ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক লাগোয়া উজিরপুর উপজেলার সানুহার বাসস্ট্যান্ডের পাশে জয়শ্রী-গৌরনদী-ধামুড়া খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে খালের প্রশস্ততা সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হয়ে বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে বলে এলাকার লোকজন আশঙ্কা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, প্রায় শত বছরের পুরোনো এ খালটি সন্ধ্যা নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এ খালের পানি থেকে কৃষকেরা জমিতে সেচও দেন। এলাকার কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য গত কয়েক বছর আগে খালটি সরকার কর্তৃক খনন করা হয়।
খালটি উজিরপুর উপজেলার সানুহার থেকে ধামুড়া পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার ও জয়শ্রী থেকে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার লম্বা।
বর্তমানে খালটির বিভিন্নস্থানে প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা নির্মানে এখন সেচ কাজের জন্য তেমন একটা ব্যবহার করতে পারছে না কৃষকরা। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী মৌসুমে ইরি-বোরো চাষে সেচ সংকট দেখা দেয়ার বেশ আশঙ্কা রয়েছে। তারা আরও জানান, নির্মাণাধীন ওই সকল স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা না হলে চাষীদের ফসল উৎপাদন ও স্থানীয়দের পণ্য পরিবহন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
রোববার (১৮ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক লাগোয়া প্রবাহমান ওই খালটির মধ্যে কংক্রিটের উঁচু আরসিসি ১২টি পিলারের ওপর স্থায়ী স্থাপনা নির্মান করা হচ্ছে। দেখলেই মনে হবে বহুতল ভবন নির্মানের উদ্দেশ্যেই এ নির্মান কাজ চলছে। খালের প্রায় ৫ শতাংশ জায়গা দখল করে গত দুই সপ্তাহ ধরে ওই স্থানে পাঁচটি পাঁকা দোকানঘর নির্মান করছেন ফিরোজ হাওলাদার, ইকবাল হাওলাদার, সোহেল, খোকন সিকদার ও দুলাল হাওলাদার নামের স্থানীয় পাঁচ প্রভাবশালী ব্যক্তি।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর, ৬-এর ঙ উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। আর সরকারের এই আইন লঙ্ঘন করে প্রভাবশালীরা খালের জমি দখল করে পাঁকা ভবন নির্মাণ করছেন। কিন্তু এই দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তেমন কোন নজরদারি নেই।
নাম গোপন রাখার শর্তে সানুহার গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, খালটির বিভিন্ন পয়েন্টে দখলের কারণে এটি অনেকটাই ছোট হয়ে এসেছে। এর মধ্যে স্থানীয়রা একের পর এক ওই খালের ওপর পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। এই সব পাকা নির্মাণাধীন ভবনের জন্য খালে পানির প্রবাহ প্রায় কমে গেছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ তাদের অবৈধ কাজে বাধা দিতে সাহস পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে উজিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আক্তার ও সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) রুম্পা সিকদার বলেন, খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি আমাদের কাছে এসেছে। দ্রুত আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে খাল দখলমুক্ত করা হবে।
বরিশালের খবর