৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

ইনজেকশনে রোগীর মৃত্যু, ডাক্তার বললেন কি ইনজেকশন দিয়েছি জানি না

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:১৯ পূর্বাহ্ণ, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

দিনাজপুর শহরের কালিতলায় এইচকে মাদার কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আবারও চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনায় হাসপাতালের চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছেন রোগীর স্বজনরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ হাসপাতালের চিকিৎসক হযরত আলীর ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রোগীর মৃত্যু হয়। মৃত প্রসূতির নাম বিউটি আরা (৩৫)। তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ উত্তর বংশিপুর এলাকার আব্দুল মান্নানের স্ত্রী।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোর ৫টার দিকে প্রসব ব্যথা উঠলে এইচকে মাদার কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিউটি আরাকে ভর্তি করা হয়। ওই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেন চিকিৎসক হযরত আলী। সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম হয় তার।

বেলা ১১টার দিকে রোগীকে ইনজেকশন পুশ করার কিছুক্ষণ পরই ছটফট করতে করতে মারা যান বিউটি আরা। এ সময় রোগীর স্বজনরা কি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে জানতে চাইলে রোগীর ফাইলপত্র নিয়ে চলে যান চিকিৎসক ও স্টাফরা। পরে তাদেরকে আর কাগজপত্র দেয়া হয়নি। এতে ভুল ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করে পরিবার ও স্বজনরা। ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালের চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন তারা। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগেও ওই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

মৃতের স্বজনরা বলেন, ইনজেকশন পুশ করার পরই রোগী ছটফট করতে করতে মারা যান। তবে কি এবং কেন ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিল তা জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মৃতের বড় বোন ফাতেমা বেগম বলেন, আমার বোনকে ভর্তি করার পর অপারেশন করেন ডা. হযরত আলী। ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। রোগীর সঙ্গে কথাও বলেছি আমরা। রোগী ভালো ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে রোগীকে একটি ইনজেকশন পুশ করার পরে ছটফট করে মারা যান। ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীকে মেরে ফেলা হয়েছে।

মৃতের আরেক বোন বিলকিস বেগম বলেন, ইচ্ছা করেই রোগীকে মেরে ফেলা হয়েছে। ইনজেকশন দেয়ার পরপরই মারা যায় রোগী। কিন্তু কি ইনজেকশন দেয়া হয়েছে সেটি দেখতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানায়নি। রোগীর শয্যায় থাকা ফাইলটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ডা. হযরত আলী বলেন, কি ইনজেকশন দিয়েছি জানি না। এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারব না। আপনারা কি লিখবেন লেখেন। কি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিল, রোগীর ফাইলপত্র দেয়া হচ্ছে না কেন বার বার জানতে চাইলেও চুপ থাকেন ডা. হযরত আলী।

জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন আব্দুছ কুদ্দুছ বলেন, এইচকে মাদার কেয়ার হাসাপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনেক আগের অনুমোদন থাকলেও এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। বারবার বলার পরও অনুমোদনের জন্য আবেদন কিংবা নবায়নের আবেদন করেননি কর্তৃপক্ষ। এর আগেও সেখানে রোগীর মৃত্যু হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে শোকজ করা হলেও সেই জবাবও দেয়নি তারা। ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসাসেবা নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) বজলুর রশিদ বলেন, হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের সংবাদ পাওয়ার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়নি রোগীর স্বজনরা। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গত ২২ অক্টোবর রাতে একই চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় সদর উপজেলার ৩নং ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর হরিরামপুর গ্রামের মুনতাহীনা পারভীন (২৫) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই চিকিৎসক অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর মামলায় তার নয় বছর সাজাও হয়েছিল।

18 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন