১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

উজিরপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৪৫ অপরাহ্ণ, ২৬ জুন ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: নানা অপকর্ম করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন উজিরপুর সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক। তার বিভিন্ন অপকর্মের সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকলেও তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছেনা কোন ব্যবস্থা। আর এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, একজন প্রধান শিক্ষক, যে কিনা মানুষ গড়ার কারিগর তার বিরুদ্ধেই এত অভিযোগ। তাহলে এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা কিভাবে দক্ষ জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে। তাই তারা অপকর্মের হোতা এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। ক্ষমতার জোরে সবকিছুই করা সম্ভব হয় বলে দাম্ভিকতার সাথে জানান এই শিক্ষক নুরুল হক। আর তাই উজিরপুর উপজেলায় বিগত কয়েক বছর যাবত সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলছে প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ড।

সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর পূর্বে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তার এমপিওভুক্তি স্থগিত করে দেওয়া হয়। তখনকার সময় প্রধান শিক্ষক নুরুল হক সরদারের এক ছাত্রীর সঙ্গে একটি আপত্তিকর ভিডিও ফুটেজ জেলা মহিলা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে পরলে তাকে স্কুল থেকে বরখাস্তের জন্য স্থানীয়রা জোর দাবি জানান। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই থেকে শুরু হয় তার বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ড। সরকারী নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ কোচিং বাণিজ্য, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, কোচিং করানোর নাম করে তার নিজস্ব কোচিং সেন্টারে ছাত্রীদের সাথে অশ্লীল আচরণ এবং ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নুরুল হক সরদার শিকারপুরের জি.জি. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় এক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। তখন ওই ছাত্রীর সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল এই কথা এলাকায় জানাজানি হওয়ায় নুরুল হক মাস্টার ওই ছাত্রীকে বিবাহ করতে বাধ্য হন। তৎকালীন উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা এই লম্পট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রতিবেদন পাঠান।

তখন তার পাঠানো প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষক নুরুল হকের বেতন ভাতাসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পরে হঠাৎই অদৃশ্য ক্ষমতার বলে একদিন নুরুল হক মাস্টারকে বিদ্যালয়ে দেখা গেল। তার সাথে ছিল স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। তারা জানান, নুরুল মাস্টার আবার আগের মতই বিদ্যালয় আসবেন এবং এবিষয় কেউ যদি কোনো প্রকার আপত্তি করে কিংবা উপরোক্ত কর্তৃপক্ষকে জানায় তাহলে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এরপর থেকেই আবারও শুরু হয় শিক্ষক নুরুল হকের ভর্তি ফি বাণিজ্য, রেজিস্ট্রেশন ফি ও ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়।

এবিষয় নুরুল হক স্পষ্টভাবে অভিভাবকদের জানায়, আপনারা যদি স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত টাকা দিতে না পারেন তাহলে আপনারা আপনাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎতের কথা চিন্তা করে নুরুল মাস্টারের সকল অসৎ আবদার মেনে নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, নুরুল মাস্টার অবৈধভাবে বিদ্যালয়ের পাশেই খুলেছেন একটি কোচিং সেন্টার। যেখানে বাধ্যতামূলক সকল শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হবে। তা নাহলে ওই সকল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য সরকারি নির্দেশ অমান্য করে নিজেই কোচিং সেন্টার খুলে দিব্যি কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযুক্ত নুরুল মাস্টার জানান, আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা। আর শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ২শ টাকার স্থলে ৫শ টাকা নেয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, অনেক শিক্ষার্থী গরিব তাই অনেকে টাকা দিতে পারে আবার অনেকে দিতে পারে না। কিন্তু এক শিক্ষার্থীর টাকা আরেক শিক্ষার্থী কেন দিবে এ কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি থমকে যান এবং লাইন কেটে দেন।

এ বিষয়ে সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সরোয়ার হোসেন জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষক নুরুল হক সরদারের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাকে যা নির্দেশনা দিবেন আমি তা বাস্তবায়ন করব।

বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার জানান, সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক সরদার’র বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

21 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন