৩ ঘণ্টা আগের আপডেট রাত ১২:১৪ ; রবিবার ; অক্টোবর ১, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

কৈ চাষে স্বপ্ন দেখেন হামিদা বেগম

বরিশালটাইমস রিপোর্ট
৬:০১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০১৬

বরিশাল: হামিদা বেগমের গল্পটা ভিন্ন। জন্ম বর্ধিষ্ণু পরিবারে। আর বিয়ে হয় গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের দাওপাড়া গ্রামে  অবস্থাসম্পন্ন তালুকদার বাড়িতে। উচ্চমাধ্যমিকে এক বিষয়ে কম্পার্টমেন্টাল পাওয়ার পর স্বামীর পরিবারের অনাগ্রহে আর এগোয়নি পড়ালেখা। তাই বলে থেমে থাকেননি। পরিবার নতুবা সমাজের জন্য কিছু একটা করবেন এই ভাবনায় থাকতেন বিভোর। এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে পিছিয়ে থাকা নারীদের উন্নয়নে জড়িয়ে পড়েন একাধিক কার্যক্রমে। তবে এতে এই ছন্দে ব্যাত্যয় ঘটে ২০০৭ সালে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে স্বামী বাবুল হোসেন তালুকদারের মৃত্যুতে। এক দুনিয়া মাথার ওপরে, তাই শোক কাটিয়ে নেমে পড়েন মাছ চাষে। ওয়ার্ল্ড ফিস থেকে প্রশিÿণ পেয়ে কৈ মাছের চাষ করে দেনা পরিশোধ করেন। ২০১৫ সালে কৈ চাষে জাতীয় পুরস্কার নেন প্রধান মন্ত্রীর হাত থেকে। এখন  শোনাবো তার সাফাল্য গাঁথা এগিয়ে চলার পালা।


পারিবারিক ভাবেই হামিদা বেগমের শ্বশুড়ের সাড়ে ৩ একরের ৫টি পুকুর রয়েছে। তার স্বামী বাবুল তালুকদার পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প আর তেলাপিয়া মাছের চাষ করতেন। সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করায় নিজেদের খাবার পর বছরে প্রতি পুকর থেকে বছরে মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার আয় পেতেন। পানের বরজ ও অন্য ফলনের আয়ে সংসার বেশ চলতো বলে মাছের পানে নজর তেমনটা ছিল না। এছাড়াও বাবুল হোসেন তালুকদার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর হওয়াতে সংসারের পানে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারতেন না। সন্তান, সংসার আর স্বজনদের দেখভাল করতে হতো হামিদা বেগমকেই। তিন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। তবে এতে ছেদ পড়ে ২০০৭ সালে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে স্বামী বাবুল হোসেনের মৃত্যুতে। হামিদা বেগম বলেন, সম্পত্তি আছে বটে, হাতে নগদ অর্থ ছিল না তেমন।

স্বামীর চিকিৎসায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। তারপরও বাঁচাতে পারিনি তাকে। সন্তানদের পড়ালেখা, সংসার চালানো ধার দেনা পরিশোধ করা সব মিলিয়ে একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। ওসময় নিজেই মাছ চাষের পানে মন দেই। ওই সাদা মাছের চাষ করতাম বলে খুব একটা লাভ হতোনা। ২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড ফিসের সাথে যুক্ত হয়ে প্রশিÿণ নিয়ে শুরু করেন কৈ মাছের চাষ। বিদেশ ফেরত দেবর হারুন তালুকদার দিলেন ১০ লাখ আর ভাই সান্টু সিকদারের কাছ থেকে ধার নেন দেড় লাখ টাকা। এক একর ৩০ শতকের পুকুরে ১ লাখ ৭০ হাজার কৈ মাছের পোনা ছাড়েন। মাছে খাবারের জন্য কোয়ালিটি ফিস কোম্পনীর সাথে চুক্তি করেন। প্রথম বছর ২০১৪ সালে সব মিলিয়ে ১১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। কৈ মাছ বিক্রি করেছিলেন ২১ লাখ ৫৩ হাজার টাকায়। ২০১৫ সালে সম পরিমাণ পোনা চাষ করতে ব্যায় হয়েছিল ৯ লাখ ২১ হাজার টাকা। এবছর লাভ করেছিলেন ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা। আর চলতি বছর ২০১৬ তে একই পরিমাণ কৈ মাছের পোনা চাষ করতে ৭ লাখ ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দর কমে যাওয়ায় এযাবৎ ৮ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। পুকুরে এখনো সাড়ে ৩ লাখ টাকার মাছ রয়েছে। এটা অরো বড় হলে ফাল্গুন-চৈত্রে বিক্রি করবেন।

কৈ মাছের চাষ নিয়ে হামিদা বেগম বলেন, ওয়ার্ল্ড ফিসের প্রশিÿণ নেয়ার সময় ভিয়েতনামী এই কৈ সম্পর্কে জানতে পেয়ে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। এরপর ওয়ার্ল্ড ফিসের কর্মকর্তারা ময়মনসিংহের হ্যাচারী থেকে পোনা সংগ্রহ করে দেন। প্রথমবারে খাবারে একটু বাড়তি খরচ করে ফেললেও কৈ মাছের দাম পেয়েছিলেন কেজি প্রতি ১’শ ৮০ থেকে ২’শ টাকা করে। নিয়ম হলো জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে কৈ মাছের পোনা পুকুরে ছাড়ার। পরিচর্যা ঠিকমত করলে ৫০ থেকে ৬০ দিন পর অর্থাৎ ভাদ্র মাসে বিক্রি করতে পারেন। ওসময় ৭/৮টি মাছে কেজি ভর হয়। আর পুকুরে ৬মাস রাখলে এক একটি কৈ মাছ ভর হয় আধা কেজি পর্যন্ত। শুরুতে এক ইঞ্চি সাইজের শিশু কৈ মাছের পোনার জন্য পাউডার বলতে স্ট্যাটার খাবার দিতে হয়।

এরপর কিশোর বয়স হলে গুড়ি খাবার বা গ্রোয়ার দিতে হয়। শেষের দিকে বড় সাইজের হলে ফিনিশার খাদ্য দিতে হয়। কেবল ওয়ার্ল্ড ফিস নয়; ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ দিনের প্রশিÿণ পেয়েছিলেন মাছ চাষের। মাছ চাষের পাশাপশি ওয়ার্ল্ড ফিসের লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) হওয়াতে শত জন নারী পুরুষকে মাছ চাষে প্রশিÿণ দিয়েছেন। কৈ মাছে রোগ বালাই কম আর সাদা মাছের চেয়ে আড়াইগুন লাভ হয়। এজন্য তার দেখাদেখি এলাকায় আরো ৩ চাষী কৈ মাছের চাষ শুরু করেছেন।

কৈ মাছের দু’বছরের আয়ে দেনা শোধ করে এখন লাভে আছেন। বড় মেয়ে সোনিয়া আক্তার ¯œাতক শ্রেণীর দ্বিতীয় বর্ষে, ছেলে শাকিল তালুকদার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে আর ছোট ছেলে সৈকত তালুকদার পড়ছে ষষ্ঠ শ্রেণীতে। আর কৈ চাষের জন্যই ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর খামার বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ্য পুরস্কার রৌপ্য পদক নিয়েছেন। একই বছর গৌরনদী উপজেলায় জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন। তাই কৈ চাষেই আগামীর স্বপ্ন দেখেন হামিদা বেগম। ইচ্ছে আছে জন সেবার জন্য জন প্রতিনিধি হবার।

টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর, স্পটলাইট

আপনার ত লিখুন :

 

ই বিের ও সা
ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: barishaltimes@gmail.com, bslhasib@gmail.com
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  বরিশালসহ ৫ বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস  চতুর্থ শ্রেণি সরকারী কর্মচারী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত  মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে শোষণ করছে সরকার: রেজাউল করীম  বিএম কলেজ ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস: পলেস্তারা খসে ৪ শিক্ষার্থী আহত  কাউখালীতে জাতীয় কন্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা   কলাপাড়ায় গ্রামীণ কিশোরীদের সেলাই প্রশিক্ষণ  ভোলায় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ  সুন্দরবন থেকে জেলের বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার: চারপাশে বাঘের পায়ের ছাপ  গণমাধ্যমে ভিসা নীতি নিয়ে পিটার হাসের বক্তব্য : ১৯০ বিশিষ্ট নাগরিকের নিন্দা  গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন অব্যাহত থাকবে: পিটার হাস