বরিশালটাইমস, ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪২ অপরাহ্ণ, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: হঠাৎ দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট বেড়েছে। শিল্প কারখানা ও বাসাবাড়িতে প্রয়োজনীয় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারা এবং ভারত বিদ্যুৎ রফতানি কমিয়ে দেওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এক ঘণ্টা করে একাধিকবার এবং মফস্বলে আট ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তিন সপ্তাহের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে শিগগিরই এ সংকটের সমাধান হচ্ছে না।
এদিকে দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে বুধবার। এতে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বাড়ায় বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
তবে এলএনজি কার্গো মজুদ না থাকায় সামিটের এলএনজি টার্মিনাল চালু হলেও এ থেকে বেশি দিন সুবিধা পাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় লোডশেডিংয়ের বিকল্প দেখছে না পিডিবি।
পেট্রোবাংলা বলছে, মজুদকৃত এলএনজি দিয়ে ৫ থেকে ৬ দিন চলবে। ফলে আপাতত গ্যাস সরবরাহ বাড়বে না। স্পট মার্কেট থেকে ১৬ কার্গো এলএনজি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা এ মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে দেশে আসবে। তখন গ্যাস সরবরাহ বাড়লে পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড়পুকুরিয়ায় কারিগরি সমস্যা হয়েছে, যা দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। রামপাল পুনরায় চালু হয়েছে, আদানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে ও দ্রুত গ্যাস আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পিজিসিরি ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, লোডশেডিং হচ্ছে গড়ে ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর পরিমাণ চাহিদা বৃদ্ধির সময়ে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ উৎপাদিত হয়েছে ১২ হাজার ৮৬৯ মেগাওয়াট আর ইভিনিং পিক আওয়ার রাত ৯টায় উৎপাদিত হয়েছে ১৪ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট। পেট্রোবাংলা ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার ২৫৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে আমদানিকৃত এলএনজির পরিমাণ ৫৩ কোটি ঘনফুট।
বিদ্যুতে ২৩১ কোটি ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৮৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস। যদিও সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে বুধবার সরবরাহ শুরু হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।
জানা গেছে, জ্বালানি সংকটে গতকাল ৪৫টি কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক বন্ধ রাখতে হয়েছে। ভারতও বিদ্যুৎ রফতানি কমিয়ে দিয়েছে ২২ শতাংশের মতো। এতে বর্তমানে বিদ্যুতের ঘাটতি ২ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট ছুঁয়েছে।
আদানি আগে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রফতানি করত। কেন্দ্রটি বাংলাদেশের কাছে বকেয়া বাবদ পাবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। এই তথ্য জানানোর পর গত সপ্তাহ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করছে না।
পিডিবির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে পিডিবির দায়দেনা রয়েছে প্রায় ৭৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া পড়েছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বিভিন্ন গ্যাস কোম্পানির কাছে পিডিবির বকেয়া বিল রয়েছে ১৫ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া ৪ হাজার ৭৪ কোটি টাকা ও আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) তথা বেসরকারি খাতের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া ১১ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।
এর বাইরে আইপিপিগুলো থেকে কেনা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ৩০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদনির বিল বকেয়া ৮ হাজার ২৫২ কোটি টাকা বা প্রায় ৭০ কোটি ডলার। নিয়মিত বিল পরিশোধ না করায় বেসরকারি কেন্দ্রগুলো নিয়মিত ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। মজুদ গ্যাস দিয়ে কয়েক দিন সরবরাহ করা যাবে।
এর আগে ১১ কার্গো এলএনজির অর্ডার বাতিল করা হয়েছে। এখন স্পট মার্কেট থেকে ১৬ কার্গো এলএনজি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী মাসের শুরুতে এগুলো পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, স্পট মার্কেটের এলএনজি সরবরাহ শুরু হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
সাম্প্রতিক বিদ্যুতের লোডশেডিং সম্পর্কে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছেন, বড়পুকুরিয়ায় কারিগরি সমস্যা হয়েছে, যা দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। রামপাল পুনরায় চালু হয়েছে।
আদানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে ও দ্রুত গ্যাস আমদানি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থার উন্নতি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।