বরিশালটাইমস, ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৭ অপরাহ্ণ, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ছাত্রকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে কারাগারে শিক্ষক
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: চট্টগ্রামের পটিয়ায় কথামতো বাথরুম পরিষ্কার করে না দেওয়ায় আবদুল্লাহ আল নোমান প্রকাশ জিসাত (৮) নামে মাদ্রাসার এক শিশুছাত্রকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা শিক্ষক আশরাফ হোসেন মিজানের বিরুদ্ধে। ওই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ওই শিক্ষককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ওই শিশুকে পেটানোর সময় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছে আরও কয়েক শিশুছাত্র। ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও লোকজনসহ শিশুর পিতা-মাতা গুরুতর আহত শিশুকে উদ্ধার করে পটিয়া হাসপাতালে নিলে সেখান তার অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
ওই ঘটনায় মঙ্গলবার শিশুর মা রেহেনা আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়েরের পর বুধবার সকালে অভিযুক্ত মাদ্রাসাশিক্ষক আশরাফ হোসেন মিজানকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পটিয়া থানা পুলিশ। আহত শিশু জিসাত কোলাগাাঁও ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব কোলাগাঁও সোলাইমান মেম্বারের বাড়ির বাসিন্দা নুরুল আবছারের পুত্র। অভিযুক্ত শিক্ষক আশরাফ হোসেন মিজান একই ইউনিয়নের নলান্ধা হাফেজ সাহেবের নতুন বাড়ির বাসিন্দা আহমদ ছফার পুত্র।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, এক বছর ধরে ওই শিশু স্থানীয় গাউছিয়া রহমানিয়া গরিবীয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় আরবি হাফেজিয়া বিভাগে লেখাপড়া করছে। সেখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় ওই শিক্ষক শিশু জিসাতকে দিয়ে প্রায়ই হাত-পা টিপাতেন ও বিভিন্ন কাজ করাতেন। কথামতো কাজ না করলে মারধর করতেন। ওই শিক্ষকের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জিসাত পালিয়ে বাড়িতে চলে যায়। পরে শিক্ষক এসে জিসাতকে মারধর করবে না প্রতিশ্রুতি দিয়ে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে যায়। জিসাতকে মাদ্রাসায় নেওয়ার পরদিন তাকে আবারো বেদম মারধর করা হয়।
মারধরের ঘটনা দেখে একই মাদ্রাসার ছাত্র জোবায়েদ ও আয়াতসহ অনেক ছাত্র পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার জিসাতকে অমানুষিক মারধরের বিষয়টি জানতে পেরে প্রথমে মা ও পরে বাবা মাদ্রাসায় গেলেও শিক্ষক মাদ্রাসার দরজা বন্ধ করে দেয়। শিশুর মা বাবাকে সন্তানের সাথে দেখা করার জন্য এক সপ্তাহ পর আসতে বলে।
পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিউল বশরসহ স্থানীয় লোকজন মাদ্রাসায় গেলে জিসাতকে দেখাতে বাধ্য হয়। ওই সময় লোকজন জিসাতকে উদ্ধার করে পটিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। তার অবস্থা খারাপ দেখে সেখান থেকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। শিশু জিসাত এখনো চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত শিশু জিসাত জানায়, ২৪ অক্টোবর সকালে ওই শিক্ষক তাকে মাদ্রাসার বাথরুম পরিষ্কার করতে বলে। সে অপরাগতা প্রকাশ করায় শিক্ষক কাঠের রুল (পড়ার সময় কুরআন রাখার বিশেষ থাক) দিয়ে প্রথমে মাথায় আঘাত করে এবং থাপ্পড় ও ঘুসি দিয়ে মুখে ফুলা জখম করে।
পরে কাঠের লাঠি ও বেত দিয়ে পুরো শরীরে আঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করেন। সে কান্নাকাটি করায় শিক্ষক কাপড় দিয়ে তার মুখ বেঁধে একটি কক্ষে আটকে রাখে।পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।