‘মোগো কোন জায়গা জমি নাই, কাড়হা শিহার করইয়্যা খাই’, কথাগুলো বলছিলেন কাঁকড়া শিকারী আবদুল রাজ্জাক। শুধু রাজ্জাকই নন, বরগুনার তালতলী উপজেলার ট্যাংরাগিরি বনাঞ্চলে কাকঁড়া শিকার করে সংসার চলে চার শতাধিক জেলে পরিবারের। প্রতিদিন তারা বনের গভীরে ঢুকে কাকঁড়া শিকার করেন। তাদের মূল পেশাই কাকঁড়া শিকার করা।
এমনই আরেক কাঁকড়া শিকারী মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মোগো আর কোন কাম নাই, কাড়হা ধইর্যা সোংসার চালাই। প্রতিদিন কাড়হা ধরলে পাচ থেকে ছ’শ টাহা পাই।’
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তালতলী উপজেলার ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আয়তন নয় হাজার ৯৭৫ একর। এ বনের মধ্যে নয়টি খাল রয়েছে। খালগুলো হলো-বান্দ্রা খাল, মেরজে আলীর খাল, সিলভারতলীর খাল,ফেচুয়ার খাল, গৌয়মতলার খাল, কেন্দুয়ার খাল,সুদিরের খাল, বগীর দোন খাল ও চরের খাল। বর্ষার মৌসুমে এ বনাঞ্চলে পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। এ খাল গুলোর মধ্যে জোয়ার ভাটার পানি প্রবাহমান। এ খালের বিভিন্ন স্থানে কাঁকড়া গর্ত তৈরি করে বসবাস করে। কাকঁড়া শিকারীরা বনের গভীরে ঢুকে খালের ওই কাঁকড়ার গর্তে লোহার রড দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে শিকার করে।
এ বনে চার শতাধিক কাঁকড়া শিকারী রয়েছে। তালতলী, কলাপাড়া ও বরগুনার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ শিকারীরা এসে কাকঁড়া শিকার করে। কাকঁড়া শিকার করে তারা প্রতিদিন পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা আয় করে। এ দিয়েই চলে তাদের সংসার। প্রকার ভেদে এ সকল কাকঁড়া তারা ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করে। আড়ৎদাররা এ কাঁকড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করে থাকে।
কাকঁড়া শিকারী নিজামুর রহমান ও মো. জলিল হাওলাদার জানান, কাকঁড়া শিকার করে দৈনিক পাঁচ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়েই চলে সংসার। গহীন জঙ্গলের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া শিকার করতে হচ্ছে। জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও বন্যপ্রাণী রয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করে কাকঁড়া শিকার করতে হয়।
সোহেল নামের আরেক শিকারী জানান,কাকঁড়া শিকার করতে বন কর্তৃপক্ষকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কাকঁড়া শিকার করতে দেওয়া হয় না।
ফকির হাট মৎস্য সমিতির সহসভাপতি মো. আবদুস সালাম হাওলাদার জানান, তারা কাঁকড়া শিকার করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কাঁকড়া শিকারীরা গহীন অরণ্যে কাকড়া শিকার করায় বনদস্যুদের হাত থেকে গাছপালা রক্ষা পাচ্ছে।
তালতলী সকিনা এলাকার বিট কর্মকর্তা মো. জাহিদ প্রামাণিক বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুমাস প্রজনন মৌসুম এ সময়ে কাকঁড়া ধরা নিষিদ্ধ। এ ছাড়া বাকি সময়ে তারা কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।