বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পতাকা সংক্রান্ত আইন না মেনে রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টাই ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে পতাকা উত্তোলিত রাখা হয়েছে। রাতে পতাকা টাঙিয়ে রাখার একটি ভিডিওচিত্র সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তা বরিশালে কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়।
গত ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে ধারণ করা ওই ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে- দুজন চরকাউয়ার স্থানীয় বাসিন্দাও পতাকা নিয়ে কথা বলছেন। এরমধ্যে একজন ট্রলার চালক এবং অন্যজন দোকানী। তারা একজন সময় বলেন রাত ১টা ৬ এবং ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জাতীয় পতাকা উড়ছে বলেও জানান। অপরজন উত্তোলিত পতাকা দেখিয়ে সময় বলেন।
এমতাবস্থায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের গাফেলতিতে এই চিত্র প্রতিদিনেরই। অবশ্য এই চিত্র ফজরের নামাজ পড়তে উঠেও প্রায়ই দেখতে পান তারা। আবার রাত ৯ থেকে ১০টার দিকেও পতাকা নামাতে দেখেন।
এছাড়াও অভিযোগ পাওয়া গেছে- ইউনিয়ন পরিষদে জাতীয় পতাকা রাখার জন্য কোন নির্ধারিত স্থানও নেই। যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলে রাখা হয় পতাকা।
এই বাস্তবতায় ইউনিয়ন পরিষদ সচিব ফজলুল করিম বলছেন- পতাকা না নামানোর পিছনে আমার কোন দোষ নেই। পতাকা উত্তোলন এবং নামিয়ে রাখার দায়িত্বে রয়েছেন আলাউদ্দিন নামের এক মুরব্বি।
ইউনিয়ন পরিষদের এই সচিব দাবি করেন- ওইদিন (৬ নভেম্বর) জেলা প্রশাসক এসেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় পরিদর্শনে। মূলত তার আগমন উপলক্ষে আমরা সবাই ব্যস্ত ছিলাম বিধায় পতাকা নামাতে মনে ছিল না।
কিন্তু আইন বলছে- কেউ ভুলবশত পতাকার অবমাননা করলেও তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই বছরের স্বশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে। আর কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে বা জেনে জাতীয় পতাকার অবমাননা করেন তার শাস্তির বিধানে ন্যূনতম কিছু নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিবেচনা করে প্রদান করবেন।
ফলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে নির্ধারিত পতাকা উত্তোলনের দন্ড’র (বাঁশ) সাথে উড়ছে জাতীয় পতাকা এই বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের স্বপেক্ষ শক্তির লোকজন সহজভাবে নিতে পারছেন না। যে কারণে এই অবমাননার বিষয়ে তারা ক্ষোভে ফুঁসেছেন। অনেকে দাবি করেছেন- বিষয়টি উচ্চ প্রশাসনের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের।
কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- এই বিষয়টিকে মোটেও অবমাননা হিসেবে দেখছেন না ওই পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি। এমনকি তিনি বলছেন- এটি আইন বিরোধী কোন কাজ বলেও মনে করছেন না।
কিন্তু এই জনপ্রতিনিধি এমন আইন কোথায় পেলেন তার কোন যথাযথ উত্তর নেই উপজেলা প্রশাসনের কাছেও।
তবে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ূন কবির বলছেন- রাতের বেলা পতাকা উত্তেলিত রাখা অবমাননা শান্তিযোগ্য অপরাধ। অবশ্য পতাকা আইন ২০১০ (সংশোধিত) এও এমটাই বলা হয়েছে।
সেই আইনের বরাত দিয়ে সরকারের উপজেলা পর্যায়ে এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন- বিশেষ ক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কেবলমাত্র রাতে পতাকা উত্তোলনের এখতিয়ার রাখেন। এছাড়া রাতে যদি সংসদ অধিবেশন চলে তখন সংসদ ভবনের সামনে পতাকা উত্তোলিত থাকতে পারে। তবে সূর্যাস্তের আগেই পতাকা সম্মানের সাথে নামিয়ে রাখতে হবে।
তাহলে রাতের বেলা পতাকা উত্তেলিত রাখা কোন অপরাধ নয় এমন আইন চরকাউয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যানর মনিরুল ইসলাম ছবি কোথায় পেলেন এমন একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন এটি তার নতুন আবিস্কার (!)
তবে এবার এই বিতর্কিত চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি বললেন- এমন অনেক অফিস আছে যেখানে পতাকাই উত্তোলিত হয় না। আমরাতো তবুও তুলি।’’
শিরোনামবরিশালের খবর