বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭
বরিশাল: বরিশাল ছাত্রলীগের তিন নেতা নিয়ন্ত্রন করছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিনের অনুসারীদের ক্যাম্পাস থেকে তাড়ানো এবং নির্যাতনের পর পুরোটাই রয়েছে এই তিন নেতার নিয়ন্ত্রনে। এ তিন নেতার অনুসারীরাই নিয়ন্ত্রন করছে পুরো কলেজ।
জানাগেছে, বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা অনিক ও রইজ আহম্মেদ মান্না অর্থাৎ এ তিন নেতাই রয়েছেন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে। জসিম অনুসারীদের তাড়ানোর পর এ তিন নেতারই রাম রাজত্ব রয়েছে সেখানে। এদের কথাই শেষ কথা শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিকসহ নানা বিভাগে। এমনকি কলেজ অধ্যক্ষ ভাস্কর সাহাও চলছেন তাদের কথা মত। এমনটাই বলছেন কলেজের কয়েকজন শিক্ষক।
সূত্র মতে, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজা হত্যার পর প্রেক্ষাপট পাল্টে যায় বরিশাল ছাত্রলীগের। রেজা হত্যা মামলায় মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন আসামী হওয়ায় বরিশাল ছাড়তে হয় তাকে। এ ফাঁকে দীর্ঘদিন জসীম অনুসারীদের দখলে থাকা বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ নিয়ন্ত্রনে চলে যায় মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্র অনুসারীদের হাতে অর্থাৎ ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ, অনিক ও মান্নার নিয়ন্ত্রনে। এ তিন নেতার মোট ৪ অনুসারীই ছাত্রলীগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে।
শেবামেক ছাত্রলীগ নেতা আলিম ফয়সাল সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের অনুসারী, ছাত্রলীগ নেতা আবু সায়েম ও ফোরকান রয়েছেন অনিকের অনুসারী হিসেবে এবং ছাত্রলীগ নেতা রাজু রইজ আহম্মেদ মান্নার অনুসারী।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের এ চার নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ই পাওয়া যায় নানা ধরনের অভিযোগ। ছাত্র নির্যাতন থেকে শুরু করে চাঁদাবাজী ও সিট বানিজ্য রয়েছে তাদেও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এদের মধ্যে বেশী বিতর্ক ছড়াচ্ছে ফোরকান এবং রাজু। মাসখানেক আগে ফোরকানতো তুচ্ছ অভিযোগে সরকারী রাস্তায় দেয়ালই তুলে দিয়েছিল। এতে বরং তার অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করেন অনেকে। ওই দেয়াল তুলে দেওয়ায় রাস্তাটি প্রশাসনের নজরদারী কমার কারণে অহরহ ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ইতিমধ্যে এক রাতে ছিনতাইয়ের কবলে পরা তিন ছাত্র পৃথক তিনটি অভিযোগ করেছিল বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানায়। এসব ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। কারণ যারা এই দেয়াল তুলেছে তাদের হাতেই বরিশাল ছাত্রলীগের তিন নেতা দায়িত্ব দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার। তবে ঘটছে ঠিক উল্টোটাই। বিতর্ক পিছু হটছে না সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের অনুসারী আলিম ফয়সালের পিছন থেকেও। জানা গেছে, তার নেতৃত্বেই কলেজ ছাত্রলীগ এবং কলেজ ছাত্র মোট ২৫ জনকে রাত ১২টার পর হোস্টেলে আটকে নির্যাতন করা হয়েছে। আর কলেজ ছাত্রলীগের এ চার নেতার শেল্টারে মোট নির্যাতন করা হয়েছে ৪৪ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এ নির্যাতনে এ চার ছাত্রলীগ নেতার পাশাপাশি নাহিদ নামের এক ছাত্রলীগ নেতা ও
রুবেল নামের এক কর্মী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্যাতন করত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। যা আদৌ জানেন না এদের শেল্টার দেওয়া বরিশাল ছাত্রলীগের এ তিন নেতা।
তবে অনেকে বলছে, ছাত্রলীগের এ তিন নেতার শেল্টারেই হয় অমানবিক নির্যাতন। কয়েকজনকে তো শারীরিকভাবেও ইঞ্জুরি করে দেওয়া হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন মহানগর ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা অনিক। তিনি বলেন, আমার জানা মতে, ওরা কেউ এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আর যদি এরা কেউ এসব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সংগঠন ব্যবস্থা নিবে।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত জানিয়েছেন, সংগঠনের নাম বিক্রি করে কেউ অপকর্ম করলে তা মেনে নেওয়া হবে না। যদি এসব অভিযোগ সঠিক হয় তাহলে সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। তবে আমার মনে হয়না এরা এসবের মধ্যে রয়েছে।