ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলে অবৈধ ৮শ অটোরিকশা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: মানিকগঞ্জ শহরে বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা ৭০০। এর পাশাপাশি চলছে নিবন্ধনহীন ৮০০ অটোরিকশা। ফলে দিন দিন শহরে বাড়ছে যানজট। চালকরা জানান, ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলছে এসব অবৈধ অটোরিকশা।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার নিবন্ধন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরে চলাচলের জন্য পৌরসভা নিবন্ধন দিয়েছে ৭০০ অটোরিকশা। প্রতিবছর নিবন্ধন ফি ৭ হাজার টাকা।
পৌরসভার অনুমোদিত প্রতিটি অটোরিকশার পেছনে এক বর্গফুট মাপের স্টিকারে নিবন্ধন নম্বর ঝোলানো বাধ্যতামূলক। নিয়ম অনুযায়ী পৌর এলাকায় নিবন্ধন ছাড়া কোনো যান চলাচল করতে পারবে না।
নিবন্ধিত অটোরিকশার চালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় হাজার অটোরিকশা শহরে চলাচল করছে। অর্থাৎ বৈধ রিকশার চেয়ে অনিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বৈধ রিকশার চালক ও মালিক জানান, প্রতি দিন ১০০ টাকা হারে মাসে তিন হাজার টাকা ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে অবৈধ রিকশা চলাচল করছে শহরে।
মানিকগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল প্রায় সবার নামে ‘মৌখিক ছাড়পত্রে’ ১০ থেকে ২০টি করে অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করে।
এ ছাড়া প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, পরিবহন শ্রমিক নেতাদের নামেও কিছু অবৈধ অটোরিকশা রয়েছে। কয়েকটি অনিবন্ধিত রিকশাচালক জানান, পৌরসভার নিবন্ধন না থাকায় রাস্তায় গাড়ি নামালেই ট্রাফিক পুলিশ ধরে। এর পর নিয়ে যায় বালিকা বিদ্যালয় সড়কে ট্রাফিক পুলিশের ডাম্পিং স্টেশনে।
সেখানে মাসোহারার বিষয়টি ফায়সালা হয়। আর চালকরা রাজি না হলে ডাম্পিং স্টেশনে রিকশা আটকে রেখে মামলা দেওয়া হয়। তারা জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দৈনিক ১০০ টাকা হারে মাসিক কিস্তিতে ফায়সালা হয়ে যায়।
যে কোনো একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা কিংবা কনস্টেবলের নামে মৌখিক ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরে সেই কর্মকর্তা কিংবা কনস্টেবলকে মাসে মাসে টাকা পরিশোধ করতে হয়।
রাস্তায় কোনো ট্রাফিক আটকালে সেই কর্মকর্তা কিংবা কনস্টেবলের সঙ্গে তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ছাড় পেতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিবন্ধনহীন রিকশার চালক বলেন, পৌরসভায় রেজিস্ট্রেশন করতে বছরে সাত হাজার টাকা দিতে হয়।
আর আমরা যেহেতু পৌরসভার নিবন্ধন পাচ্ছি না, তাই কয়েকগুণ বেশি টাকায় ট্রাফিক পুলিশের মৌখিক ছাড়পত্র নিচ্ছি। কাজ-কামের বিকল্প ব্যবস্থা করতে না পারায় বাধ্য হয়ে অটোরিকশা চালাই।
মানিকগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক কেএম মিরাজ উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জেলা ট্রাফিক বিভাগে সাতজন পরিদর্শক, ছয়জন সার্জেন্ট এবং ২৯ জন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করছেন। অনিবন্ধিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক মো. সাইদুর রহমানও নিবন্ধনের চেয়ে বেশি অনিবন্ধিত রিকশা চলাচলের কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘জনবলের অভাবে পৌরসভা থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে দুএক দিনের মধ্যে অভিযান চালানো হবে।’ ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতায় অনিবন্ধিত অটোরিকশা চলাচল করছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, কারো না কারো সহযোগিতা তো রয়েছেই।
দেশের খবর