‘বিড়ি ফকির স্বপ্নে আদৃষ্ট ও ঐশ্বরিক শক্তির বলিয়ান হয়েছেন। তিনি যেকোন মানুষের অতিত ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন। এছাড়া মানুষের সব ধরনের রোগ মুক্তির জন্য হাসি বেগম চিকিৎসা দিয়ে থাকেন’। বিড়িতে ফুক দিলেই নাকি তিনি বলে দিতে পারেন মানুষের অতীত ও ভবিষ্যত।
কথিত বিড়ি ফকিরের দালালরা এ ধরনের প্রচারনা চালিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী পৌর এলাকার উত্তর পালরদী মহল্লার। ওই মহল্লার দাস বাড়ির ব্রিজের গোড়ায় রয়েছে বিড়ি ফকিরের আস্তানা। সার্বক্ষনিক ওই আস্তনায় বসে হাসি বেগম একের পর এক বিড়ি ফুকতে থাকেন বিধায় তার নাম দেয়া হয়েছে ‘বিড়ি ফকির’। প্রতিদিন তার ১০ থেকে ১২ প্যাকেট বিড়ি লাগে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর বেশীর ভাগই হচ্ছে নারী।
সূত্রমতে- ঝড়-ফুকের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদানের নামে প্রতারণা করে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীরা বিড়ি ফকির হাসির আস্তানায় হামলা চালিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ভন্ড বিড়ি ফকির হাসি বেগম (৪৮) ও তার সহযোগী দালাল মতিয়ার হোসেন মতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন জানান, প্রতারণার শিকার স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন ভন্ড ফকিরের আস্তানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে আস্তনা গুড়িয়ে দিয়ে ফকিরকে মারধর করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভন্ড বিড়ি ফকির হাসি বেগম ও তার সহযোগী মতিয়ার হোসেন মতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
এ সময় আস্তানা থেকে তছবি, দুটি বাঘের মূর্তি, মরা গরুর হাড়গোড়সহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে- উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামের দিনমজুর জালাল মোল্লার স্ত্রী হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকির ২০০৭ সালে স্বপ্নে সৃষ্টিকর্তার অলৌকিক আর্শিবাদ পেয়েছেন বলে তার কিছু দালালদের দিয়ে এলাকায় প্রচারণা চালায়।
সূত্রে আরও জানা গেছে- আস্তানা গড়ে তোলার পর সেখানে চিকিৎসার নামে প্রতারনার সাথে ওই আস্তানায় গড়ে তোলা হয় নারীদের নিয়ে অসামাজিক কর্মকান্ড ও মাদকের আড্ডা।
ভন্ড ফকিরের কর্মকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিবেশীরা জানান, ভন্ড হাসি বেগম তার অবৈধ প্রতারণা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় উঠতি নেতাদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে থাকেন। যে কারণে ওইসব নেতাদের ভয়ে এলাকার কেহ মুখ খুলতে সাহস পেতনা।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী উজিরপুর উপজেলার বামরাইল গ্রামের গৃহবধূ আলেয়া বেগম (৩২) অভিযোগ করে বলেন- আমার মেয়েলি কিছু সমস্যাজনিত রোগের কারণে হাসি বেগম ওরফে বিড়ি ফকিরের কাছে যাই। প্রথমে একশত এক টাকা দর্শন ফি নেন। পরবর্তীতে তৈলপড়া, পানি পড়া দিয়ে এক হাজার একশত টাকা হাতিয়ে নেন। এতে কোন সুফল না পেয়ে পুনরায় তার কাছে গেলে গোসল দেয়ার নামে পূর্ণরায় আট হাজার ছয়শত টাকা হাতিয়ে নেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের মফসের আলী অভিযোগ করে বলেন- আমার পেটে ব্যাথা হওয়ায় বিড়ি ফকিরের কাছে যাই। একশত এক টাকা দিয়ে নাম অর্ন্তভুক্ত করি। এসময় আমাকে দেখে বলে এখন কোন চিকিৎসা হবেনা। আমার (ফকিরের) ধ্যানমুহুর্তে তোর আসতে হবে। তিনদিন পরে গেলে আমাকে বলে তোকে মানুষ কুফরি দিয়ে ক্ষতি করেছে এবং বান মেরেছে তুই বাঁচবি না।
এভাবে আমাকে ভয় দেখিয়ে চিকিৎসা দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একইভাবে অভিযোগ করেন গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর গ্রামের রাবেয়া বেগম, নলচিড়া গ্রামের মমতাজ বেগম, খাঞ্জাপুর গ্রামের সাফিয়া বেগমসহ অসংখ্য ভুক্তভোগীরা।
সূত্রমতে, ভন্ড বিড়ি ফকির এভাবেই প্রতারনা করে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রতারণা শিকার ভুক্তভোগীরা একজোট হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ভন্ড ফকিরে আস্তনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে গুড়িয়ে দিয়েছেন।
তবে ভন্ড বিড়ি ফকির হাসি বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- আমি স্বপ্নে পেয়েছি ওই একজনের নির্দেশে সেবা দেই, এতে কোন প্রতারণা নেই।
Other