মেয়াদউত্তীর্ন বরিশাল মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন নিয়ে চলছে নানামুখী পর্যালোচনা। ২০১১ সালে দলের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে বরিশাল মহানগর বিএনপির দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এর কয়েক বছর পর পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দিলেও তার লিখিত অনুমোদনের কোনো কপি বরিশালে এসে পৌঁছায়নি। তবে পূর্নাঙ্গ কমিটিতে যাদের নাম দেয়া হয়েছিল তারা এখনো ওই পদ ব্যবহার করে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছেন।

এদিকে ‘এক নেতার এক পদ’ কেন্দ্রের এমন নির্দেশনায় শেষ পর্যন্ত বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন দলের বর্তমান যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। সরোয়ার সভাপতির পদ ছাড়লে কে হবেন পরবর্তী সভাপতি এমন নানা আলাপচারিতায় এখন সরব বরিশাল বিএনপির নেতাকর্মিরা।

অপরদিকে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীনের মৃত্যুর পর দুবছরেরও বেশি সময় ধরে ওই পদটি খালি রয়েছে। এই পদে গত একবছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার।

মহানগর বিএনপির সভাপতি-সম্পাদক পদে কারা আসতে পারেন এমন নানা বিষয় নিয়ে চলছে রাজনৈতিক পর্যালোচনা। নতুন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের পদ পেতে নানা তদবির লবিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

এরই মধ্যে মহানগর বিএনপির বৃহৎ একটি অংশ গত ৬ অক্টোবর দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা ডেকে মজিবর রহমান সরোয়ারকে যুগ্মমহাসচিব পদের পাশাপাশি বরিশাল মহানগর সভাপতি হিসেবে বহাল রাখার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে রেজুলেশন পাঠিয়েছেন। তাদের একটি অংশ বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে সরোয়ারের অপরিহার্যতা তুলে ধরে নানাভাবে লবিং করছেন।

অপর একটি অংশ চাইছেন ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি বহাল রেখে মেয়াদোর্ত্তীর্ন বরিশাল মহানগর বিএনপির পুরনো কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হোক। যাতে সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতাদের প্রধান্য থাকবে।

কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ ছাড়লে এ পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবীব কামাল, বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুল।

তাদের মধ্যে সিটি মেয়র আহসান হাবীব কামাল এক সময় বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, মেয়র হওয়ার পর দলীয় কর্মসূচিতে খুব একটা সময় দিতে পারেননি তিনি। সেকারণে এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাই হয়নি তার।

বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক একসময় বরিশাল জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন, বেলস পার্কের এক জনসভায় খালেদা জিয়ার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। মজিবর রহমান সরোয়ারের আস্থাভাজন হিসেবেও পরিচিত মনিরুজ্জামান ফারুক। আর অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুল ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি থেকে শুরু করে মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পর্যন্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত সাতবার জেল খেটেছেন তিনি। জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক এবং বর্তমান কমিটির বৃহৎ একটি অংশ বিএনপির রাজনীতিতে আলী হায়দার বাবুলের ত্যাগের মূল্যায়ন প্রত্যাশা করছেন।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীনের মৃত্যুর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সাধারণ সম্পাদক পদে এখন পর্যন্ত কাউকে চুড়ান্ত করেনি কেন্দ্র। গত একবছর ধরে এ পদে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদার। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মজিবর রহমান সরোয়ারের কনিষ্ঠ সহোদর মিজানুর রহমান অহিদ। বর্তমানে তিনি মহানগর বিএনপির গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া শ্রমিক দলের রাজনীতির সাথে অনেক আগ থেকেই যুক্ত রয়েছেন তিনি।

এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির বর্তমান সহসভাপতি ও যুবদলের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আকতার হোসেন মেবুল, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও বিএম কলেজের সাবেক জিএস অ্যাডভোকেট আকতারুজ্জামান শামীম, বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আ.ন.ম সাইফুল আহসান আজিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক জিএম আতায়ে রাব্বী প্রমুখ।

বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান অহিদ বলেন, পদ বড় নয়, দল ও দলের নেতাকর্মীরা আমার কাছে বড়। তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের দাবির মুখেই আমি মুল দলের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। যোগ্যতা ও আমার সাংগঠনিক দক্ষতা মূল্যায়ন করবে দলের হাইকমান্ড।

বরিশালে বিএনপির সার্বিক বিষয় নিয়ে আলাপকালে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, আমরা চাইছি বরিশাল মহানগরসহ সব জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নতুনভাবে গঠন করা হোক। ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতাদেরকে বিএনপিতে জায়গা করে দিতে পারলে দলের কার্যক্রম আরো বেশি গতিশীল হবে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিবেচনা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

খবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর, রাজনীতির খবর