দাদনের টাকা পরিশোধ না করার অপরাধে দুই জেলেকে রশি বেঁধে মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কুয়াকাটা খাজুরা এলাকা থেকে জেলে আবুতালেব (২৫) ও হেলাল (২০) কে ধরে এনে ‘মৃধা ফিস’ গদিতে বেঁধে এ শারীরিক নির্যাতন করা হয়। প্রভাবশালী আড়ৎদারদের ভয়ে উপস্থিত জেলেরা কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। পরে অচেতন অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা পড়ে থাকলে মা ময়না বেগম টাকা দেবার প্রতিশ্রুতিতে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়।
এ ঘটনাটি ওই দিন সন্ধ্যায় কুয়াকাটার মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ীরা সালিশ ব্যবস্থার মাধ্যমে মিটমাটের চেষ্টা করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
নির্যাতনের শিকার জেলে আবু তালেবের বড় ভাই মনির জানান, তার দুই ভাই মজনু, আবু তালেব ও অপর এক জেলে ইলিয়াসকে ২০১৩ সালে মৃধা ফিস ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাদন দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে তার দুই ভাইয়ের অংশের টাকা পরিশোধ করার পরে আট হাজার টাকা মৃধা ফিস পাওনা রয়েছে। মঙ্গলবার ওই টাকা আনতে গিয়ে কুদ্দুস মৃধাসহ তার লোকজন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ের উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তার লোকজন নিয়ে আবুতালেব ও তার ভাই হেলালকে ধরে গদিতে নিয়ে আসেন। রশি দিয়ে বেঁধে দিনভর নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে নির্যাতিত জেলের বড় ভাই মনির দাবি করেন।
এ বিষয়ে দাদন ব্যবসায়ী আড়ৎদার কুদ্দুস মৃধা মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার দাদনের টাকা পরিশোধ না করে অন্যত্র মাছ বিক্রয় করছে। আমি টাকা চাইতে গেলে আমার ওপর হামলা করে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে মৎস্য শ্রমিকরা গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে এবং ওদের ধরে গদিতে আনা হয়েছে।’
নির্যাতনের শিকার দুই জেলের মা ময়না বেগম জানান, কুদ্দুস মৃধা ও তার লোকজন তার ছেলেদের ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন শেষে রাস্তায় ফেলে রেখেছেন। তিনি গিয়ে টাকা পরিশোধ করার শর্তে বাড়িতে নিয়ে এসছেন।
কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, ‘নির্যাতনের ধরন দেখে মনে হয়েছে হিংস্র পশু আক্রমন করেছে। দাদন ব্যবসায়ীরদের এমন নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে মহিপুর থানার ওসি মাকসুদুর রহমান বলেন- এ ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।