বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৬:৩৬ অপরাহ্ণ, ১০ মে ২০১৭
মনির সরদার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা গ্রামের মোসলেম সরদারের ছেলে। দেড়মাস আগে তিনি কাতার থেকে গ্রামে আসেন।’
পুলিশের হিংস্রতার পরে ওই যুবকের অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে গোপনে চিকিৎসা করিয়ে বুধবার (১০ মে) অনেকটা গোপনে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
এমনটাই অভিযোগ আকারে বরিশালটাইমসের কাছে তুলে ধরলেন মনিরের দুই বোন শিল্পি বেগম এবং ইয়াসমিন বেগম।
তবে ঘটনায় অভিযুক্ত গৌরনদী মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মহিউদ্দিনকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে বলে শোনা গেছে।
মনিরের বাবা মোসলেম সরদার বরিশালটাইমসকে জানান, উন্নত জীবন গড়তে তার ছেলে (মনির) ২০১৪ সালের ৯ মে কাতার চলে যায়। স্থানীয় প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রে ওই বছরের ২০ জুলাই থানা পুলিশ উদ্দেশ মূলকভাবে তার ছেলে মনিরকে একটি মাদক মামলায় আসামি করে।
মনিরের বোন শিল্পি বেগম বরিশালটাইমসকে জানান- প্রায় ৩ বছর কাতারে প্রবাস জীবন কাটিয়ে তার ভাই দেড়মাস আগে দেশে ফিরে আসে।
খবর পেয়ে গৌরনদী থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মহিউদ্দিন বিগত সময়ের মিথ্যা মাদক মামলার ওয়ারেন্ট দেখিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে মনিরকে কালকিনি উপজেলার খাসেরহাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। পরক্ষণে থানায় নিয়ে তার কাছে ২ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন এএসআই মহিউদ্দিন।
দাবি করা ওই টাকা না দিলে ৫০০ পিস ইয়াবা দিয়ে আরেকটি নতুন মামলায় তাকে আদালতে চালান দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু এতেও মনিরকে টলাতে না পেরে থানায় একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন মনিরের আরেক বোন ইয়াসমিন বেগম।
নির্যাতনে তার হাত ভেঙে যায়। এরপর তাকে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ওইদিন রাতে সেখান থেকে তাকে জেলা পুলিশ হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয় বলে অভিযোগ করেন মনিরের স্বজনরা।
অবশ্য গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহাবুব আলমও মনিরকে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশালটাইমসকে বলেন, পুলিশ মনির নামের এক রোগীকে মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে বলে জনতার রোষ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তখন মনিরের পিঠে লাঠির আঘাতের ২ থেকে ৩টি আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। তখন মনির তার ডান হাতে ব্যাথার কথা বলেছিল।
পুলিশ তরিঘরি করে রোগীকে ভাল চিকিৎসা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ডা. মাহবুব আলম।
কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- আসামি নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করছেন গৌরনদী মডেল থানার এএসআই মো. মহিউদ্দিন। তার ভাষায়- মাদক মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি মনির সরদারকে গ্রেপ্তার করে আমি থানায় নিয়ে এসেছি। এরপর কি হয়েছে আমি তা কিছুই জানি না।
এ বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বরিশালটাইমসকে বলেন, মনিরকে ভূরঘাটা থেকে গ্রেপ্তারের সময় সে পুলিশের সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয়।
এমনকি ওই সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মনির পড়ে গিয়ে তার হাতে ব্যাথা পান। তারপরও মনিরের স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এএসআই মহিউদ্দিনকে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান- প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মনিরকে বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মনিরের পুরো পরিবারটি মাদক পরিবার হিসেবে পরিচিত।’
তাহলে মাদকে জড়িত পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ কর্মকর্তা কেন সরিয়ে নিলেন এমন প্রশ্নে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন ওসি।’’