ভোলা: চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে গত বছর পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনায় বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রোগীদের চিকিৎসা চলছে ভবনের বারান্দায়। ঝুঁকি নিয়ে নিচতলায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৬২ সালে একটি ভবনে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু হয়। ভবনের সংখ্যা না বাড়লেও ২০০৩ সালে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। দোতলা ভবনটির ছোটখাটো সংস্কার ছাড়া তেমন উন্নয়ন করা হয়নি। পরিত্যক্ত ঘোষণার পর নিচতলায় চলছে প্রশাসনিক সব কর্মকাণ্ড। কক্ষগুলোয় জায়গা কম থাকায় অনেক রোগীর জায়গা হয়েছে বারান্দা আর সিঁড়ির নিচে। ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় পলেস্তারা খসে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বারান্দা আর সিঁড়ির নিচে বিভিন্ন বয়সী রোগীরা বিছানা পেতে শুয়ে-বসে আছে। চর মানিকা থেকে আসা গর্ভবতী স্বপ্না বেগম জানান, মহিলা ওয়ার্ডে ছাদের পলেস্তারা খসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। মাহিনুর বেগম বলেন, ‘আমরা বেড পাইনি, তাই বাধ্য হয়ে বারান্দায় বিছানা পেতে নিয়েছি।’
নারী-পুরুষ ছাড়াও শিশু ও নবজাতকরাও আছে যত্রতত্র শয্যা পেতে থাকা রোগীর কাতারে। সেখানে নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। বৃষ্টি হলে ভিজে যাচ্ছে রোগীর বিছানাপত্র। আবার গরমেও ভুগতে হচ্ছে তাদের। ভবনটির ছাদ আর বিমের ফাটল দিন দিন বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ জায়গা দিয়েই সিলিংয়ের ছাদ ভেঙে রড বেরিয়ে পড়েছে। পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয়েছে রোগী, দর্শনার্থী আর কর্মচারীরা।
চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. মাহাবুব কবির জানান, চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সাত লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য একটি মাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র। শুধু ভবন নয়, জনবল সংকটও প্রকট। নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া ও সুইপারের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন। একজন চিকিত্সকের অভাবে এক বছরের বেশি সময় ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সিজারিয়ান বন্ধ রয়েছে। এমনকি রোগী অনুযায়ী সরকারি ওষুধ সরবরাহ নেই বললেই চলে।
সহকারী সার্জন সামসুল আরেফীন রানা জানান, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন। দৈনিক গড়ে ৮০ জন রোগী ভর্তি অবস্থায় হাসপাতালে অবস্থান করছেন। রোগী, দর্শনার্থী আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আতঙ্ক নিয়ে ভবনে অবস্থান করতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজ উদ্দিন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য ১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
ভোলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করে নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে তা সময়সাপেক্ষ।