১ ঘণ্টা আগের আপডেট রাত ১১:২ ; শনিবার ; সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

তিনি কেন্দ্রীয় নেতা, তবুও বরিশাল নিয়ে তার এত মাতামাতি কেন?

বরিশালটাইমস রিপোর্ট
৯:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের বিরুদ্ধে আবারও একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযোগ তুলেছে দলের একটি বৃহৎ অংশ। বরিশালের সাংগঠনিক বিষয়ে ভুমিকা রাখতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া সত্বেও বিভিন্ন কমিটি গঠন এবং দলীয় অনুষ্ঠানে নিজের তৈরি তালিকা অনুসারে অতিথি করা নিয়ে দলের ভেতরকার মতবিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। সরোয়ার বিরোধীরা এখন এককাতারে সামিল হয়ে কৌশলী পদক্ষেপ রেখে তাকে প্রতিহত করার পরিকল্পনার খবর পাওয়া গেছে। কৃষকদলের সভা এবং ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সরোয়ার ভুমিকা রাখতে গিয়ে উভয় সংগঠনের অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে গেছে। এসময় ছাত্রদল বহুভাগে বিভক্ত এবং মূলদলে একই চিত্রে উত্তাপের আভা সবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। গত দু’দিন ধরে বিএনপির অভ্যন্তরণী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে মাঠে গড়ালে সমূহ সংঘাত দেখা দিলে শীর্ষ সারির নেতৃবৃন্দ কেউই কোন অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। তবে পুলিশ সতর্ক থাকায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সুযোগ তৈরি হতে দেয়নি।

বিএনপি ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়- বরিশালে সরোয়ার ক্ষমতা বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দলের মধ্যে বিভাজনের রেখা তৈরি হয়। গত মেয়র ও সাংসদ নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী হিসেবে সরোয়ার একা থাকলেও শীর্ষ সারির কাউকে কাছে পায়নি। সম্প্রতি সেই বিরোধ জটিল আকার ধারণ করে কৃষকদল পুর্ণজীবিত করা নিয়ে। স্থানীয়ভাবে এই অঙ্গ সংগঠনকে গতিশীল করতে জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন উত্তরের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের তৎপরতায় কেন্দ্র সায় দিয়ে একটি দিকনির্দেশনা বাতলে দেয়। সে অনুযায়ী সাবেক ছাত্রনেতা মহসিন ইসলামকে আহবায়ক এবং সফিউল ইসলামকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করলে জেলা বিএনপির এক পক্ষ বিপেক্ষ অবস্থান নেয়। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম প্রকাশ্যে ভুমিকা রেখে ওই আহবায়ক কমিটির বৈধতার প্রশ্ন তোলেন। গত সপ্তাহে কৃষকদলের উপজেলাসমূহের কমিটি এবং কীভাবে সম্মেলন সফল করা যায় সে বিষয়ে বৈঠকের কথা ছিল। খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শিল্পপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু ঝালকাঠি-পিরোজপুর সাংগঠনিক বরিশালের ওই বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়- বরিশালে কৃষকদলের কমিটি গঠন সংক্রান্ত সার্বিক দায়িত্ব দেওয়া হয় আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে। কিন্তু বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতার প্রস্তুতিকল্পে গোলযোগের শঙ্কা দেখা দিলে কেন্দ্রীয় ওই নেতা বরিশালে না এসে ঢাকায় ফিরে যান। সর্বশেষ মঙ্গলবার বরিশাল প্রেসক্লাবে আহবায়ক কমিটি সম্মেলন প্রস্তুতির বিষয়ে নতুন করে বৈঠকের ডাক দেয়। জেলা কার্যালয় ছেড়ে কেন প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠানস্থ বেঁচে নেওয়া হল তা থেকেই অনুমান করা গেছে দলীয় বিভেদের কারণে কৃষকদল নিয়ে উদ্যোগীরা দলীয় কার্যালয়ে নিরাপদ মনে করেনি। তাদের ভাষায়- জেলা কার্যালয় মূলত মজিবর সরোয়ার প্রভাবিত অংশের দখলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়- প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সেখানে সরোয়ারপন্থী ছাত্র-যুবদলের নেতারা মারমুখি অবস্থান নিয়ে অনুষ্ঠানের অতিথি এবায়দুল হক চাঁন ও মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদকে প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেয়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন অতিথি সেখানে উপস্থিত হয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় পরিস্থিতির মুখে পড়ে স্থান ত্যাগ করেন। এই ঘটনার রেশ পড়ে বুধবার ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিকে ঘিরে। সকাল থেকেই জেলা বিএনপি কার্যালয় সম্মুখে দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় যত বাড়ছিল, উত্তেজনার উত্তাপও ততটা আঁচ করা যাচ্ছিল। পরিস্থিতি অনুধাবনে পুলিশ কার্যালয় সম্মুখে অবস্থান নিরাপত্তার প্রাচীর গড়ে তোলে।

দলীয় একটি সূত্র জানায়- ছাত্রদলের জেলা ও মহানগর আয়োজনে অতিথি করা নিয়ে এই সংগঠনের মধ্যে সকাল থেকেই বিভক্তি সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বুধবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে জেলা ছাত্রদল তাদের অনুষ্ঠানে দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে প্রধান অতিথি ও এবায়দুল হক চাঁনকে বিশেষ অতিথি করা নিয়ে ওই ছাত্র সংগঠন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জেলা ছাত্রনেতা মাহফুজ আলম মিঠু অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কাকে করা যায় সে বিষয়ে মজিবর রহমান সরোয়ারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকেই প্রাধান্য দেন। এই ছাত্রনেতা সরোয়ারের অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত। তাদের দাবি- কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে সরোয়ারকে প্রধান অতিথির তালিকায় রাখা হয়। কিন্তু জেলা ছাত্রদলের অপর একটি অংশ এর বিরোধীতা করে বলছে- নিয়ম অনুসারে জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁনকে প্রধান অতিথি না করে সরোয়ার নিজের ক্ষমতা জাহির করতে চেয়েছেন। সকালের পরিস্থিতি আরও নাজুক। মহানগর ছাত্রদল কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মিছিল-শ্লোগানে সীমাবদ্ধ ছিল।

প্রথমে কামরুল পরে সোহেল রাঢ়ী বিভক্ত হয়ে মিছিল নিয়ে জেলা কার্যালয়ের সম্মুখে উপস্থিত হলে উত্তাপ দেখা দেয়। এর মধ্যে একাংশ সরোয়ারের অনুসারী, অপরাংশ কমিটিতে স্থান না পাওয়ার পেছনে সরোয়ারের ইন্ধন রয়েছে এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ ছিল। এই পরিস্থিতে সকালের অনুষ্ঠানেও সরোয়ার অনপুস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় ছাত্রনেতা রনির নেতৃত্বে আর একটি পৃথক কর্মসূচি পালিত হয়। ছাত্রদলের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবার সুখকর হল না মূলত সরোয়ার ভার্সেস চানের মধ্যে নেতৃত্ব বিস্তার নিয়ে শীতল লড়াই থাকায়।

দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দলীয় যুগ্ম মহাসচিব পদে আসার পরেও বরিশালে সরোয়ার একক কতৃত্ব ধরে রাখতে চাওয়ায় সংগঠন এলোমেলো অবস্থায় পরিণত হয়েছে। সর্বক্ষেত্রেই যুগ্ম এই মহাসচিব ভুমিকা রাখতে চাওয়ায় অপরাপর নেতারা বিষয়টি কখনই ভাল চোখে দেখছে না। আবার অভিযোগ রয়েছে- সরোয়ার তার বিকল্প কারও উত্থ্যান না চাওয়ায় দলের মধ্যে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে কারণে বিএনপি প্রভাবিত বরিশালে দলের মধ্যে বহুমুখি বিভাজন দেখা দেয়। কখনও সরোয়ারের বিরুদ্ধে সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল আবার কখনও এবায়দুল হক চাঁন সাথে কেন্দ্রীয় নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিনের বিরোধীতায় বরিশাল বিএনপিতে পূর্বপর নানা মেরুকরণ দেখা যায়। সর্ব প্রথম সরোয়ারের সাথে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজনের দ্বন্দ্বের পরিণতিতে এই নেতা নিজ ঘরনায় নাজেহাল ও রক্তাক্ত হওয়ার পর রাজনীতি থেকে নির্বাসনে গিয়ে লন্ডনে অবস্থান নিয়ে আছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এই উদাহরণ স্মরণ করে অনেকেই সরোয়ারের মুখোমুখি লড়াই করার চেয়ে কৌশলে এগোতে চাইছেন। যে কারণে সরোয়ার বিরোধী বৃহৎ একটি অংশ এক মঞ্চে আসতে গোপনে একট্টা হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মজিবর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কৃষকদল নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই। মূলত কেন্দ্র একটি খসড়া কমিটি তৈরি করায় এবায়দুল হক চাঁন তা মেনে নিতে পারছেন না বিধায় কিছুটা বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিনি কেন এলেন না তার সোজাসাপটা উত্তর হচ্ছে- দলের মধ্যে কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে তরুণদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় তিনি নিজেকে দূরে রাখায় তার এই অনপুস্থিতি।

অবশ্য এবায়দুল হক চাঁন এই বক্তব্যের বিরোধীতা করে বলেন- একনায়কতন্ত্র সৃষ্টির কারণে দলের মধ্যে সরোয়ারের বিরোধীরা মাঠে নামায় তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে কৌশল নিয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন- কেন্দ্রীয় নেতা হওয়া সত্বেও বরিশাল নিয়ে তার এত মাতামাতি কেন।’

বরিশালের খবর

আপনার ত লিখুন :

 

ই বিের ও সা
ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: barishaltimes@gmail.com, bslhasib@gmail.com
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  বাবুগঞ্জে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত  নিখোঁজ হওয়া শিশুকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল পুলিশ  সন্ধ্যা রাতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অস্ত্রের মহড়া, তিন কিশোরকে এলোপাতাড়ি কোপাল  দুই মাস সাতদিন পর দেশে এলো সৌদি প্রবাসী মুসার মরদেহ  বাকেরগঞ্জ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ  নির্বাচনে মার্কিনিদের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ  লালমোহনে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা  উজিরপুরে যুবলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫  সোনার দাম আরও কমল  দীর্ঘ ১০ বছর পর কলাপাড়ায় যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সন্মেলন