রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজের সাড়ে তিন মাস পর বাড়ি ফিরে আসা বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজছাত্র মেহেদী হাসানকে পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ‘স্মৃতি মনে না থাকা’ এবং শারীরিক দুর্বলতার বিষয়টি পরীক্ষা করতে বুধবার তাকে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান তাকে চিকিৎসা করিয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। গত সাড়ে তিন মাস কোথায় ছিল, কাদের সঙ্গে ছিল, কী করেছে এসব বিষয়ে কিছুই মনে নেই বলে দাবি করছে মেহেদী।
গত ডিসেম্বরে ঢাকা একটি রেস্তোরাঁ থেকে ‘নিখোঁজ’ চার শিক্ষার্থীর মধ্যে মঙ্গলবার বিকালে বাড়িতে ফিরে আসে মেহেদী হাসান। বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে বরিশালটাইমসকে জানান, ‘এতদিন কোথায় ছিল, কাদের সাথে ছিল, কীভাবে ও কেন ছাড়া পেল সে ব্যাপারে মেহেদী কিছুই জানে না বলছে। তবে তার পোশাক-পরিচ্ছদের অবস্থা ও ক্লিন শেভড চেহারাছবির সঙ্গে এ বক্তব্য মিলছে না। তাই তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।’
ওসি জানান- মেহেদী ‘স্মৃতি ভুলে যাওয়া’ ও শারীরিক দুর্বলতার কথা বলায় তাকে পরিক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে গেছেন।
বাবুগঞ্জ থানায় মেহেদীর বিরূদ্ধে কোনও মামলা না থাকলেও পরবর্তীতে প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান ওসি। কিন্তু আপাতত তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের আইনী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না জানিয়ে ওসি বলেন- তাকে নগরদারীর মধ্যে রাখা হয়েছে।’
মেহেদী হাসান হাওলাদার বাবুগঞ্জ উপজেলার বাহেরচর এলাকার পুলিশ কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে এবং বিএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান সম্মান চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র।
জাহাঙ্গীর আলম বাবুগঞ্জ থানায় বসে সাংবাদিকদের বলেন- মেহেদীর কোনও জঙ্গি সম্পৃক্ততা ছিল বলে তাদের জানা নেই। ছেলে ফিরে আসায় তারা খুশি। তারা মেহেদী ‘অপহরণকারীদের’ গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এদিকে মেহেদী পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলছে- সে তার পাশের বাড়ির বন্ধু সুজনের সাথে ঢাকার বনানীতে এক রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে সমবয়সী আরও দুইজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপরের কোনও কথা তার মনে পড়ছে না। এতদিন তার চেতনা ছিল না। তাই এতদিন কোথায় কীভাবে ছিলেন তা কিছুই বলতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ থানার ওসি আবদুস সালাম বরিশালটাইমসকে আরও বলেন মেহেদী জানিয়েছে, ‘মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে সে নিজেকে সাভারের নবীনগর এলাকায় আবিষ্কার করেন। অজ্ঞাত পরিচয় লোকজন তাকে গাড়িতে সড়কের পাশে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে চেতনা ফিরলে সেখান থেকে সে অন্য গাড়িতে উঠে বরিশালের বাবুগঞ্জে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।’
গত বছরের ১ ডিসেম্বর রাতে বনানীর কাঁচাবাজার এলাকার নর্দান ক্যাফে থেকে খাবার খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর একসঙ্গে নিখোঁজ হয় চার তরুণ সাফায়েত, পাভেল, সুজন ও মেহেদী। তাদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সুজন কর্মরত ছিল বিজ্ঞাপনী সংস্থা আর নিখোঁজের আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর চাকরির ইন্টারভিউ দিতে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসে মেহেদী। তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে বনানী থানায় দু’টি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পুলিশের ধারণা- তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়েছে।”
শিরোনামবরিশালের খবর