গাঁজা বিক্রি করতে গিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এসআই-সিপাহি জনরোষে
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বিভিন্ন সময়ে অভিযানে উদ্ধার গাঁজা স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে জনতার রোষানলে পড়েছেন বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাহিসহ উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। সোমবার খুব সকালে এসআই মো. ওবায়দুল্লাহ খান এবং সিপাহি সবুর স্কুল ব্যাগভর্তি ২ কেজির গাঁজার চালানটি শহরের ৫ নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর এলাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই পল্লীর সোহাগ ওরফে কানা ও বাউলা সোহাগের কাছে মাদকের চালানটি পৌছে দিতে নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এর আগেই মাদকদ্রব্যের দুই সদস্যকে মোহাম্মদপুর প্রবেশপথে ঘেরাও করে স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষ। এসময় সেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই দুই সদস্য এবং স্থানীয়দের মধ্যে টানা-হেচড়া ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে আশপাশ এলাকাসমূহে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৮) এবং কাউনিয়া থানা পুলিশ গিয়ে ওই দুই সদস্যকে উদ্ধার করে। অবশ্য এর আগেই বিক্ষুব্ধ জনতা মাদকদ্রব্যের দুই সদস্যকে একচোট পিটুনি দেয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বাউলা সোহাগের সাথে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এসআই মো. ওবায়দুল্লাহ খানের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ ছিল এবং তাদের প্রায়শই একত্রে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন স্থানে আলাপচারিতায় দেখা যায়। আবার এমনও অভিযোগ আছে, সোহাগ সোর্স হয়ে মোহাম্মদপুরের একাধিক বাসিন্দাকে মাদকসহ ধরিয়ে দেয় এবং তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদী হয়ে উঠলে এসআই ওবায়দুল্লাহকে দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। এসব ঘটনাবলীতে তিক্ত এলাকাবাসী ওবায়দুল্লাহ ও একাধিক মামলার আসামি সোহাগের এই গোপন যোগাযোগ এবং সোহাগের মাদকের চালান আসে কোথা থেকে আসে তা অনুসন্ধ্যান করতে থাকে। একপর্যায়ে নিশ্চিত হয় যে, সোহাগকে মাদকের চালান এসআই ওবায়দুল্লাই সরবরাহ করেন। এবং সোমবার সকালে সিপাহি সবুরসহ ওবায়দুল্লাহ ব্যাগভর্তি গাঁজা সোহাগকে দিতে আসেন, যখন তারা ব্রিজ পাড়ি মোহাম্মদপুরে প্রবেশ করছিলেন, তখনই স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ঘেরাও করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জনতা-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের হাতা-হাতি-ধস্তাধস্তি এবং ডাক-চিৎকারে ভোরে মোহাম্মদপুরে তুলকালাম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জনতার রোষানল থেকে নিজেদের আত্মরক্ষার্থে মাদকদ্রব্যের সদস্যরা তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ফোন করেন। অন্যদিকে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানা পুলিশ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) খবর দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসার আগেই সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং মাদকদ্রব্যের ওই সদস্যকে স্থানীয়রা গণপিটুনি দেয়। কিছুক্ষণ পরে বিপুলসংখ্যক র্যাব-পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করে এবং অবরুদ্ধ ওবায়দুল্লাহ ও সবুরকে উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নেয়। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) আশরাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মাদক সরবরাহের প্রাক্কালে মাদকদ্রব্যের এসআই এবং সিপাহিকে হাতেনাতে ধরে ফেলে স্থানীয় জনতা, এনিয়ে সেখানে উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি হলে কাউনিয়া পুলিশ গিয়ে সকলকে শান্ত করে। এবং ঘটনাস্থল থেকে মাদকদ্রব্যের ওই দুই সদস্যকে পৌনে ২ কেজি গাঁজাসহ আটক করে নিয়ে আসে। মাদকদ্রব্যের আটক দুই সদস্যর বিরুদ্ধে গাঁজা সরবরাহ করার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
যদিও মাদকদ্রব্যের দুই সদস্যকে নিয়ে যখন স্থানীয়রা টানা-হেচড়া করছিল, তখন তারা উচ্চস্বরে চিৎিকার দিয়ে বলছিলেন, তাদেরকে ফাঁসানো হচ্ছে, এমন একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ্যে এসেছে, যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারাও সংগ্রহ করেছেন এবং তা পর্যালোচনা করে দেখছেন বলে জানা গেছে। এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় জনতার মধ্যে মাদক নিয়ে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা ইউনিটের সহকারি পরিচালক ফয়সাল মাহামুদ জানান, পুরো বিষয়টি তারা পর্যালোচনা করছেন এবং ঘটনার ভিডিও ফুটেজগুলোও নিক্ষুতভাবে দেখছেন।
এই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর তাদের দুই সদস্যর সাথে কথা বলেছেন, কিন্তু তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন এবং এটি একটি ষড়যন্ত্র বলে জানিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কেন এমন প্রশ্নে ফয়সাল মাহামুদ বলেন, যাদের হেনস্তা করা হয়েছে, তারা মোহাম্মদপুরে অসংখ্য সফল অভিযান করেছেন। তাছাড়া সোমবার সকালেও তারা কোনো এক মাদক ব্যবসায়ীর দেওয়া তথ্যে সেখানে অভিযানে গিয়েছিলেন, কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগেই ঘটল হুলুস্থুলু কান্ড।
মাদকদ্রব্যের আটক দুই সদস্য সকালের ওই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকালে ব্যাগে গাঁজা ঢুকিয়ে ফাঁসানোর দাবি করলেও স্থানীয়রা বলছেন, যে সোহাগের কাছে গাঁজা পৌছে দেওয়ার উদ্দেশে নিচ্ছিল সেও স্বীকার করেছে। মাদকদ্রব্যের দুই সদস্য এখন নিজেদের রক্ষায় কৌশল নিয়েছেন।
কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, গাঁজাসহ আটকের ঘটনায় মাদকদ্রব্যের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। মামলার প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্যের সহকারি পরিচালক ফয়সাল মাহামুদ বলেন, শুনেছি পুলিশ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করছে। এই মামলার কপি হাতে পেলে দুই সদস্যর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে ঢাকায় সুপারিশ করা হবে।
এদিকে বিকেল ৫টায় সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, সকালের ওই মাদককাণ্ডের পর গোটা মোহাম্মদপুরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দুপুরের পরে র্যাব ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও কাউনিয়া থানাসহ গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে অবস্থান করে আছেন।’
শিরোনামবরিশালের খবর