বরিশাল: দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে বরিশাল-ঢাকা রুটসহ অভ্যন্তরীন সকল রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল ৫টার পর বরিশালের অভ্যন্তরীন বা ঢাকা রুটের লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ায় নদী বন্দরে ২নং সতর্কতা সংকেত জারির কারণেই এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার বিষয়ে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার উপকূলীয় অঞ্চলে ৭নং বিপদ সংকেত জারী করা হয়েছে।
এছাড়া সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ঘন্টায় ২৬.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়া থেকে রক্ষার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালাম আজাদ। বরিশালের ঘুণিঝড় প্রস্তুতির কর্মসূচির উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ জানিয়েছেন, ঘুণিঝড় রোয়ানু মোকাবেলায় বরিশাল বিভাগে সবধরনের প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভাগের ৬১৫০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
এছাড়া বরিশাল বিভাগের ১ হাজার ২টি সাইক্লোলন সেন্টার খুলে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালে রয়েছে ২৩৪, দশমিনা ৩৩, গলাচিপায় ৬২, মঠবাড়ীয়ায় ৩৩, শরনখোলায় ৭৪, ভোলায় ২৪২, বরগুনায় ৩২৪টি সাউক্লোনস সেন্টার রয়েছে। এদিকে সাইক্লোন সেন্টার ও সেচ্ছাসেবকরা তৎপতা শুরু করেছে। গ্রামে গ্রামে মেঘাপুন(মাইকিং) করা হচ্ছে । এছাড়া নৌ বন্দর গুলোতে ২টি করে সংকতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ভারতে ঘূর্নিঝড় রোয়ানু আঘাত হানার প্রভাবে বরিশালে দিনভর গুড়ি গুড়ি বৃস্টি হয়েছে। ফলে ব্যস্ততম জনজীবন একটু থমকে গেছে। বরিশাল লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার সকালের দিকে বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে দুই একটা লঞ্চ চলাচল করলেও তাতে যাত্রী ছিল খুবই সিমিত।
এছাড়া নগরীর ব্যস্ততম সড়ক সদর রোডেও কর্মব্যস্ত মানুষ ছাড়া তেমন কোন লোকজন দেখা যায়নি। এদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিসহ সরকারী বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের নজরদারী বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছ। দূর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ফায়ারসার্ভিস, পুলিশ, আনসারসহ সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে। জরুরী সেবার জন্য মেডিকেল টিম, ত্রানসহ সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। অপরদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারনে জোয়ারে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নি¤œাঞ্চলে পানি উঠে গেছে। তবে রাতের জোয়ারে আরো বেশি পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় ভূগছেন নিন্মঞ্চলের সকল বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র অগ্রসর হওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলের চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালির রাঙ্গাবালী উপজেলায় চরআন্ডা, চরকাশেম, চরমোন্তাজ, চরভেস্টিন, মৌডুবি, চালিতাবুনিয়া, পশরবুনিয়াচরের বেড়িবাঁধের বাইরের প্রায় পাঁচ কয়েকশত পরিবার পানিতে প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে চরআন্ডা গ্রামের মো. মহিউদ্দিন। সেখানকার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানায়, দূর্যোগ মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তুতি মূলক সভা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে রাঙ্গাবালীর সকল আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুর রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবাদানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, শুকনো খাবার সরবরাহের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মীর ফশিউর রহমান জানান, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও কিছু পর্যটক কুয়াকাটায় এসেছেন। তাদের মাইকিং করে বলা হচ্ছে উত্তাল সমুদ্রে সাবধানতা অবলম্বন করে গোসল করার জন্য। পূর্ণিমা এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারনে রাতে পর্যটকদের সৈকতে সাবধানে চলাচল এবং গোসল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে।
টাইমস স্পেশাল, বরগুনা, বরিশালের খবর, ভোলা