বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:৫৫ অপরাহ্ণ, ০৮ এপ্রিল ২০১৭
আবারও রজাপুর থানার সেই বিতর্কিত ওসি মুনির উল গিয়াস ষ্টেশন থেকে বিতারিত হওয়ার পূর্ব মূহূর্তে গৃহবধূ সীমা হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার করা স্বামী মিজান খন্দকারসহ দুই আসামীকে অর্থের বিনিময়ে রিমান্ডের নামে জামাই আদরে রেখা হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে।
নিত্যনতুন বিতর্ক সৃষ্টিকারী ওসি মুনির উপজেলার সাউথপুর গ্রামের এনায়েত গোমস্তার বাড়ীতে খুন হওয়া গৃহবধূ সীমা হত্যা মামলা রুজুকালে ৪লাখ টাকার উৎকোচ বিনিময়ে বাদীকে চাপ সৃষ্টি করে প্রধান সহযোগী এনায়েত ও তার স্ত্রীকে আসামীর বদলে সাক্ষী অন্তর্ভূক্ত করেছে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে।
ওসি মুনির উল গিয়াস রাজাপুর থানার দায়িত্বকালে বহুমুখী দুর্নীতি, মাদকস্পট থেকে মাসোহারা আদায়, ৫লাখ টকার দাবিতে কলেজছাত্রকে ধরে নিয়ে ক্রোসফায়ারের হুমকি-নির্যাতন, অর্থের বিনিময়ে জামায়াত ও বিএনপির নিরাপত্তা প্রদান, (৬ লাখ টাকা) ঘুষ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যাকারী খুনি চক্রকে রক্ষা করা ও (৫ লাখ টাকা) অর্থের বিনিময়ে টক্কনাথ (তক্ষক) পাচারকারী চক্রকে রক্ষার, উপজেলা ৫শতাধিক অটোরিকশা থেকে মাসিক ২শ টাকা ও মোটরসাইকেল থেকে ১শ টাকা হারে মাসোহারা আদায়সহ সুনির্দিষ্ট বহু অভিযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহা-পরিচালকসহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসী একাধিক লিখিত অভিযোগও প্রদান করেছে।
নিহত গৃহবধূ সিমার বড় ভাই হত্যা মামলার বাদী মাজেদুর ইসলাম অভিযোগ করেন, ২ এপ্রিল বোন সিমা হত্যার ঘটনায় মামলা করতে রাজাপুর আসলে থানার কম্পিউটারেই অভিযোগ টাইপ করেন। ওই অভিযোগে স্বামী মিজান খন্দকার, তার ভাই সবুজ খন্দকার, তার বোন শাহনাজ বেগম এবং তার ভগ্নিপতি মিজান হাওলাদারসহ ৪ জনকে আসামী করে এজাহারে সাক্ষর করেন।
তবে যে বাড়ী সিমাকে নির্মমমভাবে খুন করা হয় সেই বাড়ীর মালিক মিজানের সকল অপকর্মের সহযোগী এনায়েত গোমস্তা ও তার স্ত্রীকে এজাহারে সাক্ষী রাখেন। আমরা ওসি মুনির উল গিয়াসের কাছে এনায়েত গোমস্তা ও তার স্ত্রীকেও আসামীভুক্ত করার দাবি করলেও ওসি ‘এনায়েতকে আসামী করা যাবেনা, তাকে সাক্ষী করলে মামলার জন্য ভালো হবে’ চাপ দেয়।
পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনির উল গিয়াস ও আইও উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালামকে এনায়েত গোমস্তার স্বজনরা ৪লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেছে এবং ঘাতক মিজানের পবিারের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে রিমান্ডে এনে থানায় জামাই আদলে রাখছে।
এ অবস্থায় বুধবার দুপুরে উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের কলাপোকা গ্রামের বিশখালি নদীতে তীর থেকে একটি রক্ত মাখা ও ৭থেকে ৮টি ইট দিয়ে ডুবিয়ে দেয়া অবস্থায় আঙ্গুলসহ একটি হাতের কিছু অংশ, দেহের সন্তানসহ একাংশসহ দুই টুকরো নারীদেহের অংশ বিশেষ দেখে স্থানীয় এলাকাবাসীর রাজাপুর থানা পুলিশ ও নিহত সীমার পরিবারের কাছে ফোন করে।
পুলিশ দেহের অংশগুলো সীমার কিনা নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেষ্ট প্রয়োজন বলে জানলেও সীমার ভাইসহ পরিবারের লোকজন নদী তীরে এসে লাশের টুকরো দেখেই তা সীমার বলে শনাক্ত করেছেন।
ঝালকাঠি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুহাম্মদ আব্দুর রকিব বরিশালটাইমসকে জানান, লাশের এ টুকরো দুটি যেকোন একজন নারীর তা নিশ্চিত। প্রাথমিক ধারণা ও সীমার পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে এটা সীমার লাশের অংশ।
তবে ডিএনএ পরীক্ষা করে চুড়ান্ত ভাবে নিশ্চিত হতে দেখা হবে বলেন মন্তব্য করেন উর্ধ্বতন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
তাছাড়া মামলার এজাহারে কাউকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তদন্তে যার নাম আসবে তারা কেউই রেহাই পাবেনা বলে জানান এএসপি।
তবে জেলা গোয়েন্দা ডিবি পুলিশের একটি সূত্র ও যশোরের কয়েকজন সংবাদিক জানায়- যশোরের শংকরপুর গ্রামের বদ্ধভূমি সংলগ্ন এলাকার মন্নান মাষ্টারের ছেলে দিপু তথা মুনির উল গিয়াস ছাত্রজীবনে যশোরের মাফিয়া ডন আলোচিত বিএনপি নেতা কমিশনার নূরনবি বাহিনীর ক্যাডার ছিল।
দিপু তথা বর্তমান ওসি মুনির, তার বড় ভাই মামুন ও ছোটভাই টিপুসহ পরিবার সবাই বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিল।
কলেজ জীবনে প্রবেশ করে যশোর এমএম কলেজে বিএনপির ছাত্র সংগঠনে নাম লেখানো দিপু ওরফে মুনির ও তার ছোটভাই টিপু ৮০ থেকে ৯০ দশক থেকে যশোরে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত ছিল বলে সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।”