লাখো মুসুল্লীর অংশগ্রহনের মধ্যদিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী মহাসম্মেলন চরমোনাইর ফাল্গুনের ৩ দিনব্যাপী বাৎসরিক মাহফিল শুরু হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুমা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা সৈয়দ মো. রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাইর উদ্বোধনী বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় মুসলিম জমায়েত চরমোনাইর বার্ষিক মাহফিল। শুরুর প্রথম দিনে কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী চরমোনাইর মাদরাসার সুপ্রস্থ মাঠসহ আশেপাশের ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ন হয়ে উঠেছে।
লক্ষ লক্ষ মুসুল্লীর আল্লাহু আল্লাহু জিকিরের ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে গোটা চরমোনাই এলাকা। মাহফিলের প্রথম দিনে উদ্বোধনী বয়ানে শরিয়ত, দ্বিতীয় দিনে মারেফত ও তৃতীয় দিনে মাদরাসা ও তরিকা সম্পর্কে বয়ান করবেন। পীর সাহেব তাঁর উদ্ভোধনী বয়ানে বলেন-এ দরবার দুনিয়া হাছিলের ময়দান নয়। মাহফিলে যদি কেউ বড়লোক হওয়ার উদ্দেশ্যে এসে থাকেন বা অসুখ ভাল হবে এমন বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে এসে থাকেন তাদের নিয়ত পরিবর্তন করে একমাত্র
আল্লাহকে রাজি-খুশী করার জন্য এ ময়দানে বসার আহবান জানান।
তিনি বলেন- এ চরমোনাইর মাঠ অনেক বরকতময় স্থান। এখানে বহু আল্লাহর প্রিয়বান্দাগণ উপস্থিত হয়েছেন। যাদের ছোহবতে নিজেকে ধন্য করার সুযোগ রয়েছে। কাজেই নিজের গুণাহের জন্য বেশি বেশি এস্তেগফার পাঠ করবেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ও বর্হিবিশ্ব থেকে আগত বিভিন্ন পীর মাশায়েখগণ মুসুল্ল¬ীদের উদ্দেশ্যে বয়ান রাখবেন। জুমা পূর্ব খুতবায় নায়েবে আমির সৈয়দ মোহাম্মাদ ফয়জুল করিম বলেন- বৃষ্টি সকল জমিনে পড়ে, কিন্তু সকল জমিনে ফসল হয় না, দুধ ভাল খাবার কিন্তু ডায়রিয়ার রোগীকে দুধ খাওয়ানো যাবে না।
তেমনি কুরআন মানুষের হেদায়েতের জন্য, কিন্তু যার মধ্যে তাকওয়া নেই তাকে কুরআন হেদায়েত দিবে না। কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী চরমোনাই মাদরাসা সুপ্রস্থ মাঠসহ আশপাশের প্রায় ২ লক্ষ স্কয়ার ফুট ময়দান বৃহস্পতিবার থেকেই কানায় কানায় পূর্ন হয়ে গেছে।
এখন এলাকার বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়, বাগান বিভিন্ন স্থানে মুসল্লিগণ আসন গ্রহন করছেন। লক্ষ লক্ষ মুসুল্লীর আল্লাহু জিকিরের ধ্বনিতে মুখরীত হচ্ছে গোটা চরমোনাই এলাকা। শত শত বাস, ট্রলার, লঞ্চযোগে জনস্রোত এখনও ছুটে চলছে চরমোনাই অভিমুখে। ২ থেকে ৩ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে একেকটি মাঠ এভাবে ৪টি মাঠে এ বছর প্রায় ৮০ লক্ষ লোকের একযোগে জড়ো হয়ে পীর সাহেবের বয়ান শুনবেন।
মাহফিলের পরিচালক চরমোনাই আহছানাবাদ রশীদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবুল কাসেম সৈয়দ মো. মোসাদ্দেক বিল¬াহ আল মাদানী জানান- মাহফিলে প্রদত্ত বয়ানসমূহ যাহাতে সকলে সুন্দরভাবে শুনতে পারে সেজন্য সম্পূর্ন নিজ ব্যবস্থপনায় ২৫০০হাজার মাইক, ৪ হাজার বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুত সরবরাহ না থাকাকালীন সময় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে ৮০০ কেভি, ৪০০কেবি এবং ৪৮ কেভি মোট ৩টি জেনারেটর সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। গভীর নলকুপের মাধ্যমে খাবার পানির সরবরাহের জন্য ১৮ হাজার অস্থায়ী কল ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
মাহফিলে আগত মুসুল্লীগণের খাবারের ব্যবস্থা তাদের নিজ থেকেই আয়োজন করে থাকেন। এককভাবে যারা মাহফিলের আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, ৩ হাজার মাদরাসার ছাত্র সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এখানে দায়িত্ব পালনে উপস্থিত রয়েছেন।
মাহফিলে আগত মুসুল্লীদের মধ্য কেউ অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার জন্য মাহফিল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কওমিয়া মাদরাসার নিচ তলায় ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতাল চালু রয়েছে। এখানে ৩৫ জন ডাক্তার এবং ৭০ জন স্বাস্থ্যকর্মী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। ডাক্তাররা জানান- ফ্রি চিকিৎসার জন্য সুব্যবস্থা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমান ওষুধ না থাকায় অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা দানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে মাহফিলে শতাধিক রোগী অসুস্থ থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের কোন সুব্যবস্থা নেই।
এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছেন মাহফিল পরিচালনা কমিটি। মাহফিলের পরিচালক জানান- মাহফিলের প্যান্ডেলের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মাহফিল বাস্তবায়নে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা দিয়ে আমাদের লোকসমাগম সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
মাহফিলে আগত মুসুল্লীদের মধ্যে প্রথম দিনে ২ জন্য মুসুলল্লী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। এরা হলেন- ফরিদপুরের আবুল ফকির (৪৫) ও ঢাকা কেরানীগঞ্জের আবদুল মালেক (৭০)।
শিরোনামখবর বিজ্ঞপ্তি, টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর