চলতি বছরের মার্চে পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকে মাকসুদা বেগম (২৫) নামে এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনের পর পেটের মধ্যে গজ রেখেই সেলাই করে দেন ডা. রাজন দাসের নাম ব্যবহারকারী এক ভুয়া চিকিৎসক। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে বেঁেচ যায় ওই প্রসূতি। বিষয়টি নিয়ে একাধিক জাতীয় দৈনিক অনলাইনে খবর প্রকাশ হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। এর গত ২৩ জুলাই বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লাহ।
এ ঘটনায় বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন, নিরাময় ক্লিনিক মালিক, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে ১ আগস্ট আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় কেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
এবং পরবর্তী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ নয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জনের কাছে এ ঘটনার প্রতিবেদন চান আদালত। পরে সিভিল সার্জনের ওই প্রতিবেদনে ধরা পরে চিকিৎসক রাজন দাসের নাম ব্যবহারকারী একজন ভুয়া চিকিৎসক।
বিএমডিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে- ডা. রাজন দাস একজন এমবিবিএস সনদধারী চিকিৎসক। তাঁর বিএমডিসি সনদ নং-৭০০২০। তিনি বর্তমানে সিলেটের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কর্তব্যরত অবস্থায় আছেন। এই চিকিৎসকের বিএমডিসি সনদের নাম্বার এবং নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছিল ডা. রাজন দাসের নাম ব্যবহারকারী অর্জুন চক্রবর্তী। চাঁদপুর জেলার নলুয়া উপজেলার বাসিন্দা তপন চক্রবর্তীর ছেলে অর্জুন। কুমিল্লা আইসিএমটি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিএমডিএফ ডিপ্লোমা করেন সে।
ডিপ্লোমা পাশের পর চাঁদপুরে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ওটি এ্যাসিটেন্টের কাজ করত অর্জুন। এরপর ২০১৬ সালে বাউফলের কালুশুরিতে নিউ লাইফ কেয়ার নামে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে মাসিক ১লক্ষ ৩০হাজার টাকা বেতনে চাকুরী নেয় সে। চাকুরী নেয়ার পর থেকে অর্জুন বাউফলের নিরাময়সহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে অন কলে সিজারিয়ান অপারেশন করত। এই অপারেশন বাবদ সে ক্লিনিকগুলো থেকে ৫থেকে ৭হাজার টাকা ওটি চার্য নিত। অর্জুন দাবি করেন বাউফলের বিভিন্ন ক্লিনিকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪শ প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন।
বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অত্যন্ত নিঁখুত ভাবেই চলছিল অর্জুনের এই প্রতারণা। কিন্তু বিধিবাম। প্রসূতি মাকসুদা বেগমের অপারেশনের পরই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে ডা. রাজন দাসের সনদ ব্যবহারকারী প্রতারক অর্জুনের আসল পরিচয়। গত ১১ ডিসেম্বর প্রতারক অর্জুন হাইকোর্টে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করলে বাউফল থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করার নির্দেশ দেয় আদালত। বুধবার সকালে প্রতারক অর্জুনকে ঢাকা শাহবাগ থানা থেকে বাউফল থানায় নিয়ে আসা হয়।
ওই দিনই দুপুর দেড়টার দিকে আদালতে প্রেরণ করেছে বাউফল থানা পুলিশ। এদিকে বুধবার ক্ষতিগ্রস্থ মাকসুদাকে আগামী ১৫জানুয়ারীর মধ্যে ৯ লক্ষ টাকা পরিশোধ এবং বিষয়টি তদারকির জন্য পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন- জেলা সিভিল সার্জনের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন তদন্ত সাপেক্ষ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
শিরোনামপটুয়াখালি