বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, ০২ জুন ২০১৭
ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে গত কয়েকদিন ধরে ফেরি সার্ভিস চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ইলিশা ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে অন্তত শতাধিক মালবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে।
একইভাবে ভোলা ও লক্ষ্মীপুর এলাকার দুই পাড়ে দুই শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে। এ রুটে কনকচাঁপা, কৃষানী ও কুসুমকলী নামের তিনটি ফেরি নিয়মিত চলাচল করছে। কিন্তু ফেরি চলাচলে গাফিলতিতে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ট্রাকচালকরা।
শুক্রবার (০২ জুন) বিকেলে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়- ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত শতাধিক মালবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন।
অধিকাংশ ট্রাকে ছিল ধান, পাট, সবজিসহ কাঁচামাল ও বিভিন্ন পণ্য। রাস্তার একপাশ চাপিয়ে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এসব মালবাহী ট্রাক। অনেক ট্রাকের কাঁচামাল পচে যাচ্ছে বলে জানায় ট্রাকচালকরা।
ট্রাকের চালক ও হেলপাররা গত কয়েকদিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাটে অবস্থান করে স্থানীয় কয়েকটি হোটেলে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ ২১ জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের এ ফেরি সার্ভিস।
চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে ফেরিঘাটে আটকেপড়া ট্রাকের ভেতর ধান, পাট, সবজি ও শুটকি মাছসহ কোটি কোটি টাকার কাঁচামাল পচে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য।
ইলিশা ফেরিঘাটে কথা হয় নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী সেতুভাঙা এলাকার ট্রাকচালক মাসুম হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ধানবোঝাই ট্রাক নিয়ে তিনি গত ৪ দিন আগে ভোলায় আসেন। এসে ইলিশা ফেরিঘাটে আটক পড়ে যান।
তিনি আরও জানান- এখানে তার ধান থেকে চারা গজিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফেরি নিয়মিত চলাচল না করার কারণে তিনি চার দিনেও গন্তব্যে যেতে পারছেন না।
খুলনার ট্রাকচালক আবুল মিয়া বরিশালটাইমসকে জানান, গত চার দিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাটে অবস্থান করছেন। চাঁন মিয়া আরও জানান, তিনি খুলনা থেকে পাটবাহী ট্রাক নিয়ে ভোলায় আসেন। এসে ইলিশা ফেরিঘাটে আটকা পড়েন।
চট্টগ্রাম হলিশহরের ট্রাকচালক মনির হোসেন বরিশালটাইমসকে জানান, ঢাকা থেকে টাইলসবাহী ট্রাক নিয়ে তিনি ভোলায় এসেছেন। গত দুই দিন আগে ইলিশা ফেরিঘাটে এসে আটকা পড়েছেন।
মাসুম, চাঁন মিয়া আর রুবেলই শুধু নন, তাদের মতো কয়েক’শ ট্রাকচালক গত কয়েকদিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাটে আটকা পড়েন। ফেরি চলাচল বিলম্ব হওয়ার কারণে ট্রাকের শ্রমিকরা এখানে বসে আছেন।
আর বসে বসে টাকা খরচ করে হোটেলে ভাত-পানি খাচ্ছেন। তারা জানান, ফেরিচালকের গাফিলতির কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ফেরির চালকদের গাফিলতির কারণে তারা সঠিক সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছেন না।
ফেরির চালক তাদের ইচ্ছামতো ফেরি চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করছেন ট্রাকচালকরা। ফলে ভোলা ও লক্ষ্মীপুর ফেরিঘাটের দুই পাড়ে বিভিন্ন পণ্য ও মালবাহী ট্রাকসহ দুই শতাধিক যান আটকা পড়েছে। এতে বহু পণ্যের ক্ষতি হচ্ছে। পচে যাচ্ছে ধান, পাটসহ বিভিন্ন কাঁচামাল।
ফেরি চলাচলে বিলম্বের কথা স্বীকার করে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরির ব্যবস্থাপক আবু আলম বরিশালটাইমসকে বলেন, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কারণে ওইদিন এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বৃহস্পতিবারও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ফেরি চলাচল অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
যথাসময়ে ফেরি আসা-যাওয়া করতে পারছে না। এতে ভোলা ও লক্ষ্মীপুর এলাকার দুই পাড়ে বহু যানবাহন আটকা পড়েছে। এ রুটে তিনটি ফেরি নিয়মিত চলাচল করছে। তবে এ রুটে অন্তত চারটি ফেরির প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।’’