বরিশাল: নগরীর বিএম কলেজের মূল ক্যাম্পাসের বাইরে শতাধিক বছরের পুরনো সুরেন্দ্র ভবন ও নৃপেন্দ্র ভবন ছাত্রাবাস তিন বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেখানে বসবাস নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু ভূসম্পত্তির মালিকানা নিয়ে মামলা থাকায় খালি ভবন প্রতিপক্ষরা দখল করে নিতে পারে- এমন আশঙ্কায় ৮০ শিক্ষার্থী নিয়ে এখনও ছাত্রাবাস দুটি চালু রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই দুটি ভবনের মতো ৩৪টি ভবন তিন বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)।
কিন্তু অপসারণ না করায় নানা অজুহাতে এখনও অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাস করছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিসিসি কর্তৃপক্ষ ভবনগুলোর গায়ে ঝুঁকিপূর্ণ লেখা সাইনবোর্ড লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ করায় এমনটা হয়েছে। তবে মেয়র আহসান হাবিব কামাল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ভবনগুলো অপসারণ করতে হলে কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। এ কারণে এগুলো অপসারণে বিলম্ব হচ্ছে।
বিসিসির তালিকা অনুযায়ী, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হলো- কাউনিয়া প্রধান সড়কের সিরাজ মহল, কাউনিয়া জানুকি সিংহ রোডের মতি লস্করের বাড়ি, পূর্ব বগুড়া রোডের রবীন্দ্রনাথ সেনের ভবন, আগরপুর রোডের মনু মিয়ার বাড়ি, কাঠপট্টি সড়কের সাধনা ঔষধালয় ভবন, সৈয়দ জুম্মান ব্রাদার্স, অমৃত ভবন, আহম্মদ ক্লথ স্টোর, চন্দ্রিকা ব্রাদার্স, মিল্লাত ফার্মেসি, সার্কুলার রোডের সৈয়দ মনসুর আহমেদের ভবন, ঈশ্বর বসু রোডের সৈয়দ মঞ্জিল, হাসপাতাল রোডের মান্নান মৃধার ভবন, কালুশাহ সড়কের জালাল আহমেদের ভবন, নবগ্রাম রোডে অবস্থিত হাতেম আলী কলেজের ছাত্রাবাস ও বিজ্ঞান ভবন, মেডিকেল কলেজ লেনের শহীদ আলমগীর সড়কের ক্ষণিকা ভবন, বিএম কলেজের সুরেন্দ্র ভবন ছাত্রাবাস, বগুড়া রোডের সালাম চেয়ারম্যানের পুরনো ভবন, হাজি ইসরাইলের বিল্ডিং, নগর ভবনের পেছনের সাবেক হাজতখানা, সদর উপজেলা পরিষদের পুরনো ভবন, সদর রোডের সৈয়দ ভবন, কাউনিয়া প্রধান সড়কের বেণী লাল গুহের বাড়ি ও রূপাতলীর নলছিটি প্লাজা।
বিসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের নিয়ম না মেনে নির্মাণ এবং দীর্ঘ বছরের পুরনো হওয়ায় ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১৩ সালে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিকদের চিঠি ও ভবনের গায়ে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তবে জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণ করা যায়নি। এরই মধ্যে অনেক মালিক তাদের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করায় এবং একাধিক মালিকের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ভবনগুলো অপসারণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিসিসির প্রধান প্রকৌশলী খান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি বিসিসির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত ৩৪টি ভবনের বেশির ভাগ মানুষ বসবাসের সত্যতা পেয়েছেন। করপোরেশনের জনবল ও যন্ত্রপাতি না থাকায় ভবনগুলো অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। তবে এসব ভবনে বাস না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আবারও নোটিশ দেওয়া হবে।
বরিশাল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিনিয়র পরিকল্পনাবিদ মো. আসাদুজ্জামান জানান, বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। যেহেতু ভবন মালিকরা সবাই মধ্যম আয়ের মানুষ, তাই তাদের আর্থিক সঙ্গতি বিবেচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিসিসি চাইছে, মালিকরা স্বেচ্ছায় তাদের নিজ নিজ ভবন ভেঙে ফেলুক। অনেক মালিক আপত্তি তুলেছেন, ষড়যন্ত্র করে তাদের বাড়ির নাম ঝুঁকিপূর্ণের তলিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে নতুন করে সার্ভে করা হচ্ছে।