বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: চলতি বছরের মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের বাকপ্রতিবন্ধী এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। একই এলাকার মো. শাহ আলমের ছেলে শামীম মিয়া ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। আর আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়র ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় ওই কিশোরী।
চিকিৎসকরা জানান, মা ও সন্তান দু’জনই ভালো আছেন। প্রয়োজনীয় সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে তাদেরকে। পুলিশ জানায়, শিশুটির পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত হতে আদালতের নির্দেশনা পেলে ডিএনএ টেস্ট পরীক্ষা করা হবে। মেয়েটির বাবা ও মা জানায়, সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে শঙ্কিত তারা। কি করবেন তারা বুঝতে পারছেন না। ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত এখনও জেলহাজতে আছে। মামলা তুলে নিতে তাদেরকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এর আগে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বিষয়টি অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে জানায় ওই কিশোরী। পরে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। এ ঘটনায় শামীম মিয়াসহ নূর আলম নামে আরেকজনকে আসামি করে ২ অক্টোবর বিজয়নগর থানায় মামলা দায়ের করেন মেয়েটির পিতা। নূর আলম মেয়েটিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ কাজে সহায়তা করে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
কিশোরীর মা জানান, এক আত্মীয়ের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়িতে লোকজন ছিল কম। ওই সুযোগে চাচাতো ভাই নূর আলমের সহযোগিতায় শামীম তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ ঘটনার পর বমি করলে ও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিলে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হয়। প্রথমে বড় বোনের কাছে ইশারায় ঘটনাটি বলে। পরে গ্রামের লোকজনকে জানানো হলে এ নিয়ে সালিস বৈঠক হয়। সেখানে শামীমকে শনাক্ত করে তার মেয়ে।
তিনি আরো জানান, শামীম বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েছিল বলেও ইশারায় বুঝায় তার মেয়ে। এমনকি জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও বুঝায়। গ্রামের লোকজন এ নিয়ে একাধিক বৈঠক করেও কোনো সমাধান করতে পারেননি। শামীমের বাবা বারবারই বলেছেন, তার ছেলে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। এমন অবস্থায় থানায় মামলা দায়ের করেন তারা। এরপরই পুলিশ শামীমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।
ওই কিশোরীর মা বলেন, ‘আমরা কি করবো বুঝতে পারছি না। শামীম তো দোষ করেছে। এখন তার কাছে কিভাবে মেয়েকে বিয়ে দেই। এছাড়া শামীমের পরিবার বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছে না। আমার এ নাতি কাকে বাবা বলে ডাকবে এখন?’
ওই কিশোরীর বাবা জানান, ঘটনা জানাজানির পর থেকেই তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়। এরপরও পিছপা না হয়ে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ শামীমকে গ্রেপ্তারের পর তার মেয়েকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠায়। সেখানেও তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। তিনি শামীমের বিচার দাবি করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন জানান, অক্টোবর মাসে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার সময় ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। শুক্রবার রাতে প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হয়। পরে শনিবার সকালে মেয়েটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। মা ও ছেলের সকল চিকিৎসা ব্যয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. আলমগীর হোসেন জানান, মামলা হওয়ার পরপরই পুলিশ শামীমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও শামীম ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। আদালতের নির্দেশনা পেলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শিশুটির পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করা হবে।
দেশের খবর