের দিন। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতির জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সমবেত হয়েছেন আরাফাতের ময়দানে। লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্ক, লা শারিকা লাকা’ ধ্বনিতে মুখরিত আজ পবিত্র আরাফাতের ময়দান।

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন হাজিরা। সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আজ হাজিরা দুপুরের পূর্বেই ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে অবস্থান নিতে লাব্বাইক ধ্বনিতে এসে পৌছছেন তারা। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করছেন।

আরাফাতের মসজিদ-এ নামিরাহ থেকে সুদীর্ঘ ৩৫ বছর পর নতুন খতিব হজের খুতবা দেবেন। সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি তার পদ থেকে পদত্যাগ করায় নতুন খতিব তার স্থলাভিষিক্ত হবেন। ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে খুতবা প্রদান করবেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব মুফতি ড. সালেহ বিন হুমাইদ। হাজিরা সেই খুতবার অপেক্ষায় রয়েছেন।

আরাফাতের ময়দানের খুতবায় হজ, কুরবানি, হলক, কসর, মিনায় কংকর নিক্ষেপ, তাওয়াফে জিয়ারাতসহ হজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়সহ ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহর আগামী দিনের করণীয় কি হবে, সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এরপর সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হবে। পরে এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে জোহর ও আসর নামাজের জামাআতে আদায় করবেন হাজিরা।

আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজিরা। সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন তারা। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। সেখান থেকে শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন হাজিরা।

এবার নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা চলছে। মূলত হজের অংশ হিসেবে হজযাত্রীরা ৭ থেকে ১২ জিলহজ মিনা, আরাফাত, মুজদালিফায় অবস্থান করবেন।

এদিকে, মিনায় (জামারাত) শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য এবার স্বতন্ত্র ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ। হাজিদের ভাগ ভাগ করে জামারাতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে তারা। গত বছর মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে বহু হাজির মৃত্যু হয়। সৌদি আরবের তরফ থেকে নিহতের সংখ্যা ৭ শতাধিক দাবি করা হলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, বিভিন্ন বার্তা সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা দু সহস্রাধিক। ওই দুর্ঘটনার পরই হজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। 

হাজিদের পরিচয় নিশ্চিতের জন্য এবার ইলেকট্রনিক ব্রেসলেটও সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিটি ব্রেসলেটে বারকোড রয়েছে এবং এটি অ্যাপসের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সঙ্গে সংযুক্ত। এই ব্রেসলেটে হাজিদের ব্যক্তিগত এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য রয়েছে। সরকারি বার্তা সংস্থা সৌদি গেজেট জানিয়েছে, অবৈধ হজযাত্রীদের আটকাতে এক হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে হাজিদের নিরাপত্তায় দ্রুত তিন হাজার উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থানান্তরে ১৭ হাজার কর্মী মোতায়েন করেছে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ। হজের পাঁচদিন মক্কা ও পবিত্র স্থানগুলো পরিষ্কারের জন্য ২৬ হাজার কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য মক্কায় পর্যাপ্ত জনবল, ওষুধ ও যন্ত্রপাতিসহ আটটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মিনা, আরাফাতের ময়দান ও মুজদালিফায় ২৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশসহ ১৫০টিরও বেশি দেশ থেকে এবার ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ হজ পালন করছেন। চলতি বছর মোট এক লাখ এক হাজার চার জন বাংলাদেশি নাগরিক হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঁচ হাজার ১৮২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ৯৫ হাজার ৮২২ জন। ভিসাপ্রাপ্তদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার ৪০১ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হজের প্রথম ফ্লাইটটি (বিজি-১০১১) গত ৪ আগস্ট সকাল ৮টা ৫ মিনিটে সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়। বিমানের হজ ফ্লাইট শেষ হয়েছে সোমবার। আর সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট শেষ হয়েছে মঙ্গলবার।

21 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন