৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

করাত মিস্ত্রি একজন রুস্তমের গল্প

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ, ১০ অক্টোবর ২০১৬

বরিশাল: ৮ ঘন্টা ডিউটি করি। রাতেও কাজ করতে হয়। মাস গেলে যা টাকা পাই তা দিয়া সংসার চলে না বাপ। অনেক কষ্ট করে টেনেটুনে সংসার চলে। কথাগুলো বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় বলছিল চিশতি টিম্বার এন্ড স্ব-মিলের করাত মিস্ত্রী রুস্তম হাওলাদার। আফসোস করতে করতে যুক্ত করেন রুস্তম, বঙ্গবন্ধু কলোনীতে (স্থানীয়ভাবে বলা হয় চাঁনমারী বস্তি) একটা ছাপরা ঘরে থাকি। ধার দেনা করে চলে জীবন। যা বেতন পাই তা দিয়ে অর্ধেক মাসও চলে না। তবু পুরো মাস চালাতে হয়। কি করবো বলেন আমাদের কথাতো কেউ শোনে না।

ত্রিশ গোডাউন ব্রিজ পার হয়ে খ্রিস্টান কলোনী পিছনে ফেলে পূর্ব দিকে কিছুটা দূর গেলেই দেখা যাবে একটা পরিত্যাক্ত চর। সেখানে কাশ বন, ছোট ছোট আম গাছের চারা, পেপে গাছসহ অনেক গাছই রয়েছে। এই জমি নিয়ে দখল বা কবলা দলিলের তর্ক বির্তক থাকলেও সেই জমির একটা অংশ জুরে চলছে চিশতি টিম্বার এন্ড স্ব-মিলের কাজ। সেখানেই কথা হয় পরন্ত বিকেলে। রুস্তমের চোখে মুখে উদ্বেগ আর চিন্তার ছাপ। বয়স হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েরাও বড় হচ্ছে। কিন্তু আয় তার বাড়ছে না। সেই কবে থেকে ৯ হাজার টাকা বেতন পাই। অনেক অনুনয় করছি আর ৫শ’ টাকার জন্য। কিন্তু এখনও রাজি হয়নি মালিক পক্ষ।

14627997_1064760176978131_1015609627_n

তার ভাষ্য এভাবে জীবন চালানো অসম্ভব। তিনি বলেন, এক সময়ে স্ব-মিল ব্যবসার রমরমা অবস্থা ছিল। যখন মাটির ঘর ছেড়ে লোকজন কাঠের ঘর তুলতো। তখন কাজ করে আরাম পেতাম। তার ভাষায় এখন দিন বদলেছে। পাঁচ বছর আগে যার কাঠের ঘর ছির তারও এখন দুই তলা দালান। ফলে স্ব মিলে কাঠ কাটার চাহিদা কমেছে। সেই সাথে কমেছে এই স্ব-মিলের করাত মিস্ত্রির চাহিদাও। অন্য কোন পেশায় চলে যান না কেন এমন প্রশ্ন করা হলে রুস্তম হাওলাদারের সোজা উত্তর, আর কোন কাজ যে পারি না ভাই।

 

বরিশালে কয়েক বছর পূর্বেও স্ব-মিলের করাত মিস্ত্রিদের চাহিদা ছিল চোখে পরার মত। তখন আয়ও করতেন সন্তোষজনক হারে। এমনকি একজন করাত মিস্ত্রি ২/৩টি মিলেও কাজ করতেন। তখন চুক্তিতে কাজ করতেন। কিন্তু এখন আর কেউ চুক্তিতে ডাকে না। অনেকেই এই পেশা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়। শুধু পারেনি রুস্তম হাওলাদার।

14628106_1064746840312798_84155903_nতার ঘরে ৪ জন সদস্য। কায়ক্লেশে চলে। বড় ছেলে সাইফুল বিএ পড়ে। মেয়েটা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। তাদের চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খেতে হয়। বলে, এখনকার ছেলে মেয়েদের যা চাহিদা তা মেটাতে করাত মিস্ত্রির কাজ দিয়ে হয় না।

কথা হয় অপর মিস্ত্রি নাসির উদ্দিনের সাথে। তার সংসারে ৮ জন সদস্য। তার বেতনও একই। কথা বলতে গিয়ে কপালে ভাজ পরে। মনে হয় জীবন টেনে নিতে নিতে বড় ক্লান্ত সে। নাসির উদ্দিন বলেন, করাত মিস্ত্রিদের জীবন কোন জীবনই না।

 

তার অদুরে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কাজ করছিল খ্রিস্টান পাড়ার বাসিন্দা দিপু। তিনি বলেন, এখানে যা দেয় তা দিয়ে দৈনিক চা খাওয়ার টাকাও হয় না। মনে করুন সেই চায়ের টাকা দিয়ে চাল কিনে খেতে হয়।
যখন গাছের বুকে করাত চালিয়ে তা কাঠে রুপ দিচ্ছিল তখন যেন মনে হচ্ছিল তাদেরকেই জীবন নিত্য কেটে চলেছে করাতের মত। আর কথা বলা শেষ করে ফিরে আসছিলাম তখন সন্ধ্যা ছুই ছুই। স্ব-মিলের গর্জন কম্পিত করছিল কির্তনখোলার পানি। আর মাসিক হিসেব নিকেশের দোলাচালে কাঁপছিল রুস্তম, নাসির, দিপুদের চোখ।

22 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন