বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৪:১১ অপরাহ্ণ, ১১ মে ২০১৬
ঝালকাটিতে ১০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বছরের পর বছর চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত ঘোষিত অনেক ভবনে ক্লাস নিচ্ছেন। আবার অনেক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের সম্মিলিত চেষ্টায় জীবনের ঝুঁকি এ্যাঁড়াতে বিদ্যালয়ের সম্মুখস্থ মাঠের মধ্যে বাঁশের খুটি ও পলিথিন দিয়ে সাইমিনা টানিয়ে নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে এসব ঝুকপূর্ন ঘোষিত বিদ্যালয় ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালালে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে বলে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র আশংকা প্রকাশ করেছে।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে সূত্রে জানাগেছে, জেলার ৫৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১শ ৭টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বারবার লিখিতপত্র প্রেরন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ২৩টি, রাজাপুর উপজেলায় ১২টি, কাঠালিয়া উপজেলায় ২৫ ও নলছিটিতে ৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে আবার বেশ কযেকটি ভবনকে সম্পূর্ন পরিত্যক্ত বলে চিহ্নিত করেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে। বিভিন্ন স্থান ফাটল ও পাকা মেঝে দেবে গিয়ে পানি জমছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে চুইয়ে পানি ডুকে শ্রেনী কক্ষে পরছে। গত বছর ৩ আগস্ট উপজেলা প্রকৌশলী পরিদর্শন করে এ ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষকরা বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে পলিথিন দিয়ে নিচে শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নিচ্ছে।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কনক লতা জানায়, বিদ্যালয়টির দুরাবস্থার কথা একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভবন সংস্কারের কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের খোলা মাঠে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। তবে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে ভীশন দুশ্চিন্তায় আছেন।
নলছিটি উপজেলার পুরান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনেরও প্রায় একই অবস্থা। এ ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনে ছাদের বিভিন্ন স্থান খসে খসে পড়ায় ৩টি রুম ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রথম তলায় একটি কক্ষ ও লাইব্রেরিতেই চলছে ৩ শত শিক্ষার্থীর পাঠদান। তবে ইদানিং ভয়ে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। আর স্থানীয় পশ্চিম ফুলহার গ্রামের জসিম উদ্দীন সহ একাধিক এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থী অভিভাবক বলেন, সন্তানদের লেখাপড়া করানোর খুবই জরুরী তবে জীবনকে ঝুঁকিমুক্ত রাখাও কম জরুরী নয় তাই তারা সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে গিয়ে দুশ্চিন্তা ও আশংকায় থাকেন ।
রাজাপুর উপজেলার পূর্ব ফুলহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির বিভিন্ন অংশে ফাটল ও পলেস্তার খসে পড়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে । বর্তমানে একটি জরাজীর্ণ টিনসেড ঘরে কোনোভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। আর গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মৃদু ভূমিকম্পে কাঁঠালিয়া উপজেলার ছিটকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার কক্ষবিশিষ্ট ভবনের বেশ কয়েকটি স্থানে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় এই ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অতিরিক্ত শ্রেণি কক্ষের অভাবে জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে দুই শিফটে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করলেও বসার স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদার জানায়, জেলার ১০৭টি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সার্ভে ও ছবি সহ গত ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীর নির্দিষ্ট অনলাইনে এন্টি করার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। অথচ প্রায় ৮৮দিন অতিবাহিত হলেও তাদের গাফিলাতি ও দীর্ঘসূত্রিতার কারনে অদ্যপর্যন্ত এ সংক্রান্ত ডাটা বা তথ্য-উপাত্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. আরিফউদ্দৌলা বলেন, শিক্ষা অফিস থেকে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে ও চূড়ান্ত তালিকার কাজ চলছে।