৩ ঘণ্টা আগের আপডেট রাত ১২:৯ ; সোমবার ; ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

জীবনানন্দের বরিশাল

বরিশালটাইমস রিপোর্ট
৬:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৩

হাসান শাওন:: বাংলা সাহিত্যের নক্ষত্রতুল্য কবি জীবনানন্দ দাশের প্রয়াণ দিবস আজ। যার সৃষ্টি অনেককে অনেকভাবে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু আজ শুধু নিজের গল্প বলার পালা।

তখন নব্বইয়ের দশকের শুরু। আমরা ক্লাস ওয়ান, টুয়ে পড়ি। দাদাবাড়ি ও নানাবাড়ি বরিশাল হওয়ায় আমরা নিয়মিত যেতাম। শহরে ছিল সেজ চাচা ও সেজ খালার বাসা। সেজ খালার বাসা ছিল বগুড়া রোডে। সেখানেও থাকা হতো। ছোটবেলায় আব্বা বারবার বগুড়া রোড নিয়ে কথা বলতেন। কখনও রিকশায়। কখনও হাঁটতে হাঁটতে। সেখানে নাকি কবি জীবনানন্দ দাশের বাড়ি ছিল। কবি তখনও ভর করেননি। কিন্তু কবির মাকে চেনা হয়েছে। কুসুমকুমারী দাশের “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে? কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।” কবিতা আমাদের পাঠ্যবইয়ে ছিল।

কিন্তু কবি জীবনানন্দ দাশ জীবনে ভর করেন আরও পরে। তাকে ঘিরে বিস্ময় নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়। এর আগ পর্যন্ত বুঝতাম ‘‘সাইন্স’’ একটা আলাদা সাবজেক্ট। আর ‘‘বাংলা’’ আরেক। আর কবিতা তো আরও ভিন্ন। কিন্তু এই কবি সব গুলিয়ে দিলেন এক লাইনেই (“নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে”)

“ . . .
ফিরে এসো সুরঞ্জনা:
নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
…”

: আকাশলীনা, সাতটি তারার তিমির

বুঝতে পারি, চাঁদ পৃথিবীকে ঘিরে আবর্তনকারী এক উপগ্রহ। যার নিজের আলো নেই। আলো দেখি আমরা নক্ষত্রে। আমাদের সৌরজগতের কক্ষপথে নক্ষত্র হচ্ছে সূর্য। সূর্যের আলো চাঁদে পড়ে। আমরা পৃথিবী গ্রহবাসী একেই জোছনা বলি। মনে এমন বোধ জন্মায় যে, সবদিক খোলা রাখা দার্শনিকরাই কবি। সেই সঙ্গে এত এত মহাজাগতিক বিষয় এক লাইনে লিখতে পারা কবি “বরিশাইল্যা” জেনে গর্ব লাগে। বগুড়া রোডের জন্য তো আরও। একের পর এক হুমায়ূন আহমেদ পড়তে পড়তে দেখি উপন্যাসের নাম থেকে শুরু বহু কিছুতে দেখি এ কবির হাতছানি। হিমু বেনসন সিগারেট ধরাতে ধরাতে জীবনানন্দ দাশ আওড়ায়। আর মিসির আলি মানেই তো করোটিতে বিপন্ন বিস্ময়।

‘‘লীলাবতী’’ উপন্যাসের উপসর্গপত্রে হুমায়ূন আহমেদ তো লিখেই গেছেন,

“শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশ

কবি, আমি কখনো গদ্যকার হতে চাই নি। আমি আপনার মতো একজন হতে চেয়েছি।
হায়, এত প্রতিভা আমাকে দেয়া হয় নি! ”

হুমায়ূন আহমেদকে অনেকে সস্তা মনে করেন। সে তাদের ইচ্ছা। কারও মনে করবার স্বাধীনতায় কর্তৃত্ব ফলানোর কী? কিন্তু বাংলা সাহিত্যে ‘‘আধুনিক কবি’’ বলতে যাদের চেনানো হয়, তারা সবাই দাশবাবু দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। কথাশিল্পীদের রাস্তা একই। কেউই কবি জীবনানন্দ দাশকে উপেক্ষা করতে পারেননি।

উল্লেখ করতে পারি, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক থেকে এখনের দুর্দান্ত শাহাদুজ্জামান পর্যন্ত।

কীর্তনখোলা তীরের বরিশাল শহরের বগুড়া রোডের তৎকালীন সর্বানন্দ ভবনে এই জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৮৯৯ সালে। কবির জীবনের বড় একটি অংশ কেটেছে বরিশালে। আরেক পর্ব ভারতে। ১৯৩৫ সালেও জীবনানন্দ দাশ কলকাতা থেকে ফিরে আবার ব্রজমোহন কলেজে (বিএম) শিক্ষকতায় যোগ দেন। এর পরের বছর তার পুত্র সমরানন্দের জন্ম এই বরিশালে। যাতায়াত সে আমলে নৌপথে। চাঁদপুর ও খুলনার সঙ্গে ছিল কলকাতার স্টিমার যোগাযোগ। বরিশালের স্টিমার ঘাট থেকে কবি চাঁদপুর বা কখনও খুলনায় যেতেন। এরপরের গন্তব্য কলকাতা। নদী ঘেঁষা নিঝুম প্রকৃতি জীবনানন্দের দেখা হয়েছে এমন বহু নৌ-ভ্রমণে। তার শিল্প সাহিত্যের রসদ তাই হয়েছে। তার সৃষ্টির ধানসিঁড়ি কোনো কল্পিত নদী নয়। বরিশালের ঝালকাঠির গাবখান নদীর একটি শাখা আজকের মৃতপ্রায় ধানসিঁড়ি।

ব-দ্বীপ বাংলায় জনপদ মূলত গড়ে উঠেছে এই নদীর পলিতেই। নদী বাঁক নিলে বসতিও তার পথ ধরে। আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে প্রবাহ ছিল প্রায় তেরশত নদীর। সেগুলোয় সংযুক্ত খাল অগণন। অন্য বহু কিছুর মতো নদী ও জনপদ দাগ রাখে মন কল্পিত শিল্প-সাহিত্যে। জীবনানন্দ দাশের সৃষ্টি এর ব্যতিক্রম নয়।

জীবদ্দশায় বিবরবাসী কবিকে নিয়ে এখন বিশ্বজুড়ে আলোড়ন। তার কীর্তি অনুদিত হচ্ছে নানা ভাষায়। কিন্তু যে বরিশালের বগুড়া রোডের সর্বানন্দ ভবনে তার জন্ম সেই শহরে জীবনানন্দ কতটুকু বিরাজিত?

কয়েক মাস আগে ঘুরে তা দেখে এলাম। লঞ্চঘাটে কাউকে জিজ্ঞেস করলে চেনেন না। শহরে ঢুকতে ঢুকতে কোনো স্মৃতি দেখিনি তার। সিটি করপোরেশন বগুড়া রোডের নামকরণ করেছে ‘‘জীবনানন্দ দাশ সড়ক’’। ব্যস! দায় যেন খালাস। এত এত দোকানের মধ্যে খুব কমের সাইনবোর্ডেই নতুন এই নামকরণ দেখেছি। বরিশালের ব্রাহ্ম সমাজের ঐতিহ্যবাহী কবির বাড়িটি পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেনি এই রাষ্ট্র। পাশের ভবনে ‘‘জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি মিলনায়তন ও পাঠাগার’’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অধিকাংশ সময় তা থাকে বন্ধ।

জীবনানন্দের কবিতায় বাংলার প্রকৃতি মানে বরিশালেরই প্রকৃতি। এর ঝিঁঝিঁ ডাকা নির্জনতায় তিনি কবিতার ‘‘ক্যাম্প’’ ফেলেছেন। এ শহরের বিস্তৃত মাঠে তার কল্পনার মহীনের ঘোড়াগুলি চড়েছে। দূষণহীন মুক্ত বাতাস তাকে নক্ষত্রমুখী করেছে।

শুধুমাত্র জীবনানন্দ দাশকে ঘিরেই হতে পারে নতুন বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক। নদী জড়ানো এ ভূমিতে নৌ-পর্যটন নতুন মাত্রা পেতে পারে। কেবল নরেন্দ্র মোদি মত্ততায় নয়, সত্যিকারের বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক মৈত্রীর সেতু হতে পারে গর্বের এ জনপদ।

জীবনানন্দ ‘‘শুভ রাষ্ট্র’’ দেখে যেতে পারেননি। অগ্রন্থিত কবিতা ‘জীবন ভালোবেসে’ তে তাই লিখেছেন

“ . . .

জীবন ভালোবেসে হৃদয় বুঝেছে অনুপম
মূল্য দিয়ে আসছে চুপে মৃত্যুর সময়।”

আমরা মৃত্যু নয়, জীবনের পক্ষে। একই সঙ্গে কল্পিত হলেও এখনের পটভূমি মাফিক ‘‘শুভ রাষ্ট্র’’ চাই। তাই প্রত্যাশা পর্যটন গন্তব্য সুকেন্দ্রিভূত হোক জীবনানন্দ স্মৃতির প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশাল ঘিরে। দেখে যাক বিশ্ব আমাদের রূপসী বাংলা।’

ফোকাস, বরিশালের খবর

আপনার ত লিখুন :

 

ই বিের ও সা
ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: barishaltimes@gmail.com, bslhasib@gmail.com
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  বিস্ফোরক মামলায় কারাবন্দি বিএনপি নেতার মৃত্যু  আদালতে বিচারককে জুতা নিক্ষেপ করলেন নারী  ঋণ নিয়ে টমটম কিনছিলাম সেটিও নিলো চোরে  বাবুগঞ্জে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর জন্মদিনে কোরআনখানি ও দোয়া-মোনাজাত  ১ কেজির বেশি পেঁয়াজ কিনতে লাগবে অনুমতি  বরিশাল মহানগর বিএনপির দায়িত্ব পেলেন জিয়া সিকদার  বরগুনায় বিয়ের দাবিতে শিক্ষকের বাড়িতে অনশনে কলেজছাত্রী  বরিশালে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি: ১১ ব্যবসায়ীকে জরিমানা  পিরোজপুরের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার  পিরোজপুরের হাজারো সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরসহ মানুষদের নিয়ে সাংস্কৃতি প্রতিযোগিতা