বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০১:১৮ অপরাহ্ণ, ২৫ জুলাই ২০১৬
ভোলা : বর্ষাকালে মেঘনা নদী উত্তাল থাকায় প্রায়ই নৌকাডুবি ঘটে। এ কারণে নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতি বছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার মেঘনা নদীকে ডেঞ্জারজোন হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়।
এ জোনে ছোট ছোট এমএল সাইজের সব ধরনের লঞ্চ ও মাছ ধরার ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা কেউ মানে না। ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে যাত্রীরা।
এসব ট্রলারে অবাধে যাত্রী বহন করার কারণে ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে উপকূলের নৌপথ। ভোলা থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ।
২০০০ সালের দিকে রামগতি থেকে ভোলা আসার পথে উত্তাল মেঘনায় ডুবে ছয় শতাধিক যাত্রী নিহত হয়। ওই বছরই বরিশাল-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে মেঘনা নদীতে উপকূল এক্সপ্রেস ডুবে গেলে মারা যায় তিন শতাধিক যাত্রী। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজারো যাত্রী প্রতিদিন ট্রলারে চড়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছে। আর প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুটে নিরাপদ নৌযান হিসেবে সি-ট্রাক ও বড় লঞ্চ চলাচল করলেও ছোট ছোট মাছ ধরার ট্রলার করে যাত্রীরা উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন। এতে নৌ-দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন যাত্রীরা।
জানা যায়, জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিন সি-ট্রাকসহ পাঁচটি বড় নৌযান নিয়মিত চলাচল করছে। কিন্তু সি-ট্রাক ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও খামখেয়ালীপনার কারণে প্রয়োজনের তাগিদে বিকল্প ব্যবস্থায় যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন ছোট ছোট মাছ ধরার ট্রলারে।
অনেক সময় যাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে ট্রলারে চড়তে বাধ্য করা হয়। ভোলায় ফারুক বেপারী ও লক্ষ্মীপুরে তারই ঘনিষ্ঠ আলমগীর মেম্বার এ রুটে ট্রলার পারাপার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা দুজন সম্পর্কে শ্বশুর-জামাই।
অভিযোগ রয়েছে, সি-ট্রাক ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগসাজসে স্থানীয় প্রভাবশালী ঘাট ইজারাদার ফারুক বেপারী এ রুটে ছোট ছোট মাছ ধরার ট্রলারে করে যাত্রী নিয়ে উত্তাল মেঘনা পারি দিচ্ছেন। আর অবৈধভাবে ট্রলারে করে যাত্রী পারাপারের জন্য ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়মিত মাসোহারা দিচ্ছেন ট্রলার মালিক ও ঘাট ইজারাদার। অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ আবুল বাশার।
গতকাল সকালে ওই ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৭-৮টি ছোট ছোট মাছ ধরার ট্রলার ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, ওই সব ট্রলারে করেই যাত্রী নিয়ে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীহাটের উদ্দেশে উত্তাল মেঘনা পারি দিচ্ছে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সি-ট্রাক খিজির-৫ যাত্রীবোঝাই করে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীরহাটের উদ্দেশে ভোলার ইলিশাঘাট ছেড়ে যায়। সি-ট্রাকটি ঘাট ছেড়ে যাওয়ার পরপরই একটি মাছ ধরার ছোট ট্রলার থেকে এক জেলে তার ট্রলারে চড়ার জন্য যাত্রীদের ডাকছেন।
আলমগীর নামের ওই জেলে বলেন, ‘প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাটের উদ্দেশে মেঘনা পারি দিচ্ছেন। প্রতি ট্রলারে ৪০-৫০ জন করে যাত্রী বহন করছে। ট্রলার মালিক ও ঘাট ইজারাদার ফারুক বেপারী প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছেন বলে জানান আলমগীর।
ফারুকের পক্ষে রতন পাটওয়ারী ঘাটের টোল আদায় করেন। রতন পাটওয়ারী বলেন, ‘প্রতি ট্রলারের কাছ থেকে তিনি ৩৮ টাকা করে ঘাটের টোল আদায় করছেন।
এ সময় ঘাটে কথা হয় ট্রলার যাত্রী আবুল কালামের সঙ্গে। তার বাড়ি চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাটে। তিনি যাবেন লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীহাট। কালাম বলেন, ‘ট্রলারের লোকজন তাকে জানান, এ ঘাট থেকে এখন আর কোন লঞ্চ কিংবা সি-ট্রাক চলাচল করবে না। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে করে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে লক্ষ্মীপুরে যেতে হচ্ছে।’
চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাটের যাত্রী বিল্লাল বলেন, ‘আমি ঘাটে আসার আগেই এ রুটে যাতায়াতকারী লঞ্চ ঘাট ছেড়ে চলে যায়।’ ট্রলার মালিকরা জানায়, ট্রলার ছাড়া আর কোনো নৌযান এ রুটে চলাচল করবে না। তাই বাধ্য হয়ে ট্রলারে করে যেতে হবে। অথচ প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ রুটে সি-ট্রাক ও বড় লঞ্চসহ পাঁচটি নৌ যান চলাচল করছে।
এদিকে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটে উপস্থিত পুলিশের কনস্টেবল আলাউদ্দিন বলেন, এ ঘাট থেকে কোন যাত্রীবাহী ট্রলার লক্ষ্মীপুর যেতে আমরা দেখিনি।
ভোলা জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা মো. নাসিম জানান, নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতি বছর ভোলার মেঘনা নদীকে ডেঞ্জারজোন হিসেবে চিহ্ণিত করে ছোট এমএল সাইজের লঞ্চ ও মাছ ধরার ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কিন্তু ভোলার ফারুক বেপারী বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে খেয়া পারাপারের একটি ইজারা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ রুটে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনায় ট্রলার পারাপার করছে। এ ব্যাপারে তিনিও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের পর ওই রুটে বেশ কয়েক দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়েছিল। তখন কোনো অবৈধ ট্রলার চলাচল করেনি। কিন্তু জেলা প্রশাসনে ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তুলে আনা হয়। এখন ওই রুটে আবার ট্রলার চলাচল করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’