৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঈদে নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিয়ে উৎকণ্ঠায় বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের যাত্রীরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:২০ পূর্বাহ্ণ, ১২ জুন ২০১৭

বর্ষাকালে দেশের নদীগুলো খরস্রোত থাকায় এবার নৌপথে ঈদযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলাসহ নদীপথ এলাকার বাসিন্দারা ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

তারা এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

দখিণের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের প্রায় সব জেলার মানুষকেই নদী ডিঙিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গেরও বেশ কিছু জেলার মানুষকে বাড়ি যেতে হয় নদীপথ পাড়ি দিয়ে। ঈদের সময়ে নদীপথে বাড়ি ফিরতে প্রায় প্রতি বছরই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে থাকে অসংখ্য মানুষ। আর এবার বর্ষা মৌসুমে ঈদ হওয়ায় লঞ্চডুবির মতো ঘটনার ঝুঁকি অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বেসরকারি নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ঈদ মৌসুমে নৌপথে যাত্রী চলাচল প্রায় ৪০ গুণ বেড়ে যায়। আর ঈদের এক সপ্তাহ আগে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় একশ’ গুণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও মানবসৃষ্ট কিছু কারণে বেড়েই চলেছে নৌপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। কারণগুলোর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ নৌযান, অদক্ষ মাস্টার, ড্রাইভার, অতিরিক্ত যাত্রীবহন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

নদীপথে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট, ফায়ার বাকেট, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, বালুভর্তি বাক্স বা বালতি এবং হস্তচালিত পানির পাম্পের ব্যবস্থা রাখার কথা থাকলেও বেশির ভাগ লঞ্চেই এসব নিয়মকানুনের কোনো তোয়াক্কা করা হয় না। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনারোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে নৌপথে যাতায়াতকারীদের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিগত কয়েক সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই ঝড়োবৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে- এ ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। কিছুক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ারও কথা জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময়ে নদীও উত্তাল থাকবে। ফলে লঞ্চ, ফেরি, স্টিমার, স্পিটবোর্ডসহ নৌপথে চলাচল করা যানগুলোতে ঝুঁকিও বেশি থাকবে। আর এ সময়েই লাখ লাখ মানুষ নদীপথ পাড়ি দিবে গন্তব্যে পৌঁছাবার জন্য।

বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি প্রকাশিত তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে নৌদুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৮৯ জন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে জানিয়েছেন এ ধারা অব্যাহত থাকলে অতীতের বছরগুলোর সব হারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এ বছরের নৌপথে মৃত্যুর হার। যাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিতের জন্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ১০টি জরুরি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিআইডবিস্নউটিএকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিআইডব্লিউটিএ-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসচিব আনোয়ারুল ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বছর বর্ষা মৌসুমে ঈদ হওয়ায় এরই মধ্যে সতর্কতামূলক মিটিং করা হয়েছে। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। গত ৩০ তারিখে মন্ত্রীর সভাপতিত্বে জরুরি মিটিংয়ে বিআইডবিস্নউটিএ’র নিয়মিত টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া নৌপথে নিরাপদে যাতে যাত্রীরা ঘরে ফিরতে পারে তার জন্য লঞ্চ, ফেরিগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।’

তবে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্য প্রতি বছরই দেয়া হয়। তবে কাজের কাজ খুব কমই হয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াকেই দায়ী করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংকার রুহুল আমিন, যার বাড়ি দক্ষিণের জেলা যশোরে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে পিনাক ৬ নামের যে লঞ্চটি ডুবে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছিল তার ঠিক পেছনের লঞ্চটিতেই ছিলেন তিনি। চোখের সামনে বহু মানুষকে নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে দেখছেন। সে সময়ে সরকারকে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিতে শুনেছিলেন বলে জানান রুহুল আমিন। তবে ন্যায়বিচার তো দূরে থাক ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা পর্যাপ্ত সহায়তা পায়নি বলেও অভিযোগ তার।”

14 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন