বরিশাল: সন্ত্রাসী বা উগ্রবাদীদের টার্গেটে পুলিশ প্রশাসন থাকলেও বরিশাল তথা গোটা বিভাগে হামলার নজির ছিল না বললেই চলে। কিন্তু সোমবার সেই শান্ত বরিশালেই এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রীর ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।’
সেই সাথে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে গোটা পুলিশ প্রশাসনে। এমতাবস্থায় পরিবার পরিজনের নিরাপত্তা ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। খোদ পুলিশ কর্মকর্তারও নিজেদেরকে এখন আর নিরাপদ নয় বলে মনে করছেন না।’
যদিও বরিশাল পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই হামলা বিশেষ কোন মহল বা জঙ্গীগোষ্ঠীর নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। কারণ বরিশালে কোন পুলিশ সদস্যের পরিবারের ওপর হামলার নজির এই প্রথম সৃষ্টি হলো।’
অবশ্য এমনই সন্ত্রাসী হামলায় সাম্প্রতিকালে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুর আক্তারের স্ত্রী মিতু আক্তার আক্রান্ত হন। এমনকি সেই হামলায় শেষাবদি পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর প্রাণবিয়োগের ঘটনাও ঘটে।’’
মূলত সেই ধারণা অনুমানে এনেই বরিশালে নিয়োজিত শীর্ষ কর্মকর্তারাও পুলিশ সদস্যের স্ত্রীর ওপর হামলাকারী কে সেই ব্যক্তি শনাক্তে মাঠে নেমেছে। এ তথ্য বরিশাল পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে।’
সূত্রমতে-বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল আব্দুর রহিমের স্ত্রী তাহমিনা বেগমকে (২৫) সোমবার বিকেল ৩ টা নাগাদ দক্ষিণ আলেকান্দা কাজীপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনের কাছে কুপিয়ে জখম করে।’
বোরকা পরিহিত সন্ত্রাসী নারী না পুরুষ সেটি নিশ্চিত হওয়ার আগেই লাপাত্তা হয়ে যায়। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় তাহমিনা বেগমকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পরপর বরিশাল পুলিশের একাধিক টিম সেই বোরকা পরিহিত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে।’
কিন্তু রাত ৯ টা পর্যন্ত গ্রেফতারে সফলতার কোন খবর দিতে পারেনি। এমনকি হামলায় কে বা কারা জড়িত সেই বিষয়টিও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তবে পুলিশের দাবি পূর্ব শত্র“তার জেরে কেউ এই হামলা চালিয়েছে। হামলায় আহত তাহমিনা চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ বলেও জানিয়েছে। এক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে পুলিশ এই হামলার ঘটনাটি সম্পর্কে এমন ব্যাখ্যা দিলেও স্থানীয়রা বলছে ভিন্ন কথা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানিয়েছে, কনস্টেবলের স্ত্রী তাহমিনার পরকিয়া প্রেমিক ক্ষুব্ধ হয়ে এ হামলা চালিয়েছে। অবশ্য এ বিষয়টি নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) সদস্যের মধ্যেও আলোচনা শোনা গেছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশ কনস্টেবল আব্দুর রহিমের কোন অভিব্যক্তি জানা যায়নি। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট কোতয়ালি থানা পুলিশও প্রাথমিকভাবে বিষয়টি লুকোচাপা রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ্ মো. আওলাদ হোসেনের অভিব্যক্তি হচ্ছে, ঘটনার পরপরই পুলিশ হামলার শিকার তাহমিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তার দেয়া বর্ননা অনুযায়ী সেই বোরকা পরিহিত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। তবে এই হামলায় উগ্রপন্থি বা জঙ্গী কোন গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন রাখলে ওসি বলেন, হামলার ধরণ দেখে সেরকমের কিছু মনে হয়নি। কারণ তাহমিনার গায়ে তেমন একটা জখম হয়নি।’
তাদের ধারণা ব্লেড দিয়ে আঘাত করায় সামান্য রক্তাক্ত হয়েছেন। সুতরাং এটাকে বড় কোন সন্ত্রাসী হামলা ভাবার সুযোগ কোথায়? তাছাড়া দেশে যে কয়টি হামলায় পুলিশের পরিবার আক্রান্ত হয়েছিল তাতে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছিল।
যে কারণে বরিশালে পুলিশ পরিবারের ওপরে এই হামলার বিষয়টি নিয়ে বেশি মাত্রায় ভাবার কিছু নেই বলে সাফ জানিয়ে দিলেন ওসি। তবে এই হামলা বরিশাল পুলিশের জন্য অশুভ কোন ইঙ্গিত কিনা সেটি এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে বলে মনে করছে সচেতন মহল।’
তাই কালবিলম্ব না করে বিষয়টি তদন্ত করে এখনই কার্যকরি পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।’
টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর, স্পটলাইট