বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১:০৯ অপরাহ্ণ, ০৭ জুন ২০১৬
ঝালকাঠি: পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুমারখালী এলাকায় মরা নদী দখল শেষ করেছে প্রভাবশালী দুই আ’লীগ নেতা ও তাদের মদদপুষ্ট বাহিনীর ক্যাডারা। বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষে বরিশালের ও নলছিটির এ দুই নেতা ব্যক্তিগত মৎস্য খামারে রুপান্তরের চক্রান্ত এক প্রকার চুড়ান্ত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় মৎস্যজীবী ও কৃষকদের ক্ষতি সাধন করে উক্ত আ’লীগ নেতাদ্বয় বিশাল জলাশয়টি দখল করে ব্যক্তিগত খামার বানানোর কূটকৌশল নিয়েছে। তাদের সার্থসিদ্ধির জন্য হঠাৎ জন্মনেয়া ‘অনুরাগ মৎস্য সমবায় সমিতি’ নামে একটি সমিতির সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে। আর গত ৬ জুন সোমবার প্রকৃত মৎস্যজীবী ও কৃষকদের পেটে লাথি দিয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করিয়ে নদীতে ঝালকাঠি-নলছিটির মাটি-মানুষের নেতা শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমুকে ইমেজকে ক্ষূন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন সচেতন ব্যক্তিরা জানায়- নলছিটির এই সাইনবোর্ডধারী আ’লীগ নেতা রুনু চৌধুরী তার অবৈধ কর্মকান্ডকে বৈধতা দিতে শিল্পমন্ত্রীর ঘনিষ্ট বরিশালের মোস্তাক হোসেনের সাথে আতাঁত গড়ে তোলে। তারা দুজন ব্যক্তিগত স্বার্থহাসিলে লক্ষে হঠাৎ করে‘অনুরাগ মৎস্য সমবায় সমিতি’র জন্ম দিয়ে মরা নদীতে মাছের পোনা অবমুক্তকরন কর্মসূচী আয়োজন করেছে। এদুই নেতা মৃত নদীটি দখল করে নেয়ায় নলছিটি দপদপিয়া এলাকার ৩শতাধিক জেলে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর এ জলাশয় ব্যবহার করতে না পারলে ফরাক্কা বাধের ন্যায় স্থানীয় কৃষক সহ কৃষিজীবীদের ফসল উৎপাদনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে অমানিষার অন্ধকারে নামিয়ে আনবে বলে বেশ কয়েকজন কৃষক ও সচেতন অধিবাসী জানায়।
স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেন, গত ১৩ মে দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বাঁধ নির্মান এলাকা পরিদর্শন করে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ উপক্ষো করে দখলদার দুই আ’লীগ নেতা তাদের লোকজন দিয়ে বাঁধ নির্মান সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তারা ‘অনুরাগ মৎস্য সমবায় সমিতি’ নামে একটি নাম সর্বস্ব সংগঠনের ব্যানারে মাছ চাষের প্রক্রিয়া শুরু করেন। সর্বশেষ গত ৬জুন সোমবার মোস্তাক হোসেন ও রুনু চৌধুরী শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে প্রধান অতিথি করে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের দখলকৃত মরা নদীতে মাছের পোনা অবমুক্ত করায়।
প্রায় ৪০ বছর পূর্বে সুগন্ধা নদীর কুমারখালী এলাকায় চর জেগে ১শ ২০ একর এলাকায় লঞ্চ বন্ধ হয়ে যায়। তবে পানি সচল থাকায় নদীর মরা অংশে স্থানীয় ৩শতাধিক পরিবার মাছ শিকার করে জীবীকা নির্বাহ করতো। গত ১৬ এপ্রিল আ’লীগ নেতা মোস্তাক হোসেনের শেল্টারে স্থানীয় রুনু চৌধুরী, তার ছেলে আসিফ চৌধুরী, রাজিব চৌধুরীর নেতৃত্বে ভাড়াটে লোকজন নিয়ে কুমারখালী মরা নদীতে জোয়ার ভাটার পানি প্রবেশ পথে জোরপূর্বক বাঁধ নির্মান শুরু করে। অবৈধ এ দখলের প্রতিবাদে দলমত নির্বিশেষে স্থানীয়রা মিছিল-মিটিং, মানব বন্ধন করে সরকার ও প্রশাসনের কাছে দখল ও বাধ নির্মান বন্ধের দাবী করলেও অস্ত্র ও ক্ষমতার বলে তারা ১ জুন বাঁধ নির্মানের শেষ করে।
কুমারখালীর জেলে জব্বার সিকদার জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন চলে যাওয়ার পরপরই মোস্তাক হোসেন ও রুনু চৌধুরী নির্দেশে তাঁর ছেলেরা ভাড়াটে অস্ত্রধারী লোকজন নিয়ে বাঁধটি সম্পূর্ণ নির্মান করে। সরকরী নদীতে নামলেই জেলেদের মারধরের হুমকি দেওয়ায় স্থানীয় প্রায় ৩শতাধিক জেলে পরিবার না খেয়ে মরবে। অথচ অবৈধ দখলকারীরা অপকর্মের বৈধতা দিতে শিল্পমন্ত্রীকে ভুলবুজিয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করিয়েছে। দুই আলীগ নেতার লাভবান জন্য ৩শতাধিক জেলের সর্বনাশ ও স্থানীয় কৃষকদের সেচসুবিধা ব্যহত করা ন্যয়সঙ্গত নয়। শিল্পমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন জলাশয় উম্মুক্ত করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের পথ উম্মুক্ত করে দেয়া হোক।
নলছিটির আ’লীগ নেতা দাবীদার অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী জানায়, আমাদের কাছে কাগজপত্র রয়েছে। আমরা এখানে বাঁধ দিয়ে চিংড়ির খামার করবো। এছাড়াও আমরা অনুরাগ মৎস্য সমবায় সমিতির মাধ্যমে আরো কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তাই ৬ জুন আমরা শিল্পমন্ত্রীর হাত দিয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করিয়েছি।
নলছিটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, স্থানীয় অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী ব্যক্তিগত ভাবে সেখানে মাছের পোনা ছাড়বেন বলে শুনেছি। এটা মৎস্য বিভাগের কোন অনুষ্ঠান নয়।
এ ব্যাপারে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বলেন, আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, বাঁধ নির্মানের কাজ চলছে। আমি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও যারা বাঁধ নির্মান করেছে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বাঁধ নির্মানের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। শুনেছি এরপরও কাজ বন্ধ করা হয়নি। আমি বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।