৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

এমপির ভাইয়ের ‘আদালতে’ গৃহবধূকে ন্যাড়া

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৪৪ অপরাহ্ণ, ২৭ মার্চ ২০১৬

পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ এনে এক গৃহবধূ ও তার স্বামীর ভাতিজার মাথার চুল ন্যাড়া করে দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই। শুধু তাই নয়, গৃহবধূকে প্রকাশ্যে যৌন নিপীড়নসহ দুজনকে বেদম মারপিট করা হয়। শনিবার (২৬ মার্চ) দিনগত রাতে গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে বর্বর ওই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় রোববার গলাচিপা থানায় মামলা করেছেন নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী মো. হাবিব রাঢ়ি।

মামলায় সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী ও পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের এমপি আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের ভাই গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম স্বপনকে আসামি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আসামি হয়েছেন আরো ৬ জন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৬ মার্চ দুপুরে বাদীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম এবং তার চাচাতো ভাতিজা মিজান রাঢ়িকে গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ডেকে নিয়ে যায় ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান এ এম কুদ্দুস মিয়া এবং নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম স্বপন। তাদের সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে বসিয়ে রেখে শুরু করা হয় শালিস বৈঠক। এতে এমপির ভাই স্বপন সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন যে উভয়ের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। তাই দুজনেই দোষী। এ কারণে তাদের মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে ভাতিজা মিজান রাঢ়িকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রাত ৮টার দিকে শালিস বৈঠক থেকে ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে এমপির ভাই নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম গৃহবধূ ও তার ভাতিজাকে ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ পাশের মাঠে নিয়ে গিয়ে বেদম মারপিট করেন। একপর্যায়ে রাবেয়া বেগমের পরনের কাপড় খুলে ফেলা হয়। তারপর তার ওপর যৌননিপীড়ন করা হয়।

এভাবে দুইজনকে নির্যাতন ও লাঠিপেটার পর পরিতোষ শীল নামে এক নাপিতকে ডেকে এনে তাদের মাথার চুল ন্যাড়া করিয়ে দেয়া হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাপিত পরিতোষ শীল বলেন, ‘আমি চুল কামাইতে (ন্যাড়া) চাই নাই। আমারে বাধ্য করা অইছে।’

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- শামসুল হক ডাকুয়া, আশরাফুল ইসলাম টিপু, মো. নিজাম মাঝি, আব্দুল মন্নান মৌলভী ও নাসির উদ্দিন ফকির।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, এমপির ভাই স্বপন অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলাও নেয় না। কেউ থানায় অভিযোগ করতেও সাহস পায় না। বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এক মেয়ের সঙ্গে স্বপন দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলেন শারিরীক সম্পর্ক। তবে শেষ অবধি বিয়ে না করায় গেল বছর এমপির ভাইয়ের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী আদালতে মামলা করেছিল নির্যাতিত মেয়েটি। তবে টাকা দিয়ে মেয়ের অভিভাবকদের মুখ বন্ধ করে দেন।

এলাকাবাসী জানান, নির্যাতিতা গৃহবধূকে এমপির ভাই কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজি না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।

এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আদালতের মাধ্যমে রাবেয়া বেগম এবং মিজান রাঢ়ির জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’

39 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন