জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাগারে নিজের সঙ্গে রাখতে চান ব্যক্তিগত পরিচারিকা মোছাম্মৎ ফাতেমাকে। এজন্য বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আদালতের কাছে তার পক্ষ থেকে আবেদন জানান আইনজীবীরা। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে অনুমতি দেয়নি তাকে।
কারা কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, তারা এখনও আদালতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও নির্দেশনা সংবলিত কাগজপত্র পাননি।
তবে আইনজীবী সানা উল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘ ব্যক্তিগত পরিচারিকা খালেদা জিয়ার সঙ্গেই আছেন।’
অন্যদিকে কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনজীবীর দেওয়া তথ্য সঠিক নয়। যেহেতু খালেদা জিয়া ওই কারাগারে একমাত্র ডিভিশন পাওয়া কয়েদি। তাই কারা বিধি অনুযায়ী তিনি সেবক পাবেন তা ঠিক। সেটা ব্যক্তিগতও হতে পারে। তা না হলে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও হতে পারে। তবে আদালতের নির্দেশনা ছাড়া তাকে ব্যক্তিগত সেবক দেওয়া যাবে না।’
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত আদালতের কোনও কোনও নির্দেশনা পাননি বলে জানান ডিআইজি (প্রিজন্স) তৌহিদুল ইসলাম। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা ও সেবা দেওয়ার জন্য আপাতত কয়েকজন নারী কারারক্ষী দেওয়া হয়েছে।
কারা বিধির ৯৪৮ বিধিতে বলা হয়েছে— ‘যখন কোনও কারাগারে মাত্র একজন নারী বন্দি থাকেন ও সেখানে যদি কোনও নারী কারারক্ষী না থাকেন, তাহলে জেল সুপার সেই বন্দির একজন পরিচিত নারীকে তার সঙ্গে কারাগারে থাকার অনুমতি দিতে পারেন। যদি ওই নারীর সঙ্গে থাকার জন্য এমন নিজস্ব কোনও নারী না থাকে, তাহলে জেল সুপার নিজেই একজন নারীকে সাময়িকভাবে কারারক্ষীর দায়িত্বে নিয়োজিত করে কারা মহাপরিদর্শকের (আইজি প্রিজন্স) অনুমোদন নেন।’
কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে একজন নারী ও একজন পুরুষ ডেপুটি জেলারের তত্ত্বাবধানে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাবজেলটি পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা ও সার্বিক দেখাশোনার জন্য কয়েকজন নারী কারারক্ষী সেখানে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কারাগারের ভেতরে ও বাইরে নিয়োজিত রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য।
রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনটিকে ‘সাবজেল’ ঘোষণা করে সেখানে রাখা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর তাকে সেখানে নেওয়া হয়।
প্রথম শ্রেণির (ডিভিশন) বন্দি হিসেবে জেল কোড অনুযায়ী যেসব আসবাব দেওয়া দরকার, সেগুলো তাকে দেওয়া হয়েছে। এরপর তার বাড়তি চাহিদা থাকলে তাও দেওয়া হবে। তবে সেটা নিজ খরচে রাখতে হবে।
কারা সূত্র জানায়- খালেদা জিয়ার কক্ষে বিভিন্ন আসবাবপত্রের সঙ্গে রয়েছে টেলিভিশন ও ফ্যান। বর্তমানে সেখানে কোনও এয়ার কন্ডিশন না থাকলেও খাটসহ বিভিন্ন আসবাব রয়েছে। একজনকে থাকতে হলে যা যা দরকার, সবই আছে সেখানে। বাড়তি চাহিদা থাকলে তাও কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে বিধি অনুযায়ী তিনি পাবেন।
খাবারের তালিকায় সরু চালের ভাত, মাছ, মাংস, ডিম সবই থাকবে। খালেদা জিয়া চাইলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনে বাইরের খাবারও তাকে সরবরাহ করা যেতে পারে। তবে তিনি পেঁপে দিয়ে তৈরি তরকারি কিংবা পেঁপের জুস খেতে বেশি পছন্দ করেন বলে জানান এক কারা কর্মকর্তা। এছাড়া সকালে রুটি, সবজি ও ডিম খেতে পছন্দ করেন।
দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এর আগে একবার কারাগারে যেতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার স্পিকারের বাসভবনকে সাবজেল ঘোষণা দিয়ে সেখানে রাখা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান।
বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার পর তাকে আবারও কারাগারে নেওয়া হলো। পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের অফিস ভবনের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বামেই সিনিয়র জেল সুপারের যে অফিস কক্ষ ছিল, সেখানেই তাকে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা।
বর্তমানে এই কারাগারে আর কোনও বন্দি নেই। ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই ভোর সাড়ে ৬টার থেকে শুরু করে সারাদিন রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোড থেকে সাড়ে ছয় হাজার বন্দিকে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার বন্দিশূন্য ছিল।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অন্য আসামি তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচজন পেয়েছেন ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। পাশাপাশি তাদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানাও হয়েছে।
শিরোনামজাতীয় খবর