দুই বিচারক হত্যায় জেএমবি নেতা আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার আগেই জেল ভেঙে তাকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল ভারতে গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ সংগঠনটির নেতা আনোয়ার হোসেন ফারুকের।
কিন্তু এর আগেই ফারুক গ্রেপ্তার হওয়ায় পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানিয়েছেন ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
এক দশক আগে ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যায় গত রোববার রাতে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আরিফের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আর কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গতমাসে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ফারুকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। ফারুককে ধরা হয় বনগাঁওয়ের বাগদা রোড থেকে।
২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর সকালে ঝালকাঠির জেলা জজ আদালতে যাওয়ার পথে বিচারকদের বহনকারী মাইক্রোবাসে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। নিহত হন বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ।
এই হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের ২৯ মে আরিফসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহম্মেদ।
সাতজনের মধ্যে ছয়জনের সাজা ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ কার্যকর হয়। এরা হলেন- শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, ইফতেখার হোসেন মামুন, খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুক, শায়খ রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি ও জামাতা আবদুল আউয়াল।
পলাতক আরিফকে ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০৮ সাল থেকে খুলনা জেলা কারাগারে থাকা আরিফ নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এ বছরের ২৮ অগাস্ট আপিলের রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনআইএর ওই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারের পর ফারুক জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতে আরিফের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার খবর পেয়ে জেল ভেঙ্গে তাকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল তার।
“সীমানা পেরিয়ে সড়কপথে তিন ঘণ্টা দূরের খুলনা জেলে হামলার জন্যই ফারুক পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও-বাগদা রোডের একটি বাড়িতে উঠেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল সুযোগ মতো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে যাওয়া।”
“তার পরিকল্পনা ছিল কয়েকটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে খুলনা জেলে হামলা চালিয়ে আরিফকে মুক্ত করার,” বলেন এই কর্মকর্তা।
ফারুক দুই বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে আসামি ছিনতাইয়ের ‘হোতা’ ফারুক হোসেন ওরফে জামাই ফারুক বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা করে জেএমবির শুরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
ত্রিশালে হামলার পর ফারুক ভারতে পালিয়ে জেএমবির জন্য কর্মী সংগ্রহ করতেন বলে দাবি এনআইএর। ভারতজুড়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায়ও তার জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ঝালকাঠির খবর, টাইমস স্পেশাল