খাদ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ জালিয়াতি: যুগ্ম সচিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: উত্তরপত্র ঘষা-মাজা করে জালিয়াতির মাধ্যমে নম্বর বাড়িয়ে খাদ্য পরিদর্শক পদে চাকরি দেওয়ার দায়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (১০ অক্টোবর) তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবর বিশেষ জজ আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযুক্তদের মধ্যে সাতজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাকি ৪৩ জন জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া পরিদর্শক।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছিল কমিশন। দুদক সচিব বলেন, কম্পিউটার সফটওয়্যারে কারসাজি করে অনুত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষার ফলে বেশি নম্বর দেখিয়ে অন্যায়ভাবে ৪৪ প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। দুদকের তদন্তে অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় সাত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মোট ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে সাত কর্মকর্তা হলেন- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও খাদ্য বিভাগের সাবেক উপ-সচিব নাসিমা বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও সাবেক উপ-পরিচালক (সংস্থাপন) ইফতেখার আহমেদ, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ) ইলাহী দাদ খান, ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টসের ম্যানেজার মো. আইউব আলী, সাবেক সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও টেকনিক্যাল ম্যানেজার আসাদুর রহমান, সাবেক হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফ হোসেন এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাটাবেজ অ্যাডমিন মো. আবুল কাসেম।
বাকি ৪৩ জন হলেন জালিয়াতি করে চাকরি পাওয়া খাদ্য পরিদর্শকরা। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, খাদ্য অধিদপ্তরের ২০১০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে ৩য় শ্রেণির ১০ ক্যাটাগরিতে (খাদ্য পরিদর্শক, উপ-খাদ্য পরিদর্শক, সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক, সুপার ভাইজার, অডিটর, উচ্চমান সহকারী, হিসাব রক্ষক কাম ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর, সহকারী অপারেটর) ১ হাজার ৫৫২টি শূন্য পদ পূরণের জন্য খাদ্য অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি বিভাগীয় নির্বাচন/বাছাই কমিটির সভা শেষে উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাছাই কমিটির সদস্য ও ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া বা কম নম্বর পাওয়া ৪৪ পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার ওএমআর সিটে প্রাপ্ত নম্বর জালিয়াতির মাধ্যমে বেশি বসিয়ে ৮০ ও তদূর্ধ্ব নম্বর দিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
বিভাগীয় নির্বাচন/বাছাই কমিটির সদস্যদেরও ওই তালিকায় স্বাক্ষর পাওয়া যায়, যেখানে আসামি ৪৪ জন পরীক্ষার্থীসহ মোট ৩২৮ জনকে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে জালিয়াতি প্রমাণিত হলে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. মনিরুল হক। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪১৮/৪২০/৪৭৭(ক)/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় খবর