দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও বিশ্বব্যাপী অবারিত মঙ্গলধ্বনি নিয়ে লোকালয়ে আসছেন মা দুর্গা। তাই বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের ঢল। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি আর সাজসজ্জ্বার কাজ। তুলির আঁচড়ে মাকে উদ্ভাসিত করায় ব্যস্ত কারিগররা। শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ঘুম নেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাঙালী নর-নারীদের। সর্বত্রই দুর্গোৎসবের আনন্দ। চলছে কেনাকাটা। ছোটদের আবদার মেটাতে শপিং মলে ছুটছেন মধ্যবিত্ত বাবা-মায়ের দল।
৩০ সেপ্টেম্বর মহালয়া হলেও দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ৬ অক্টোবর মহাপঞ্চমী দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে। আর পরের দিন ৬ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এবার দেবী ধরাধামে আসছেন ঘোড়ায় (ঘোটক) চড়ে। যাবেনও ঘোড়ায় চড়ে। অর্থাৎ ঘোটকে আগমন ও গমনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে কিছুটা অস্থিরতা প্রকাশ পাবে। ফল যাই হোক, সকল আসুরিক শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শান্তি আনবেন ‘মা’।
হিন্দুদের বিশ্বাস, অমিয় সুধা বিলিয়ে মহামায়া এ ধরাকে শুদ্ধ করবেন। সারাদেশের মতো বরিশাল জেলার ৫৬৪ পূজা মণ্ডপে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার শব্দে ঢাকের তালে তালে শুরু হবে শারদীয় উৎসব। এদিকে পূজাকে সামনে রেখে দম ফেলার সময় নেই পূজা কমিটির লোকজনের। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। কাঠ-মাটির কাজ শেষ করে এখন চলছে প্রতিমা রং করার কাজ। শেষ সময়ে এখন কারিগররা ব্যস্ত নিপুণ তুলির আঁচড়ে বর্ণাঢ্য বিভায় মা দুর্গাকে উদ্ভাসিত করে তোলার কর্মে। বরিশাল জেলার প্রবীণ মৃৎশিল্পীরা জানান-প্রতিমার গায়ে শেষ তুলির আঁচড় দেয়া হবে ষষ্ঠীপূজা শুরু হওয়ার একদিন আগে।
পাশাপাশি দেবী দুর্গাকে প্রয়োজনীয় অলঙ্কারও পরানো হবে সেই সময়ে। কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি এডভোকেট রনজিত দাশ জানান, আর ১১ দিন পর পূজা। এখন প্রতিমার গায়ে রঙের কাজ চলছে। পাশাপাশি মণ্ডপ সাজানোর কাজ চলছে পুরোদমে। বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু জানান, কিছু দিনের মধ্যে নগরী সেজে উঠবে নতুন সাজে। আলোকসজ্জায় মুখরিত হয়ে উঠবে পুরো নগর। প্রতিবছর ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বরিশালের আপামর জনগণ এই উৎসব পালন করে থাকেন। তাই এবারেও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে চলছে সাজসজ্জা।
বরিশাল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানিক মুখার্জি কুন্ডু বলেন, নগরীর বাইরের জেলায় এবার ৫২৯ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সেসব মন্ডপেও প্রতিমা বানানোর কাজ চলছে। আশা করি প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর মাধ্যমে এবারের পূজা আনন্দঘন পরিবেশে কাটবে। বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নারায়ন চন্দ্র নাড়– বলেন, দূর্গাৎসব বাঙালী জাতির উৎসব। আমাদের এই উৎসবে কোন ভেদাভেদ নেই।
কিছুদিন আগেও সংশয় ছিল নিরাপত্তা নিয়ে। এখন সেই সমস্যা নেই। পূজার আগে আমরা সর্বস্তরের প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করব। তাছাড়া প্রতিটি পূজা মন্ডপে প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরাও কাজ করবে।
বরিশালের খবর