নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল:: বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিতর্ক সৃষ্টির পর এবার ত্রাসের জন্ম দিয়েছে। প্রতিপক্ষকে দমনে আভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলরত তাদের মালিকানাধীন পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। হামলা চালিয়েছে কাউন্টারে। একদঙ্গল যুবক ও তরুণদের নিয়ে বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদককে তার নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বেধম প্রহর করে। গত দুদিন ধরে কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব জনপদ চরকাউয়া এলাকায় এই ত্রাস সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আ’লীগ নেতা জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীদের ওপর এই নির্যাতন এখন সর্বগ্রাসী রুপ নিয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে অত্র এলাকায়। ছাত্রলীগ সুজন নিজেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত।
স্থানীয়রা বলছে- মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ সম্প্রতি বরিশাল মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসার পরেই উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা চরকাউয়াসহ নদী তীরবর্তী ৫ ইউনিয়নে প্রতিপক্ষদের দমনে মহড়া দেয়, কখনও কখনও তাদের খুঁজতে থাকে। গত কয়েকদিন যাবত ওই এলাকার প্রতিমন্ত্রীর রাজনৈতিক অনুসারীদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে হানা দেয়। প্রথমে যুবলীগ নেতা আবুয়াল হোসেন অরুন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক এইচএম জাহিদের দুটি গণপরিবহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। বরিশাল জেলার আভ্যন্তরীণ রুট চরকাউয়া টু লাহারহাট সড়কে ওই দুটি পরিবহন আটকে দিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে দেয়। এনিয়ে চরকাউয়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম কিছুটা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিলেন। তিনি প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী হওয়ায় তার ওপর পূর্ব ক্ষোভ এবং বর্তমান ভুমিকা সুজন সহজভাবে নেয়নি।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়- মঙ্গলবার রাতে সুজন প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি মোটরসাইকেলযোগে তার দলবল নিয়ে নদী অতিক্রম করে পশ্চিম পাড়ে এসে বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বসতঘরের ঠিকানা জানতে ক্ষুদ্র এক ডিম ব্যবসায়ীর ওপর চড়াও হয়। কিন্তু ঠিকানা বলতে সময়ক্ষেপন করায় ডিম ব্যবসায়ী হানিফকে দোকান থেকে টেনে বের করে মারধর করে। একপর্যায়ে ঠিকানা অবগত হয়ে শহরের শের-ই বাংলা সড়কে নুরুল ইসলামের বাড়িতে সন্ধ্যারাতে উপস্থিত হয়। মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ তলব করেছে, এমন দাবি করে তাকে বাড়ি বের করার কৌশল নেয়। তাদের মারমুখি আচারণে সন্দেহ হলে এই বাস মালিক নেতা পরে মেয়রের সাথে যোগাযোগ করার কথা জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুজন তাকে বাড়ির সামনে ফেলে কিছু সময় পেটায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযাীয় এলাকাবাসী সুজনের রাজনৈতিক পরিচয় অবগত হওয়ায় কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে জোরপূর্বক নুরুল ইসলামকে মোটরসাইকেলে তুলে বরিশাল জেলা ও মাহানগর আ’লীগের কার্যালয় সোহেল চত্ত¡রে নিয়ে আসে। রাত তখন ৯টা। এসময় সেখানে মেয়র সাদিক ওয়ার্ড আ’লীগের পক্ষ থেকে বুধবার সংবর্ধনা দেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতিতে মঞ্চ তৈরিতে দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারাও সুজনের ভুমিকায় ছিলেন নিরব। পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নিতে পারে, দলীয় অপর নেতারা এমন মন্তব্য করায় সুজন কৌশলে নুরুল ইসলামের কাছে ভুল স্বীকার করে ঘটনা এখানেই শেষ টানার অনুরোধ রাখে। বাড়ি থেকে সোহেল চত্ত¡রে আনা পর্যন্ত পথিমধ্যে কয়েক দফা বিক্ষিপ্ত কিলঘুষি মারায় আহত নুরুল ইসলাম জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পরে হাসাপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। তিনি ঘটনার এই বর্ণনার অভিন্ন মত ব্যক্ত করে বলেন- নদীর ওপাড়ে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীদের দমন অভিযান শুরু হয়েছে। মেয়রের নাম ব্যবহার করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রলীগের এই নেতা। রাতে ঘটনার রেশ না কাটতেই বুধবার সকালে সুজন তার অনুসারীদের নিয়ে আবারও চরকাউয়া খেয়াঘাটে অবস্থান নিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দেন প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীদের সংষ্পর্শে না যাওয়ার জন্য।
তবে অপর একটি সূত্র বলছে- ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক এইচএম জাহিদের মালিকানাধীন একটি পরিবহন চালুর প্রস্তুতির খবরে সুজন সেখানে উপস্থিত হয়। শত শত লোকের সামনে ওই পরিবহনের চালককে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে এনে চাবি দাবি করে। এনিয়ে বেশকিছু সময় সেখানে উত্তাপ সৃষ্টি করে। সুজন মাঠে নেমেছে এমন খবরে নদীর পূর্ব জনপদে একই ঘরানার বিরোধীমতের নেতাকর্মীরা নিরাপদে চলে যায়। সুজনের ত্রাস নিয়ে গত দুদিন ধরে বরিশালে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পরিবহন বন্ধ ও একজন নেতাকে অপহরণের করে মারধরের ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের একাংশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়।
অনুসারী সুজন আসলে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র নির্দেশে প্রতিপক্ষ দমন এবং ওই পরিবহন নেতাকে তলব করেছিলেন কী না এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে সেলফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মেয়র ফোন রিসিভ না করায় ব্যক্তিগত সহকারি মিলনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেয়রের বরাত দিয়ে বলেন- মঙ্গলবার রাতে পরিবহন নেতাকে তলব করার বিষয়টি সঠিক নয়, এটা সুজনের একান্ত ব্যক্তিগত। ফলে নেতার নাম ব্যবহার করে ত্রাস সৃষ্টি করে চলা সুজনের বিষয়ে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র মতামত জানা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সুজন একটি জনপদ অস্থির করে তুলেছে এ খবর বরিশালের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের সকলে অবগত।
দলীয় একাধিক সুত্র জানায়- উপজেলা ছাত্রলীগের এই নেতা এখন শুধু গ্রাম নয়, শহরেও দাপট দেখিয়ে চলতে শুরু করেছে। নিজ ঘরনায়ও তাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ছাত্রত্ব বা শিক্ষাসনদ না থাকার পরেও কীভাবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন তা নিয়ে সংগঠনের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এই বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন- তিনিও বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান। এই ছাত্রলীগ নেতা এককে সময় একেক জনের আর্শিবাদ নিয়ে বরিশাল রাজনীতিতে পথ চলেন বলে জনশ্রæতি রয়েছে। প্রথমে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মাহামুদুল হক খান মামুন, দ্বিতীয় দফায় আ’লীগ নেতা সাবেক এসপি মাহাবুব উদ্দিন বীর বিক্রমের সহচর হিসেবে পরিচিতি পান। সর্বশেষ সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান নিলে বোল পাল্টে ফেলেন। সেই সাথে তার নদীর তীরবর্তী এলাকায় নিজস্ব একটি বাহিনীর আদলে ছাত্রলীগের কর্মীদের ব্যবহার করতে শুরু করে। তারাই এখন ত্রাস সৃষ্টিতে সুজনের সহায়ক হিসেবে ভুমিকা রাখছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সুজনের বিষয়ে স্থানীয় থানা পুলিশও নিশ্চুপ। নির্যাতিতরা জানিয়েছেন- তারা আইনগত সহায়তা নিতে থানা পুলিশের কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অবশ্য সুজন তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগকে ষড়যন্ত্রমূলক অভিহিত করে বলেন- দলের মধ্যকার একটি অংশ তাকে হেয় এবং কোনঠাসা করার লক্ষ্যেই অপপ্রচার শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে গত কয়েকদিনের ঘটনার সাথে তাকে জড়িয়ে রাজনৈতিক রুপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
শিরোনামবরিশালের খবর