গভীর রাতে স্কুল ভাঙচুর-লুটপাট, অনিশ্চিত পাঠদান
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পালেরহাটে একটি বিদ্যালয়ে গভীর রাতে দুই দফা হামলা চালানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) গভীর রাত ও শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোরে পালেরহাট মডেল একাডেমিতে এ ভাঙচুর চালানো হয়। ৯৯৯ কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে তাৎক্ষণিক হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ চলে গেলে শুক্রবার ভোরে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত দলবল নিয়ে ফের ভাঙচুর চালায়। এতে ওই স্কুলে পাঠদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জমির মালিকানা দাবি করে স্থানীয় তোফায়েল আহমেদ ও আবু তাহের দলবল নিয়ে স্কুলে ভাঙচুর ও লুট চালায় বলে অভিযোগ করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোরশেদ কামাল। তারা অভিযোগ, হামলাকারীরা দুটি ল্যাপটপ ও শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের এক লাখ টাকা লুটে নেয়। ভাঙচুর ও লুটপাটে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তার।
মোরশেদ কামাল ও তার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের মা ফাতেমা বেগম স্কুলের জমির মালিক। ২০১৪ সালে এ জমিতে স্কুলটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু মায়ের চাচাতো ভাই তোফায়েল আহমেদ, আবু তাহের ও খোরশেদরা জমির মালিকানা দাবি করে আসছিল। এনিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার বৈঠক হলেও তোফায়েলরা জমির কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। সবশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও বৈঠক হয়। সেখানেও তারা কোনো কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি।
মোরশেদ কামাল জানান, তোফায়েল দলবল বৃহস্পতিবার রাতে স্কুলে ভাঙচুর চালায়। বাজারের একজন নৈশ প্রহরীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ৯৯৯ কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল আসে। তাৎক্ষণিক হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ চলে গেলে শুক্রবার ভোরে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত দলবল নিয়ে ফের ভাঙচুর চালায়। এতে বাধা দিতে গেলে প্রতিষ্ঠানপ্রধান মোরশেদকে মারধর করে তারা।
তিনি বলেন, হামলাকারীরা স্কুলের অফিস কক্ষসহ ১০টি সেমিপাকা, দুটি টিনসেট শ্রেণিকক্ষ, একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ সব আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরে দুটি ল্যাপটপ ও শিক্ষকদের মাসিক বেতনের জন্য রাখা এক লাখ টাকা নিয়ে যায় হামলাকারীরা। প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ শিক্ষার্থীদের পাঠদান এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত ও মেহেদী হাসান জানায়, বৃহস্পতিবারও তারা ক্লাস করে গেছে। এখন তাদের স্কুলটা ভেঙে তছনছ করে ফেলেছে। তারা কোথায় ক্লাস করবে। সামনে তাদের বার্ষিক পরীক্ষা। এ অবস্থায় ক্লাস করতে না পারলে তাদের পড়ালেখার সমস্যা হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বেলাল হোসেন ও এমরান হোসেন জানান, বিদ্যালয়টি এমনভাবে ভাঙচুর করেছে, পাঠদান কর্মসূচি চালানো অসম্ভব। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানো ঝুঁকি মনে হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনিছ উজ জামান বলেন, খবর পেয়ে রাতে ঘটনাস্থল এসে ভাঙচুরের সত্যতা পাই। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তখন হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর আমরা চলে গেলে ফের স্কুলে ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনাস্থল এসে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। হামলাকারীদের তথ্য নেওয়া হয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশের খবর