১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

কথিত সচিবের স্বজন পরিচয়ে রূপাতলীর হাবিবের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, এলাকাবাসী হতবাক

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৩৫ অপরাহ্ণ, ২২ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: কথিত সচিবের স্বজন পরিচয়ে বরিশাল শহরের রুপাতলীতে আধিপত্য বিস্তার করাসহ সরকারি দপ্তরসমূহে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে মো. হাবিবের বিরুদ্ধে। ইতিপূর্বে পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিজেকে দলটির কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন। পাশাপাশি শহরের ২৪ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ রুপাতলী এলাকায় নিজের শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে ঘটনাচক্রে কথিত ওই সচিবের নামও ভাঙিয়েছেন। এতদিন বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা না হলেও ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হাবিব নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কথিত সচিব জাহিদ হাসানের স্বজন পরিচয় দেওয়া এবং তার নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিতে গেলে ঘটে বিপত্তি। আ’লীগের আমলে তার হুমকি-ধামকি এবং ভয়ভীতির ওপর যারা ছিলেন, তারা এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে। তাছাড়া হাবিব এতদিন যে জাহিদ হাসানকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব দাবি করে স্বজন পরিচয় দিয়ে আসছিলেন তারও কোনো অস্থিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি, যা নিয়ে শহরের দক্ষিণ জনপদে চলছে নানা কানাঘুষা।

বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, মঙ্গলবারও এ প্রতিবেদকের কাছে আলোচ্চ্য হাবিব নিজেকে কথিত ওই সচিবের স্বজন পরিচয় দেন। এবং কোথাও কোথাও ঘটনাচক্রে সচিবের নামও ভাঙিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। কিন্তু জাহিদ হাসান নামের জনৈক ব্যক্তি আদৌ বাংলাদেশ সরকারের কোন মন্ত্রাণালয়ের সচিব- এমন প্রশ্নে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন হাবিব।

দক্ষিণ রুপাতলীর একাধিক সূত্র জানায়, পেশায় বেকারী ব্যবসায়ী হাবিবের আদি বাড়ি বাকেরগঞ্জের চরাদি পল্লীতে হলেও তিনি অর্ধযুগ পূর্বে বরিশালে দক্ষিণ রুপাতলী খলিফা বাড়িসংলগ্ন জমি কিনে সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। এবং বসবাসের পর থেকেই তিনি নিজেকে সচিব জাহিদ হাসানের স্বজন পরিচয় দেন, দিচ্ছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তিনি নামটি ভাঙিয়েছেন এবং এখনও ভাঙাচ্ছেন। সর্বশেষ এলাকায় প্রতিপক্ষের সাথে বিরোধ দেখা দিলে, এনিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের একপর্যায়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের লক্ষে তিনি সচিবের স্বজন পরিচয় দিয়েছেন। এবং সরকারের উচ্চপদের কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে হাবিবের সাঙ্গপাঙ্গ হাবিল খান এবং সোহরাব খান প্রমুখরাও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।

সূত্রে দাবি, স্থানীয় জমি সংক্রান্ত একটি বিষয়ে কিছুদিন পূর্বে দক্ষিণ রুপাতলীর ভূমি মালিক সালাম কশাই সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ করেন। সেই ঘটনায় সামিল থেকে হাবিব থানায় যাতায়াত করাসহ তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা (এসআই) জোবায়েরকে ফোন করে কথিত সচিবের স্বজন পরিচয় দেন, যা শুনে রীতিমত মাঠপুলিশের এই কর্মকর্তাও অবাক হয়েছেন।

কথিত সচিবকে নিয়ে হাবিবের মাতামাতি, বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি রুপাতলীর বাসিন্দারাও। এনিয়ে এলাকায় কানাঘুষা হলে বিষয়টির সত্যতা খুঁজতে মিডিয়াকর্মীদের স্মরণাপণ্ন হয় কেউ কেউ। পরবর্তীতে ওই কথিত সচিব এবং হাবিবকে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে মিডিয়াকর্মীরা। তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কথিত সচিবের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে কীভাবে ভয়ভীতির ওপর রাখতেন হাবিব।

দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়ে জাহিদ হাসান নামক কোনো ব্যক্তি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব আছেন, তার অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। এবং হাবিব ওই সচিবের গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জের দুধল গ্রামের ঠিকানা দিলেও সেখানে খোঁজ নিয়েও এই ধরনের তথ্যের সত্যতা মেলেনি। ফলে বলার অপেক্ষা থাকে না যে, রুপাতলীর পঞ্চাশোর্ধ্ব হাবিব এতদিন ফায়দা লুটতেই কথিত সচিবের নাম ভাঙিয়েছেন।

হাবিবের এই প্রতারণা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, দুধল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জল খানের দেওয়া তথ্যে। জনপ্রতিনিধি জানান, তার ইউনিয়নে জাহিদ হাসান নামের কোনো ব্যক্তি নেই, যিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। যদি কেউ এমন নামসমূহ ব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা নেয়, সেটা নেহাত প্রতারণার সামিল।

এই ঘটনায় সাঙ্গপাঙ্গদের বক্তব্য না পাওয়া গেলেও এবার আত্মপক্ষ সমর্থনে হাবিব বলছেন, জাহিদ হাসান সম্পর্কে তার চাচা শ্বশুর এবং তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি আদৌ সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা কী না তা জানতে চাইলে খেই হারিয়ে ফেলেন হাবিব। বলেন, জাহিদ হাসান সচিব কী না তা নিশ্চিত নয়। তাহলে জাহিদ হাসানকে সচিব দাবি করে এবং তার স্বজন পরিচয়ে কোনো সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করছেন, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

অবশ্য হাবিবের এই প্রতারণা অনেক আগেই ফাঁস হয়ে গেছে, স্থানীয়রা এতদিন তাকে সমীহ করে কথা বললেও ৫ আগস্টের পর তিনি নানা প্রশ্নবানে জর্জারিত হয়ে আছেন। বিশেষ তার উল্টা-পাল্টা কর্মকান্ডে সংক্ষুব্ধ এমন একটি বড় অংশ তাকে কোনঠাসা করে ফেলেছে। কিন্তু তারপরেও হাবিবের প্রতারণা বন্ধ হয়নি, বরং তিনি এখন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কৌশলী পথ অবলম্বন করছেন। এবং সময় সুযোগ বুঝে কথিত সচিবের স্বজন পরিচয় দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন।

কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, একটি অভিযোগের সূত্র ধরে এসআই জোবায়েরের কাছেও সচিবের স্বজন পরিচয় দেন হাবিব। এবং ওই কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে নিতে চেয়েছিলেন অনৈতিক সুবিধা। কিন্তু দূরদর্শী পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবের ছলচাতুরি ধরে ফেলেন, ফলে সেখানে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলেও কথিত সচিবের নাম ভাঙাতে ভুল করছেন না হাবিব। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে এবং আইনি ব্যবস্থাগ্রহণের বিষয়টি ভাবছে।

হাবিবের এই প্রতারণা বন্ধে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ চেয়েছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, প্রতারক হাবিবকে এখনই রোহিত করতে হবে এবং কথিত সচিবের স্বজন পরিচয় দিয়ে তার সকল অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া জরুরি।’

 

270 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন