১৪ এপ্রিলের ঘটনা। ঝালকাঠি সদর উপজেলার সাওরাকাঠি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। বিকেলে এ পিঠা উৎসবে এলাকার কয়েকজন যুবক এসে ৫ থেকে ৬ ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে।
এ সময় নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর ভাই উত্ত্যক্তকারীদের বাধা দিলে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে আহত করা হয়। ছাত্রীরা প্রতিবাদ করলে উত্ত্যক্তকারীরা তাদেরও মারধর করেন। এতে ১০ ছাত্রী আহত হয়।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বড় বাশাইল গ্রামে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে এক গৃহশিক্ষক তার ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতেন। ছাত্রীটি এ কথা তার মা-বাবাকে জানালে তাঁরা এর প্রতিবাদ করেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গৃহশিক্ষক ওই ছাত্রীর মা-বাবার ওপর হামলা চালান। এতে তারা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার এ রকম ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটেই চলেছে।
আর উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলা, মারধরের শিকার হয়ে অনেকে আহত হচ্ছেন। এমনকি অনেকে খুনও হচ্ছেন।
২০১০ সালের অক্টোবর মাসের ঘটনা। ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বখাটেরা লোকমানপুরের শিক্ষক মিজানুর রহমানের গায়ে মোটরসাইকেল তুলে দিয়েছিল। এরপর লোহার রড দিয়ে তাঁকে বেদম প্রহার করে একপর্যায়ে তা ঢুকিয়ে দেয় চোখে।
কয়েক দিন পর মারা যান মিজানুর রহমান। একই কায়দায় হত্যা করা হয় ফরিদপুরের মধুখালীর চাঁপা রানীকে। নিজের মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। আর তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে উত্ত্যক্তকারী যুবক তাঁর গায়ে মোটরসাইকেল তুলে দেন। এ রকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন অনেক নারী। আমরা ভুলে যাইনি ২০০১ সালে ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রী সিমি। খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানার পাবলা এলাকায় ২০০৩ সালের ১৫ এপ্রিল বখাটেদের অপমান সহ্য করতে না পেরে ফারজানা আফরিন রুমি ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
২০০২ সালের ১৭ জুলাই গাইবান্ধার স্কুলছাত্রী সাফিয়া সুলতানা তৃষ্ণা বখাটেদের হাত থেকে বাঁচতে পুকুরে ঝাঁপ দেয়। সেখানে ডুবেই সে মারা যায়।
২০০৩ সালের ১ অক্টোবর যশোরে স্কুলছাত্রী পারভিন সুলতানা বখাটেদের উৎপাত সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। এ রকম ঘটনা আরও আছে। ইভ টিজিংয়ের কারণে অনেক মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে।
অনেক মেয়ে শিকার হচ্ছে বাল্যবিবাহের। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ রকম কি চলতেই থাকবে? উত্তর জানা নেই। এসব ঘটনায় মামলা হলেও তার শান্তি এতটাই নগণ্য যে কেউ আর তাতে ভয় পায় না। কখনো এক মাসের জেল, কখনো ছয় মাস, কখনো বা এক বছরের জেল। সঙ্গে সামান্য কিছু টাকা জরিমানা।
ব্যস, এ-ই হচ্ছে শাস্তি। আবার কখনো কখনো জুতাপেটা বা বেত্রাঘাত করেই ছেড়ে দেওয়া হয় উত্ত্যক্তকারীদের। এ রকম শাস্তিকে কে ভয় পায়? আর বখাটেরা যদি প্রভাবশালী হয়, তাহলে তো কথাই নেই।
নির্বিঘেœ জামিনে ছাড়া পেয়ে তারা আগের মতোই মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতে থাকে। সালিসির নামে অনেক সময় উত্ত্যক্তকারীকে নয়, আক্রান্তকেই নাজেহাল করা হয়। গত মার্চ মাসের ঘটনা। কুষ্টিয়ায় এক ইভ টিজিং মামলার আসামিরা থানা থেকে ছাড়া পেয়ে মামলার বাদী গৃহবধূর মাথার চুল কেটে দিয়েছে।
এরপর মুখে চুনকালি মাখিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ওই গৃহবধূকে নির্যাতন করেছে। এ কেমন দেশে আমরা বাস করছি? কেন একদল বখাটে যুবকের হাতে আমাদের দেশের মেয়েরা জিম্মি হয়ে থাকবে? কেন তাদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে? পুরুষদের এ কী ধরনের বিকৃতি? এ বিকৃতি বন্ধে সরকারসহ সবাই উদ্যোগ নিন।
রোকেয়া রহমান, সাংবাদিক
ঝালকাঠির খবর, টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর, স্পটলাইট