বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০১:৩৫ অপরাহ্ণ, ১৪ মার্চ ২০১৬
জাতীয় সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে বিভক্ত কমিটির নেতাদের সমঝোতার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ঐক্যের প্রশ্নে প্রয়োজনে নিজের সভাপতি পদও ছাড়তে রাজি তিনি। তবে জাসদ সভাপতি ইনুর এই প্রস্তাবকে ‘নতুন ষড়যন্ত্র’ মনে করছেন দলটির একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া।
জাসদ সূত্রে জানা গেছে, দলটির উপদেষ্টা ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মনির উদ্দিন আহমদ জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর পক্ষ থেকে সমঝোতার একটি প্রস্তাব নিয়ে অপর অংশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তবে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
সমঝোতার বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার মনির উদ্দিন আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, দলে ঐক্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তাই দুই গ্রুপের সাথেই আলোচনা করেছি।
রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় জাসদের জাতীয় সম্মেলনে। দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে শনিবার রাতে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন দলটির কার্যকরি সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল, প্রাক্তণ সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও প্রাক্তন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে কাউন্সিলরদের একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে কমিটি ঘোষণা করেন তারা।
পরে শনিবার রাতে মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে হাসানুল হক ইনুকে সভাপতি ও শিরিন আখতারকে সাধারণ সম্পাদক করে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করেন তারা। রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাসদ (একাংশের) কার্যকরি সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল অভিযোগ করেন, হাসানুল হক ইনুর স্বৈরাচারী আচরণে দলের ভাঙন হয়েছে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাসানুল হক ইনু ভুল বুঝে নিজেদের বক্তব্য স্পষ্ট করে সসম্মানে স্বপদে ফিরে আসার আহ্বান জানান। এর আগে থেকেই সমঝোতার তৎপরতা চলছিল বলে জানিয়েছে জাসদের অপর একটি সূত্র।
হাসানুল হক ইনুর সমঝোতার প্রস্তাবের বিষয়টি স্বীকার করে একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, এটি তার (ইনুর) নতুন কৌশল। যার কোন ভিত্তি নেই। তিনি (ইনু) যদি আমাদের শর্ত মেনে নেন তাহলে আমরা ঐক্যের ব্যাপারে ভেবে দেখতে পারি। এজন্যে সদ্য অনুষ্ঠিত কাউন্সিল বাতিল করে নতুন কাউন্সিল আহ্বান করতে হবে। সেখানে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে গোপন ভোট নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। তবে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারি।
এ বিষয়ে একাংশের কার্যকরি সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল দ্য রিপোর্টকে বলেন, সেটার (ঐক্যের) সুযোগ আপাতত নেই। আমরা মূল জাসদে আছি। দলের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরা ইনু সাহেবদের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে ঐক্য চাইলে আমরাও পরবর্তীতে এটা ভেবে দেখবো।
হাসানুল হক ইনুর প্রস্তাবকে ‘ভাওতাবাজি’ ও ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে তিনি বলেন, সমস্যাতো অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। আমরা অনেক আগে থেকেই বলেছি, একসঙ্গে সরকারের মন্ত্রী ও দলের সভাপতি থাকা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অগণতান্ত্রিক। কিন্তু তিনি ক্ষমতার লোভে সব কিছু কুক্ষিগত করতে চান।
তিনি বলেন, ইনু সাহেব কীভাবে আমাদেরকে জঙ্গি ও বিভ্রান্তকারী বলেন? এই কথা বলার পরে ঐক্য কীভাবে সম্ভব? তিনি নিজস্ব লোকদের অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে কাউন্সিলর করে কণ্ঠভোটের নাটক করে আবারো অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। আমরা ব্যালট চাইলে পেশিশক্তি ব্যবহার করে আমাদের লাঞ্ছিত করেছেন। শিরিনকে কৌশলে অবৈধভাবে সাধারণ সম্পাদক করেছেন। তার আচরণের কারণেই আমরা জাসদকে বাঁচাতে আলাদা কমিটি করতে বাধ্য হয়েছি। তবে তার আচরণ ঠিক হলে পরবর্তীতে আমরা ঐক্যের বিষয়টি চিন্তা করবো। কিন্তু আপাতত এটা হচ্ছে না।
ইনুর প্রস্তাবনা বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদের (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, এটা একটি গুঞ্জন। কাউন্সিলদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। তাই সভাপতি থেকে সরে গিয়ে তিনি ঐক্যের কথা বলার অধিকার রাখেন না। এটা আমিও বলতে পারি না। এটা কেবল কাউন্সিলররাই বলতে পারেন।
ঐক্যের সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা (আম্বিয়া-প্রধান-বাদল) দলের নিয়ম ও গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে আলাদা কমিটি করেছেন। তারপরেও আমরা তাদেরকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছি। নতুন কমিটিতে তাদেরকেও আমরা সম্মানজনক পদে রেখেছি। আমরা আশা করি, ভুল বুঝতে পেরে তারা আবারো মূল জাসদে ফিরবেন। আর যদি না আসেন, তবে সামান্য দুই-চারজনের জন্য জাসদের ঐক্য বিনষ্ট বা ক্ষতি হবে না। জাসদ এক আছে ও শক্তিশালী অবস্থায়ই আছে।
জাসদের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ইনু যতই চেষ্টা করেন না কেন, দুই পক্ষকে আর এক করা সম্ভব হবে না। কারণ ইনুর উপর পুঞ্জিভূত ক্ষোভের কারণেই তারা বের হয়ে গেছেন। তাই এ মুহূর্তে আম্বিয়া-বাদলরা ইনুর প্রস্তাবে রাজি হবেন না।
দীর্ঘ ৬ বছর পরে গত শুক্রবার (১২ মার্চ) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। এরপর শনিবার দ্বিতীয় দিনে গুলিস্তানের কাজী বশির আহমেদ মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) হয় দ্বিতীয় দিনের সম্মেলন। সেখানে কণ্ঠভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন হাসানুল হক ইনু। এজন্য গঠনতন্ত্রও পরিবর্তন করা হয়।