১ min আগের আপডেট সকাল ৮:৫৬ ; শনিবার ; ডিসেম্বর ২, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

কেউ শোনে না মোগো কতা

বরিশালটাইমস রিপোর্ট
৮:১৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০১৬

‘অনেক কইছি, কেউ শোনে না মোগো কতা। ভিটা মাটি সব নদীতে বিলিন হইয়া যাইবো, তাতে কারও কিছু আসে যায় না। বেড়িবাঁধের নামে কোনও মতে রাস্তা বাইন্দা যায়।  যেহানে লাগবে দশ হাত খাড়া, হে হানে দেয় ছয় হাত খাড়া। হ্যা থাকবে ক্যা?’ নদী ভাঙনের ঝুঁকির কথা জানিয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী গ্রামের মোশারেফ গাজী।

 
শুধু মোশারেফ নন, বরগুনার প্রধান তিনটি নদী ভাঙন কবলিত এলাকার অধিকাংশ মানুষের একই অবস্থা। আর এ ভাঙনের ফলে হুমকিতে রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের ফলে বাবা-দাদার রেখে যাওয়া জমি, বসত ভিটা ভেসে গেছে নদী গর্ভে। এখনও যা আছে তাতেই ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছে এই দরিদ্র মানুষগুলো। নামে মাত্র বেড়িবাঁধ দেওয়ায় তা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভেঙে যায়। আবার নতুন করে একইরকম বেড়িবাঁধ দিলেও দুঃখ পিছু ছাড়ছে না এই অঞ্চলের মানুষদের।

 
বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও দেশের উত্তর ও মধ্য অঞ্চলের বন্যার পানি বঙ্গোপসাগরে নামতে শুরু করায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নদীপারের মানুষের মনে। এরই মধ্যে বরগুনার প্রধান তিন নদী বুড়িশ্বর, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন লেগেছে। ভাঙা বেড়িবাঁধে  ও বেশ কয়েক স্থান দিয়ে নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, মাছের ঘের, ফসলী ক্ষেত, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিষখালী নদীর তীরে জীনতলা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে প্রায় ৮টি গ্রাম। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, পুকুর, মাঝের ঘের, নষ্ট হয়েছে ফসলি জমির ফসল। শুধু তাই নয় জীনতলার বেশ কিছু পরিবার ভাঙনের কবলে পরে এখন বেড়িবাঁধের ওপরে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

একই সঙ্গে বেড়িবাঁধের দুপাশের বেশ কটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ভেঙে গেছে। জীনতলার বেড়িবাঁধ ভাঙনে দিনে দুবার করে জোয়ারের পানিতে ভাসছে আর ভাটায় শুকাচ্ছে এলাকাবাসী।

কিছু পরিবার বেড়িবাঁধের ওপরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও বলেশ্বর নদীর পানির চাপে কাঠালতলী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বরগুনা আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশীয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ৪টি গ্রাম। জোয়ারের পানিতে দিনে দুবার ভাসছে আর ভাটায় শুকাচ্ছে এখানকার মানুষ। এছাড়াও তালতলী উপজেলার বেড়িবাঁধের ওপরে পচাকোড়ালিয়া বাজারে ভাঙনে বিলিন হয়েছে ৯টি ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান। বেতাগীতে শহর রক্ষার বাঁধসহ বেশ কিছু এলাকা রয়েছে ঝুঁকিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার বালিয়াতলী, নিশানবাড়িয়া, নলটোনা, ডালভাঙ্গা, পাথরঘাটা উপজেলার জ্বিনতলা, রুহিতা, বাদুরতলা, হরিণ বাড়ীয়া, পদ্মা, হারিটানা, কোড়ালিয়া, নিজ লাঠিমারা, ছোট টেংরা, গাববাড়ীয়া, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ী, আলিয়াবাদ, ঝোপখালী, ভোলানাথপুর, জগাইখালী, কালিকাবাড়ী, গাবতলী, আলিয়াবাদ, জোয়ার করুনা, গ্রেমর্দন, পূর্ব বেতাগী, পশ্চিম বেতাগী, বেতাগী পৌর শহারের বেড়ীবাধ ভাঙ্গনে হুমকিতে রয়েছে পৌর শহর। তালতলীতে বেড়ীবাধের বাইরে খোটটার চর, নলবুনিয়ার চর, আশার চর, তেতুল বাড়ীয়া, জোয়ারের পানিতে ভাসছে আর ভাটায় শুকাচ্ছে। আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলি, চর বালিয়াতলী, দক্ষিণ বালিয়াতলী ও পছরবুনিয়া সহ বেশ কয়েকটি এলাকায়ও একই অবস্থা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নামে মাত্র বেড়িবাঁধ জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে গিয়ে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি, মাছের ঘের, সবজির ক্ষেত। প্রতিদিন দুবার করে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে আর ভাটায় শুকাচ্ছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। পাশাপাশি পচাকোরালীয়া বাজারের বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙনের কারণে ৯টি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙনে নিশ্চিহ্ন গেছে।

 

পচাকোরালিয়া বাজারের ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী হিরন, খোকন ইব্রাহীম বলেন, হঠাৎ করে নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। পরে পানি কমতে থাকলে বাঁধের রাস্তার অর্ধেক ধরে নদীর পাশ ভাঙতে থাকে। যার ফলে আমাদের ৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে যায়। তারা আরও বলেন, আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস হারিয়ে এখন দিশেহার হয়ে পরেছি। নতুন করে দোকান উঠাতে অনেক টাকা লাগে যা আমাদের কারও কাছে নেই।

বালিয়াতলী এলাকার সবুজ মিয়া জানান, আমাদের দাবি ছিল বড় করে বেড়িবাঁধ ও ভাঙন রোধে দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতির। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত আছে। অনেকেই ভাঙনের কারণে ঘর ভেঙে অন্য জায়গায় বাড়ি করেছে। স্কুল সরিয়ে অন্য জায়গায় নেওয়া হয়েছে। যাওয়ার মতো জায়গা নেই এমন অনেক পরিবার হুমকির মুখে রয়েছে।

বালিয়াতলী এলাকার কৃষক সান্টু কবিরাজ বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে আউশ মৌসুমের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। একই সঙ্গে আমন মৌসুমের বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় বীজও নষ্ট হয়ে গেছে। কি করে আগামী দিনের খাবার যোগার করবো তা নিয়ে খুব চিন্তিত আছি।

একই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ মাছের ঘের মালিক মোশারেফ হাওলাদার বলেন, নামে মাত্র বেড়িবাঁধ যা প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে ভেঙে যায়।

এবছর আমার ঘেরসহ এলাকার প্রায় অর্ধশত মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। যে ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়ার নয়। তিনি আরও বলেন, এখন পথে বসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আলমিনা নামের গৃহবধু জানালেন, রান্নাঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভাটার সময় উঁচু জায়গায় ইট দিয়ে রান্না করে রাখতে হয়। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। স্কুলেও ঠিক মতো যেতে পারছে না। ঘরে যে খাবার আছে তা ফুরিয়ে গেলে কী খাবো জানি না।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশুলী এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, বরগুনার বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙনের খবর পেয়ে পরিদর্শন করেছি। একই সঙ্গে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য বরাদ্দ ও ঠিকাদার নিয়োগের জন্য চিঠি দিয়ে অনুমতি চেয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত এ সব বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক ড. বশিরুল আলম বলেন, আমার ইতোমধ্যে যে সব এলাকায় ভাঙনের খবর পেয়েছি সেসব এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত সহয়তার জন্য ত্রাণ বিতরণ করেছি। ক্ষতিগ্রস্থ ১১শত পরিবারের মধ্যে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত ভাঙা বেড়িবাঁধ  মেরামতের করবে বলেও জানান তিনি।

খবর বিজ্ঞপ্তি, বরগুনা

আপনার ত লিখুন :

 
ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: barishaltimes@gmail.com, bslhasib@gmail.com
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  প্রথম দিনেই কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়লেন যুবক  এবার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বদলির নির্দেশ ইসির  জনগণের ইচ্ছায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আ'লীগ নেতা আতিক  আ'লীগ প্রার্থী স্বপনের মনোনয়ন দাখিলে জনতার ঢল  বরিশালে শ্রেণিকক্ষ দখল করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শিক্ষকের বসবাস  সব থানার ওসি বদলির নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের  জাকির নায়েককে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিলেন মালয়েশিয়ার রাজনীতিবিদ  মুলাদীতে নৌকার প্রার্থী বদলের গুঞ্জনে আওয়ামী লীগে হতাশা  ঝালকাঠিতে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের কুশপুত্তলিকা দাহ  স্বতন্ত্র প্রার্থীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ