১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

গৌরনদীর সন্ত্রাস নান্নু গ্রেপ্তার

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:২৯ অপরাহ্ণ, ২২ নভেম্বর ২০১৬

গৌরনদী: বরিশালের গৌরনদী মডেল থানার তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী, আলোচিক খাদেম হত্যা, অস্ত্র, মাদক, ধর্ষন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ ২০টির বেশী মামলার আসামি, বার্থী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক পলাতক নান্নু মৃধাকে পুলিশ সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে। বার্থী ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সন্ত্রাসী নান্নু বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিল । নান্নুর গ্রেপ্তারে গ্রামগুলোতে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে এলাকাবাসী জানান । গতকাল মঙ্গলবার সকালে সন্ত্রাসী নান্নু মৃধাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

গৌরনদী মডেল থানার পুলিশ জানান, গৌরনদী মডেল থানার কয়েকজন চৌকস পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানা পুলিশের সহায়তায় সোমবার রাত ৭টায় কালকিনি উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লি দরিরচর গ্রামে অভিযান চালায়। পুলিশের টের পেয়ে নান্নু মৃধা সহযোগীদের নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ চারিদিক থেকে ধাওয়া করে নান্নু মৃধাকে গ্রেপ্তার করে। গৌরনদী থানার এস, আই মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, সন্ত্রাসী নান্নু মৃধা গৌরনদী মডেল থানার তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী, আলোচিক খাদেম হত্যা, অস্ত্র, মাদক, ধর্ষন ও সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ তার বিরুদ্ধে ২০টির বেশী মামলা রয়েছে।

 

খাদেম হত্যা মামলার বাদি মোঃ শাহ আলম সরদার জানান, একটি মাদক মামলায় স্বাক্ষী দেয়ার কারনে ২০১৪ সালে ১৬ অক্টোবর নান্নু মৃধার নেতৃত্বে বাহিনীর সদস্যরা তার বাবা খাদেম সরদারকে কুপিয়ে হত্যা এবং  ভাই আসলাম সরদারকে গুরুতর জখম করে। ওই বছর ১ অক্টোবর ফেন্সিডিলের চালান আমদানীর খবর পেয়ে গৌরনদী থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এ এস আই) নুরুল ইসলাম একদল পুলিশ নিয়ে অভিযান চালালো নান্নু বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এ এস আই নুরুলকে মারধর করে ।

নান্নু মৃধা গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গেলে গ্রামবাসী জানান, গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের নন্দনপট্রি গ্রামের হতদরিদ্র সফিজ উদ্দিন মৃধার অশিক্ষিত পুত্র নান্নু মৃধা ও সেন্টু  মৃধা দিনমজুরের কাজ করত।

 

৭/৮ বছর আগে দুই ভাই গাঁজা ও ফেন্সিডিল সেবনে আসক্ত হয়ে পরে। মাদকসিক্ত হওয়ার সুবাধে যশোরের একটি ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী চক্রের সাথে পরিচয়ের পর দুইভাই স্থানীয়ভাবে ফেন্সিডিল ব্যবসা শুরু করেন। মাদক ব্যবসা করে রাতারাতি টাকা পয়সার মালিক হয়ে যান। ২০০৮ সালে নান্নু মৃধা, সেন্টু মৃধা যুবলীগে যোগদান করেন। ক্ষমতার প্রভাবে অবৈধ ফেন্সিডিল ও অস্ত্র ব্যবসা করে ২/৩ বছরের মধ্যে হয়ে উঠেন বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠী, পিরোজপুর ও বরগুনাসহ সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলে পেন্সিডিল সরবারহকারী।

গৌরনদী উপজেলার নন্দনপট্রি গ্রামের আ. হক সরদার, সেলিম মিয়া, বেজগাতি গ্রামের হারুন রশিদ, উত্তর ধানডোবা গ্রামের এবায়েদুল হকসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন জানান, ২০০৮ সালে নান্নু মৃধা টাকা ও ক্ষমতার জোরে  গ্রামের মধ্যে নিরাপদে মাদক ও অন্ত্র ব্যবসা করতে গড়ে তোলেন নান্নু বাহিনী নামে একটি শসস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী।

 

নান্নুর মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর হামলা চালিয়ে মুখ বন্ধ করে দিত। হামলা, নির্যাতন, মিথ্যা মামলাসহ নানান কৌশলে গত ৩/৪ বছরে বার্থী ইউনিয়নের নন্দনপট্রি, ধানডোবা, উত্তর ধানডোবা, দক্ষিন ধানডোবা, রাজাপুর, গোরক্ষডোবা, মৈস্তারকান্দী, বেজগাতি, মাদ্রা, উত্তর মাদ্রা, দক্ষিন মাদ্রা, সাজুরিয়া, সুন্দরদী ১৩টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষকে জিম্মি করে অবাধে চালিয়ে যান মাদক, অস্ত্র, জুয়াসহ অসামাজিক কর্মকান্ড।

 

নান্নু বাহিনীর হামলায় ধানডোবা গ্রামের সেলিম সরদার, ধানডোবা মাধ্যবিদ্যালয়ের ছাত্র রাজিব সরদার, বেজগাতি গ্রামের হারুন হাওলাদার, আ. হক সরদার, উত্তর ধানডোবা গ্রামের গৌরী বালা, ওবায়েদুল সরদার, কালা চাঁদ বালা, দক্ষিন ধানডোবা গ্রামের শাহ আলম ফকির,  নন্দনপট্রি গ্রামের সাইফুল ইসলাম, মঞ্জু সরদার, রাজাপুর গ্রামের মওলা সরদার, মৈস্তারকান্দী গ্রামের জামিল হোসেন, কামাল মুন্সিসহ দুই শতাধিক মানুষ জখম ও আহত হন। নান্নুর গ্রেপ্তারে এলঅকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে গ্রামবাসী জানান।  অভিযোগ সম্পর্কে নান্নু মৃধার কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।

16 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন