৪ ঘণ্টা আগের আপডেট রাত ৪:৩৮ ; বুধবার ; মার্চ ২৯, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

কোয়েল পালনে লাভবান পটুয়াখালীর নাঈম

বরিশালটাইমস, ডেস্ক
১২:৩০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩

কোয়েল পালনে লাভবান পটুয়াখালীর নাঈম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইনফরমেশন সায়েন্স ও লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টে স্নাতক পাস করে চাকরি নেন একটি বিদেশি এনজিওতে। এ সময় উত্তরাঞ্চলের কোয়েল পালন করতে দেখেন অনেককে। কম দামে প্রোটিনের সোর্স হওয়ায় ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি।

সেও ২০১৭ সালের কথা। এ সময় সরকার দেশকে ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ ঘোষণা করলে বন্ধ হয়ে যায় ওই এনজিওর কার্যক্রম। চাকরির পেছনে না ছুটে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে কোয়েল পালনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।

এরপর ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছয়শ কোয়েল পাখি নিয়ে শুরু করেন নিজস্ব খামার। এমনটিই জানাচ্ছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের সিকদার সড়ক এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুল আলম নাঈম।

নাঈমের খামারে বর্তমানে দুটি শেডে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোয়েল রয়েছে। যা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ডিম পান তিনি। প্রতিটি ডিম পাইকারি ৩ টাকা করে বিক্রি করে প্রতিদিন আয় করেন ৯ হাজার টাকা।

এ ছাড়া খামারে কোয়েলের বাচ্চাও উৎপাদন করা হয়। নারী কোয়েল পাখি পালনের জন্য প্রতিটি ১২৫ টাকা এবং পুরুষ কোয়েলগুলো মাংসের জন্য ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।

খামারে তার মাসিক ব্যয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। ডিম ও পাখি বিক্রি করেন প্রায় ৩ লাখ টাকার। সব খরচ বাদ দেওয়ার পরও প্রতি মাসে আয় দেড় লাখ টাকা। কোয়েল পালনের পাশাপাশি নাঈম কিছু ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ার ও টারকি মুরগি পালন করছেন।

মুরগির মাংস ও ডিম বিক্রি থেকেও মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। ইতিমধ্যে একাধিকবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ খামার এবং ২০২১ সালে যুব উন্নয়ন অধিদফতর তাকে সফল আত্মকর্মী পুরস্কারে ভূষিত করেন।

নাঈম বলেন, আমার স্ত্রী তামান্না ও আমি খামারে কাজ করি। চাকরির পেছনে না ছুটে এ খামার গড়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পেরেছি। বর্তমানে তার খামারে আরও চারজনের কর্মসংস্থান হয়েছে।

পাইকাররা খামার থেকেই ডিম ও মুরগি কিনে নিয়ে যান, উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে চীনারা কাজ করেন। কোয়েলের ডিম ও মাংস তাদের প্রিয়। আমার খামারে উৎপাদিত কোয়েলের ডিমের প্রধান ক্রেতা তারা।

এ ছাড়া কোয়েলের ডিম ও মাংস সুস্বাদু এবং এর দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এখন আমিষের চাহিদা পূরণে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। এটা থেকে প্রতিদিন আয় হয় তাই কোয়েল পালনেও প্রসার ঘটছে। তবে প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি ডিম বা মাংসের দাম। খাবার, ওষুধ, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য উপকরণের দাম সরকার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে এলে আরও নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হবে, সুদিন আসবে পোল্ট্রি শিল্পে।

ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার বিভাগ থেকে পাস করে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী নাঈমের স্ত্রী উম্মে তামান্না। তিনি জানান, নিজেরা কিছু করব এই তাগিদ থেকে আমরা নিজেরাই খামার গড়ে তুলেছি। এখন আমরা অনেক ভালো আছি। কেয়েল পালনে তেমন কোনো কষ্ট নেই। একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সময়মতো খাবার ও পানি দিলেই হয়।

শীতের সময় ছাড়া কোয়েলের তেমন কোনো রোগবালাই নেই আর প্রায় বছরজুড়েই ডিম দেয় প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েল পাখি। তাই কোয়েল পালন অনেক লাভজনক। ইদানীং অনেকেই আমাদের খামার ঘুরে দেখছেন। তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

নাঈমের দেখাদেখি পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কোয়েল পালন শুরু করেছেন অর্ধশত তরুণ। এ ছাড়া যুব উন্নয়ন, পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রশিক্ষণ দেন তিনি।

খেপুপাড়া নেছার উদ্দিন কামিল মাদরাসার একাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. সজীব বলেন, নাঈম ভাই কোয়েলের খামার দেওয়ার পর তার কাছ থেকে ডিম আর মাংস কিনে খাই, এগুলো খেতে খুব ভালো।

তার সঙ্গে কয়েক দিন থাইকা দেখি কীভাবে কী করে। এরপর ডিম খাওয়ার জন্য ১০টা পাখি বাসায় নিই। এখন আমার প্রায় দুইশ পাখি আছে। ডিম বিক্রি করে মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা ইনকাম করি। বাসা থেকে আর হাতখরচ নেওয়া লাগে না।

নাঈমের খামারের কর্মচারী নজরুল ইসলাম জানান, সকালে এখানে কাজ করি। আর আমার বাড়ি টিয়াখালীতে ছোট একটা খামার করছি। এখান থেকে গিয়ে বাড়িতে কাজ করি, ভালোই লাভ হয়।

একই এলাকার বাসিন্দা লোন্দা হাফিজ উদ্দিন হাই স্কুলের শিক্ষক মো. রাসেল জানান, প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে, তাই আমিষের চাহিদা মেটাতে কম দামে কোয়েলের ডিম ও মাংস কিনি।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ে নিউট্রিশন ও ফুড সায়েন্স অনুষদের কোর্স কো-অর্ডিনেটর, অধ্যাপক ড. দিলরুবা ইয়াসমিন ঝর্ণা বলেন, কোয়েলের মাংস ও ডিম পোল্ট্রির অন্যান্য প্রজাতির চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কোয়েলের ডিমে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি, ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি১২, আয়রন, ক্যালশিয়াম, প্রোটিন ও পটাশিয়াম রয়েছে। এ ছাড়া এর মাংসে শরীরের জন্য ক্ষতিকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট অন্যান্য পোল্ট্রির চেয়ে অনেক কম থাকে।

পটুয়াখালী যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক ওবায়েদুল ইসলাম বলেন, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদফতর তরুণদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেয়। কোয়েল পালন অত্যন্ত লাভজনক। আমরা তরুণদের কোয়েল পালনে উদ্বুদ্ধ করছি।

পটুয়াখালি, বিভাগের খবর

আপনার মমত লিখুন :

 

ই বিাের াও সা
ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: [email protected], [email protected]
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  জলবায়ু সুবিচারে বিল পাশ জাতিসংঘে, ভানুয়াতুকে ইয়ুথেনেটের অভিনন্দন  আদালতে মামলা দায়ের: আলোচিত সেই ওসি সালামকে ভোলায় বদলি  বাদীকে বিয়ে করে ধর্ষণ মামলা থেকে রেহাই পেলেন সাবেক এমপি  বরিশালে বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ধর্ষণ, পুলিশ সদস্য জেলে  ঝালকাঠিতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন  কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে!  ‘আপা’ বলতেই ক্ষেপে গেলেন চিকিৎসক!  ব্রয়লার ২২০ টাকা: বেড়েছে সোনালি-লেয়ার মুরগির দাম  সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন  বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন খান