ঝালকাঠী জেলা পুলিশের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, সম্মান ও অশেষ কৃতজ্ঞতা। ৪৪ বছর ধরে যে সমস্যার সমাধান হয়নি, ঝালকাঠী জেলা পুলিশ মাত্র ৯ দিনেই দিয়েছে তার সমাধান। সাহসী, দক্ষ , পেশাদার এবং ব্যতিক্রম ঝালকাঠি জেলা পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করে যাচ্ছে – একথা নির্দ্ধিধায় এবং অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য আমরা। কারন, ঝালকাঠী পুলিশ বাহিনীর হস্তক্ষেপে আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের ক্রয়সূত্রে পাওয়া অধিকার ….. সুদীর্ঘ ৪৪ বছর পরে।
ঘুষ দুর্নীতির কারনে একসময়ে অভিযুক্ত পুলিশ বাহিনীর প্রতি অনেকের মতোই আমারও ভ্রান্ত ধারণা ছিলো বেশ কিছুদিন আগেও। বাস্তবতার তিক্ত অভিজ্ঞতায় এবং তারই প্রেক্ষিতে ঝালকাঠী পুলিশ বাহিনীর তৎপরতায় দূর হয়ে গেল পুলিশ বাহিনী সংক্রান্ত সব ভ্রান্ত ধারণা। বিগত মার্চ মাসের মাঝামাঝি এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে জানলাম যে, জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান করে দেয় ঝালকাঠী জেলা পুলিশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ তারিখ আবেদনপত্র নিয়ে জমা দিলাম ঝালকাঠী পুলিশ সুপার মহোদয়ের বরাবরে।
অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সম্মানিত পুলিশ সুপার মো. জোবায়দুর রহমান সাহেব আমাদের সাথে কথা বললেন , আবেদন পত্রটি মনোযোগ সহকারে পড়লেন, টুকটাক কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন আমাদের এবং কিছুক্ষণ ভেবে নিলেন। অত:পর এডিশনাল এসপি এমএম. মাহমুদ হাসানের কাছে দায়িত্ব দিলেন আমাদের সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য।
ঝালকাঠী সার্কেল অফিসে এডিশনাল এস পি এমএম. মাহমুদ হাসানের বিপুল কর্মযজ্ঞে আমরা বিস্মিত হয়ে গেলাম। এত বিবিধ সমস্যার সমাধান যে পুলিশ করে থাকে আমাদের অনেকেরই তা জানা নেই। মাত্র কয়েক ঘন্টারমধ্যে যে সব সমস্যার সমাধান দেখলাম, তা হলো
১। মোবাইল চোর চক্রের সদস্য মামার চুরি করা মোবাইল নিয়ে স্কুলে পড়ুয়া ভাগ্নের মাস্টার্সে পড়ুয়া ছাত্রীকে ইভটিজিং সমস্যার সমাধান। অত:পর মোবাইল চোর চক্রকে ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় হাতেনাতে ধরা।
২। চুরি হয়ে যাওয়া মোটরসাইকেল সমস্যার সমাধান।
৩। মাদকসেবীদের সাধারণ জীবনে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ।
৪। বিবিধ পারিবারিক সমস্যার কাউন্সেলিং।
যেমন, ভাই-বোনের কিংবা ভাই-ভাইয়ের বিরোধ নিষ্পত্তি, ডিভোর্সের পর পাত্র পক্ষের কাছ থেকে দেনমোহরের টাকা আদায় করে পাত্রী পক্ষকে দেয়া, সম্পত্তির জন্য ছেলে কর্তৃক বাবাকে প্রহার এবং অপহরণের নাটকের সমাধান, প্রভৃতি ।
৫। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা। কিছুক্ষণ বাদেই তাঁকে ছুটতে দেখলাম স্কুলে পাঠদান কার্যক্রমে অংশগ্রহনের জন্য।
এডিশনাল এস পি এমএম. মাহমুদ হাসানের প্রত্যুৎপন্নমতিতায় এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা সত্যি বিস্মিত করে আমাদের। সার্কেল অফিসে সেবা নিতে আসা ঝালকাঠীর স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে জানতে পারি যে, ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারী “জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে” তিনি লাভ করেছেন প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক বা পিপিএম সেবাপদক।
সেবাই যে তাঁর ধর্ম। এই সেবাকর্মেও জন্য শুধু সাপ্তাহিক দিনগুলোতেই নয় শুক্রবার, শনিবারসহ সরকারী ছুটির দিনগুলোতেও নিরলস কাজ করে যান তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা। মাত্র দুই দিনের বৈঠকের পর এম.এম. মাহমুদ সিদ্ধান্ত দেন যে, আমাদের হিন্দু প্রতিবেশীরা যেহেতু ভুলক্রমে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে মন্দির তুলে ফেলেছে, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রোধ করার জন্য আমাদেরকে বেশ খানিকটা ছাড় দিয়ে হলেও জায়গাটা ওদের কাছে বিক্রি করে দিতে।
মারাত্মক স্পর্শকাতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো জাতীয় ইস্যুকে তিনি বিচক্ষণতার সাথে সামাল দিলেন। তিনি পরামর্শ দিলেন যে, আমাদের অবশিষ্ট সম্পত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব বাউন্ডারী দেয়াল তুলে সম্পত্তিটা রক্ষা করার জন্য। অবশেষে ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ তারিখ আমরা বাউন্ডারী দেয়াল তোলার কাজ সম্পন্ন করে যার যার কর্মস্থলে ফিরলাম।
উল্লেখ্য যে, আমাদের ক্রয়সূত্রের জায়গা হিন্দু প্রতিবেশীকে হস্তান্তরের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ যেমন, বায়না, রেজিস্ট্রি এবং আর্থিক লেনদেন পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমেই আগামী ১ মাস সময়কালের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং ঝালকাঠী পুলিশ প্রশাসন এই ব্যাপারে তাদের ভূমিকা রাখবেন। অন্তরের অন্তস্থল থেকে শুভকামনা রইলো ঝালকাঠী জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যের প্রতি, যাদের নিরলস পরিশ্রমে আর কর্মতৎপরতায় ঝালকাঠীতে প্রতিনিয়ত অপরাধ দমন সহ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার সমাধান হয়ে আসছে।
এর সুফল পাচ্ছে ঝালকাঠীবাসী এবং আমরা যারা ঝালকাঠীর অধিবাসী হয়েও কর্মসূত্রে অন্যত্র বসবাসকারী করছি তারা সবাই। অর্থাৎ প্রতিটি ঝালকাঠীবাসী। আমরা ঝালকাঠী জেলা পুলিশকে নিয়ে গর্বিত। সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ঝালকাঠী জেলা পুলিশ বাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে সম্মানিত পুলিশ সুপার মো: জোবায়েদুর রহমান মহোদয়ের যোগ্য নেতৃত্বে যিনি গরীব ও অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল।
এমন যোগ্য নেতৃত্বে আমাদের মনে নতুন করে জ্বলে ওঠে আশার আলো, হৃদয়ে বাংলাদেশ ধারণ করে মনের গভীরে দৃঢ় প্রত্যয় জেগে ওঠে, “আমরা করবো জয় একদিন…..।”
জয় বাংলা !! জয় বঙ্গবন্ধু !!!
জয় ঝালকাঠী জেলা পুলিশ !!!!